কালকেয়া বা কেলেওকড়া উদ্ভিদের সাতটি ভেষজ গুণাগুণ

বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত ঝোপ-ঝাড় শক্ত লতা। এর গায়ে শক্ত এবং বাঁকা কাঁটা আছে, তাই এর পর্যায় নাম গৃধ্রনখী। পাতা দেড় থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা ও ১-১২ ইঞ্চি চওড়া। এর গঠন ও আকার অনেকটা লেবু, পাতার (Citrus medica) মতো। বর্ণ গাঢ় সবুজ। কাণ্ড এবং পাতার সংযোগস্থল থেকেই ফল বের হয়, অবশ্য লতার আগার দিকটায়ই যে ফল হয় তা নয়। ফল বেগুণী রঙের, কেশরগুলি লম্বা এবং গুচ্ছবদ্ধ, দেখতে অনেকটা বিড়ালের গোঁফের মত। ফল ১-২ ইঞ্চি লম্বা ও মসৃণ। গ্রীষ্মকালে ফুল ও বর্ষায় ফল হয়।

অন্যান্য নাম:

ভারত এবং তৎসন্নিহিত উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে এটি সাধারণতঃ জন্মে। এর সংস্কৃত নাম কাকাদনী, বাংলায় প্রচলিত নাম কালওকড়া; সেইটারই অপভ্রংশ নামশব্দ কেলেকড়া ও হিন্দীতে অধান্দা নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Capparis zeylanica Linn., ও ফ্যামিলি Capparidaceae.

কালকেয়া বা কেলেওকড়া-এর গুণাগুণ:

এটি প্রধানভাবে কাজ করে রক্তবহ স্রোতে। ঔষধ হিসাবে ব্যবহার্য অংশ— সমগ্র গাছ।

১. শ্লেমা ধাতুর বিকারে: সর্বদাই মনে হবে তৃপ্ত আছি, কিন্তু ক্রমে দুর্বলতা আসে। সেটা শুরু হ’লেই কালকেয়া বা কেলেওকড়া মূল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম অথবা মূলের ছাল চূর্ণ হলে ২৫০ মিলিগ্রাম প্রত্যহ একবার করে জলসহ খেলে ওই শ্লেষ্ম বিকারটা কমে যাবে এবং পরিপাক শক্তিরও বৃদ্ধি হবে।

২. ঢুলুনি রোগ: একটু চুপ করে বসে থাকলে অথবা কোন কিছু পড়তে গেলেই তন্দ্রা; আবার সেটাতে ব্যাঘাত না হলে ঘুম, কিন্তু পাতলা ঘুম। এটা ভাল নয়, এটাতে দেহের বল কমে যেতে থাকে, আবার গলার স্বরটাও একটু চেপে যেতে থাকে; এক্ষেত্রে কেলেওকড়ার মূল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম প্রত্যহ একবার করে কয়েকদিন খেলে ওটা কমে যাবে, এটার উপশম হলে আরও কিছুদিন ব্যবহারে নিরাময় হবে।

৩. সাদা পায়খানা: মলের রং সাদা অথচ অম্বলের দোষ নেই, পেটেরও দোষ নেই, পরিমাণে অনেকটা হয়। এই ক্ষেত্রে কেলেওকড়ার মূল চূর্ণ ২৫০ মিলিগ্রাম করে জলসহ প্রত্যহ একবার খেতে হয়। এটা ৩/৪ দিন খাওয়ার পর যদি দেখা যায় যে, ওইসব অসুবিধে যাচ্ছে না, তখন সকালে ও বৈকালে দু’বার খেতে হয়।

আরো পড়ুন:  শতমূলী বা শতবরী বাংলাদেশের বর্ষজীবী ঔষধি বীরুৎ

৪.  ফুলতে থাকলে: সামান্য সময় ঘুমলেই মুখ হাত ফুলো ফুলো হয়। এই অসুবিধে হতে থাকলে বুঝতে হবে, ভিতরের অন্ত্রে শ্লেষ্মা জমছে, নির্গত হচ্ছে না। তখন এই কেলেওকড়ার মূল চূর্ণ ২৫০ মিলিগ্রাম জলসহ একবার করে খেতে হবে। প্রয়োজনবোধে দু’বারও খাওয়া যায়।

৫. শ্বাস কষ্টে: এ রোগে যারা আক্রান্ত, তাঁদের কেলেওকড়ার মূল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম এককাপ গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে ছেঁকে ওই জলটা খেতে হবে, তবে এই চূর্ণটা একটু মোটা হওয়াই ভাল। একবার খাওয়াতে তেমন উপশম না হলে সকালে ও বৈকালে ২ বার খাওয়া যেতে পারে।

৬. হিক্কায় (হেচকী নয়): এমন হলে কেলেওকড়া বীজ চূর্ণ ১০০ মিলিগ্রাম (১ টিপ নস্যির মত) ২/৫ ফোঁটা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে একটু, একটু, চেটে খেতে হয়—এর দ্বারা ওটা কমে যাবে।

৭. মলের আধিক্য: যতটা পরিমাণ খাওয়া হয়েছে তার থেকে তার মলের পরিমাণ বেশী বেরোয়। যা খাওয়া হয় তাতে যে অম্বল হয় তাও নয়, মলটা শুকনোও হয় না—যাকে দেশগাঁয়ে বলে “ভসকা”। এটাতে দেহের বল কমে যেতে থাকে, জিভে কেমন চটচটে আঠা হয়। সেই ক্ষেত্রে কেলেওকড়ার বীজ ১ গ্রাম এককাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে সেটা ছে’কে ওই জলটা খেতে হয়। কয়েকদিন খেলে ওই মলের পরিমাণটা কমে যায়।

CHEMICAL COMPOSITION

Capparis zelanica Linn.

An alkaloid; a phytosterol; a mucilaginous substance and water soluble acid.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৯১-৯২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!