ক্ষুপ জাতীয় এই প্রজাতির পাতার গোড়ার দিকটায় একটু, চওড়া বেষ্টনী আছে যেটা লতাটাকে জড়িয়ে ধরে রাখে এবং এর গায়ে কোমল রোম আছে। পুষ্পধি দেখতে অনেকটা ছেড়া কানের মত, তার মধ্য থেকেই ছোট ছোট নীল ফুল হয়। তাই এর প্রচলিত নাম কানছিড়ে। বীজকোষ ঝিল্লীযুক্ত।
বর্ষার শেষ হতে শীতের প্রারম্ভে ফুল ও বীজকোষ এবং বসন্তের শেষে গাছ মরতে শুরু করে। এই গণের (Genus) বহু প্রজাতি ভারত এবং তৎসন্নিহিত অঞ্চলে থাকলেও বর্তমানে ৭/৮টি প্রজাতি প্রায়ই পাওয়া যায়। ভারতের সর্বত্র অল্পবিস্তর জন্মে। বিশেষতঃ বাংলাদেশ স্যাঁতসেতে জমিতে এটা প্রচুর পরিমাণে জমে।
অন্যান্য নাম:
এর সংস্কৃত নাম কর্ণস্ফোট, বাংলা নাম কানছি’ড়ে ও হিন্দীতে কানছিরে নামে অভিহিত, দেশগাঁয়ে একে ঢেলাপাতা বলে। বোটানিক্যাল নাম Commelina benghalensis Linn. ও পরিবারের Commelinaceae. ব্যবহার্য অংশ—সমগ্র উদ্ভিদ।
ঢোলপাতা বা কানশিরে-এর ভেষজ গুণাগুণ
১. বাতগল্মে: রোগটির প্রচলিত পরিচয় জানলে আর অসুবিধে হবে না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এটা হওয়ার কারণ হলো মলমূত্রের বেগ চেপে রাখার জন্য এবং প্রায়ই যাঁরা পেটটা পরিষ্কার থাকে না ব’লে জোলাপ নেওয়ার অভ্যাস করেন, আর ব্রত পার্বণ পালন করতে গিয়ে উপবাস করেন, তাদের নাভির চারপাশে কুনকুনে ব্যথা, অধোবায়ুর নিঃসরণ না হওয়া, মাথায় ভারবোধ, আর ক্রমে পেটের ভিতরে একটা চাকা ঘুরে বেড়ানো (বলের মত) এরই নাম বাতগম।
এটা হ’লেই শুকনো ঢোলপাতা বা কানছিড়ে গাছ ৫ গ্রাম একটু, ভিজিয়ে রাখার পর তাকে থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, তারপর আন্দাজ এককাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ওই জলটা সকালে ও বৈকালে দু’বারে খেতে হবে। এর দ্বারা ওই রোগটা সেরে যাবে, তবে যে কারণে রোগটা হয়েছে সেটাকে বর্জন করতে হবে।
২. উদর রোগে: এই রোগটির জন্ম হয় অগ্নিমান্দ্য থেকে প্রথমে পেটে প্রায়ই ফাঁপ হয়, অথচ অম্বলও হয় না, অজীর্ণ যে হয়েছে সেটা বাহ্যতঃ বোঝা যায় না। মনে হয় ভুড়িটা বাড়ছে, আসলে পেটে ফাঁপ। লক্ষ্য করা যায় এদের অধোবায়ুর নিঃসরণ খুব কম হয়, শরীরের বলও কমে যেতে থাকে, কোথাও বেড়াতে যেতে মন চায় না, আর সব সময় ঝিমুনি।
এই ক্ষেত্রে শুকনো কানছি’ঙে গাছ ৫ গ্রাম (প্রয়োজন বোধে ১০ গ্রামও নেওয়া যায়, তবে প্রথমে ৫ গ্রাম করে কয়েকদিন খেয়ে উপকার না বুঝলে ১০ গ্রাম করে নিতে হয়) ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছে’কে ওই জলটা দুবেলায় খেতে হবে; এর দ্বারা এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই অসুবিধেটা আর থাকবে না।
৩. বাতজ শূলে বা ব্যাথা: এই সমস্যায় অনেকের ডাল খাওয়া থেকে শুরু হয়। সুপরি জাতীয় শক্ত জিনিসে মুখশুদ্ধি করার ইচ্ছে, এর সঙ্গে মেরুদণ্ডে ফিক ব্যথা, কোমরে ব্যথা, তারপর কিছু খেলেই পেটে ব্যথা, সন্ধ্যায় বর্ষাকালে, শীতে ক্রমশঃ ওই ব্যথাটা বাড়তে থাকে, মাঝে মাঝে পেটের ভিতরে ছুচ ফোটার যন্ত্রণা—এইসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে শুকনো কানছিড়ে ৫ গ্রাম ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ওটাকে দু’বেলা খেতে হবে, তবে প্রথম কয়েকদিন ক্বাথের অর্ধেক পরিমাণ ফেলে দিতে হবে। যদি উপশম হয়ে যায় তবে ওই পরিমাণই বরাবর খেতে হবে।
ঢোলপাতা বা কানশিরে-এর বাহ্য ব্যবহার
৪. কানের পুঁজে: ঢোলপাতা বা কানছিড়ে পাতার রস গরম করে ফোটা ফোটা করে প্রত্যহ একবার বা দু’বার করে দিতে হয়, তবে তুলো দিয়ে প্রত্যহ একবার করে কানের ভিতরটা পরিষ্কার করে নিতে হয়।
৫. বিষাক্ত ঘায়ে: কানছিড়ের গাছ অর্থাৎ পাতা সমেত বেটে অল্প গরম করে ওই ঘায়ে প্রলেপ দিলে সেরে যাবে।
৬. দাদ ও একজিমায়: কানছিড়ের গাছ ও পাতা একসঙ্গে বেটে প্রত্যহ একবার করে লাগালে ২/৪ দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া যাবে।
৭. কীটের কামড়ে: যে কোন বিষাক্ত পোকার শুঙ্গ ফুটলে কানছি’ড়ে পাতার রস অথবা পাতা বেটে ওখানটায় ঘষলে পোকার সাদা সূক্ষ্ম লোমগুলি গ’লে যায়।
CHEMICAL COMPOSITION
Commelina benghalensis Linn.
Flower pigment contains :- delphinidin diglucoside; p-cumaric acid; and awabanol.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৮০-৮১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।