শন বা বন শন এর আটটি ভেষজ গুণাগুণের বিবরণ

বর্ষজীবী উদ্ভিদ। পাতা সাধারণতঃ দেড় থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা, ধূসরবর্ণ ও পশমের ন্যায় রোমযুক্ত। শাখা ও মূলকাণ্ডের অগ্রভাগে পুষ্পদণ্ড বের হয়, তাতে ১০ থেকে ২০টি পীতবর্ণের ফুল হয়। ফলের বহির্বাস রোমযুক্ত। শুঁটি ১/১২ ইঞ্চি লম্বা ও রোমশ, এতে ১০-১৫টি বীজ হয়। এই গাছের আঁশ থেকে দড়ি প্রস্তুত হয়। সাধারণতঃ বর্ষায় ফুল ও শীতে ফল হয়ে থাকে। ভারতের সর্বত্র জন্মিলেও প্রধানতঃ বঙ্গদেশে ও বিহারে এর চাষ হয়।

শন বা বন শন-এর অন্যান্য নাম:

এর সংস্কৃত নাম শণ, বাংলায় প্রচলিত নাম শণপাট, ঘোরসান, ও হিন্দীতে সান বলে । বোটানিক্যাল নাম Crotalaria juncea Linn. ও ফ্যামিলি Papilionaceae.

গুণাগুণ:

পাতা স্বাদে তিক্ত-মধুর, উষ্ণবীর্য, বমনকারক ও কফ-বাত প্রশমক। বীজ শীতগুণসম্পন্ন, ধারক ও গরুরপাক। ঔষধাথে প্রয়োগ করা হওয় পাতা বেদনানাশক; বিরেচক ও গর্ভপাতকারী।

ফুল রক্তদৃষ্টিতে, সোরিয়াসিসে (Psoriasis) ও প্রদর রোগে হিতকর। বীজ রজঃনিঃসারক। রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও এর ব্যবহার কম নয়। আয়ুর্বেদমতে চর্মগত রোগে হিতকর। ঔষধার্থ ব্যবহার্য অংশ মুখ্যতঃ বীজ, ফল ও পাতার ব্যবহার দেখা যায়।

শন বা বন শন-এর ব্যবহার

এর বীজ কাজ করে রক্তবহ স্রোতে। ফুল ও পাতার রস শরীরের স্থানিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। তবে বাহ্য ব্যবহার বেশী।

১. ক্রিমিতে: এর জন্য অজীর্ণ হয়, মুখ দিয়ে জল ওঠে— এই ক্ষেত্রে শণ পাতার রস ১ চা-চামচ ২/৩ চা-চামচ জল মিশিয়ে একটু গরম করে ওই রসটা সকালের দিকে খালি পেটে খেতে হবে অথবা অল্প কিছু, খেয়েও খাওয়া যায়। এই রকম ২-৪ দিন খেলে ওই অসুবিধেটা চলে যাবে।

২. অজীর্ণ দোষে: কফবিকারজনিত অজীর্ণ দোষে কষ্ট পেতে থাকলে শণ ফুল ৩ গ্রাম বেটে আধ কাপ জলে মিশিয়ে একটু, গরম করার পর তাকে ছেঁকে ওই জলটা প্রত্যহ একবার খেতে হবে। এই রকম দু-তিন দিন খেলে ওই অজীর্ণ দোষটা চলে যাবে।

আরো পড়ুন:  কাকডুমুর ফল, ছালের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

৩. বমনের প্রয়োজনে: বেশী খাওয়া হয়ে গিয়েছে, শরীর আইঢাই করছে, বমি হলে ভাল হয়, সেক্ষেত্রে শণ বীজ ৩ গ্রাম শিলে বেটে সরবত করে খেলে খানিকক্ষণের মধ্যে ভুক্ত দ্রব্যটা উঠে যাবে এবং সেটা নিরুদ্বেগেই উঠে যাবে। তবে নারীর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিষেধ।

৪. মাসিক ঋতুবন্ধে: অনেক কারণে এটা বন্ধ থাকতে পারে (গর্ভজন্যও) যাহোক, যদি প্রয়োজন না থাকে (গর্ভরক্ষার) তাহলে ওই মাসিক ঋতু পরিষ্কারের জন্য ৩/৪ গ্রাম শণবীজ বেটে, সরবত করে, ছে’কে, ২।৪ দিন খেলে ওটা পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে ২। ৩ দিন খাওয়ার পর ওটা না হলে বীজ আরও এক-আধ গ্রাম বাড়ানো যায়।

৫. গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণায়: এটা প্রধানভাবে বাত-শ্লেষ্মার বিকারে বেশী হয়, এটা বাতরক্ত বিকারেও হয়। সেক্ষেত্রে শণবীজ ৩। ৪ গ্রাম অল্প জলে ভিজিয়ে রেখে, তাকে থেতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, সেট: আন্দাজ আধ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছে’কে, ওই জলটা প্রত্যহ সকালের দিকে অথবা বিকালের দিকে খেতে হবে; এইরকম ২ থেকে ৪ দিন খেলে ওসব যন্ত্রণা আর থাকবে না।

৬. ফোড়া হতে থাকলে: রক্তদৃষ্টির জন্য যেখানে-সেখানে প্রায়ই ফোড়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ৫ গ্রাম শণবীজ খানিকক্ষণ জলে ভিজিয়ে রেখে, তাকে থেঁতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ আধ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ওই ক্বাথটা সকালের দিকে খালি পেটে খেতে হবে, অসুবিধে হ’লে বৈকালের দিকেও খাওয়া যায়।

বাহ্য ব্যবহার:

৭. চুলকানিতে: শণপাতা বেটে সেটাতে অল্প জল মিশিয়ে, গায়ে মেখে, দেড়দ, ঘণ্টা বাদে স্নান করতে হয়, এই রকম ২-৩ দিন করলে চুলকণা সেরে যায়।

৮. ছুলি রোগে: সংস্কৃত ভাষায় চর্ম শব্দের সঙ্গে “চর্মচ্ছবি” একটি শব্দের যোগ আছে অর্থাৎ চামড়ার ওপরে খুব পাতলা একটা পর্দা আছে, শরীরের রসধাতু, রক্তধাতুর স্বচ্ছতা থাকলে ও ছবিটি পরিষ্কার নজরে পড়ে। চলতি কথায় আমরা বলি ছাল, ছালের পরেই চামড়া বা চর্ম। এই রোগটি হয় ওই ছল্লি বা ছালের ওপর। তাই নাম তার ছল্লিরোগ। এই ছল্লিই লোকভাষায় ছুলি হয়েছে।

আরো পড়ুন:  কাঁটানটে বা কান্টানুটিয়া উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের ভেষজ বিরুৎ

এই ক্ষেত্রে (ছুলি হলে) শণের বীজ বেটে, চন্দনের মত করে, ওই ছুলিতে মেখে বেশ কিছুক্ষণ (দেড়-দ, ঘণ্টা) রাখতে হয়, তারপর তাকে ধরে ফেলতে পারা যায়। এইভাবে ২-৩ দিন মাখলে ছুলি আর থাকে না।

CHEMICAL COMPOSITION

Analysis of raw sunn hemp: Ash .61%; fat and wax 55%; Water (hydroscopic) 9.6%; cellulose 80%; aqueous extract 2.82% and pectin bodies 6.14%. Fodder contains:– Moisture 14.39%; ether extract 1.12%; albuminoids 11.31%; woody fibre 28%. Soluble carbohydrates 35.85%; mineral matter 6.42% and food units 66-9%.

Seed contains: – Moisture 8.6%; crude protein 34.6%; fat 4.3%; starch 41.1%; fibre 8.1%; ash 8.3%; food units 13.8%; nutrient ratio 1:1.5 and an alkaloid, carchorin.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৭০-১৭১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!