তরমুজ ও বীজের সাতটি ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

ভূমি প্রসারিণী লতা, শীতের শেষে ক্ষেতে বীজ বসানো হয়, বসতে এর বৃদ্ধি, লতাগুলি আকর্ষ ও শিরাযুক্ত। বেলেমাটিতে এই গাছের বাড় বদ্ধি এবং ফলও ভাল হয়, সেইজন্যই সাধারণতঃ নদীর চরে এর চাষ বেশী হয়, গ্রীষ্মে গাঢ় সবুজ অথবা পীতাভ সবুজ বর্ণের ফল হয়। অপক্কাবস্থায় ভিতরে সাদা, পাকলে লাল হয়। বীজের রং কালো অথবা লালচে, আকারে চেপ্টা।

তরমুজ-এর অন্যান্য নাম:

এর সংস্কৃত নাম কালিন্দ, বাংলা নাম তরমুজ। হিন্দী নাম সমক্কা ও গুজরাটে করিঙ্গা নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Citrullus lanatus. ও ফ্যামিলি Cucurbitaceae.

গুণাগুণ

ফলের রস মধুর, শীতগুণসম্পন্ন, শক্তিদায়ক, মেদোকারক, কামোদ্দীপক, পিত্ত বৃদ্ধিকারক ও গুরুপাক। ঔষধার্থ প্রয়োগ হয় আয়ুর্বেদমতে পাতা তিক্তরস ও রক্তবর্ধক। কাঁচা ফল পাড়ুরোগে হিতকর। পাকা অবস্থায় এর রস স্বাদ, কফ-বাত প্রশমক, শেষ্মানিঃসারক, মূত্রকারক, ক্ষুধাবর্ধক, তৃষ্ণানিবারক ও রক্তের পক্ষে হিতকর। কেউ কেউ তরমুজের রস টাইফয়েড রোগেও প্রয়োগের উপদেশ দিয়ে থাকেন। এভিন্ন পূর্বে এটা ভারতের কোন কোন প্রদেশে বিরেচনার্থ, শোথরোগে ও কোষ্ঠপরিষ্কারক হিসেবেও ব্যবহত হতো।

বীজ বলকারক, মেদোজনক, কামোদ্দীপক ও মূত্রকারক। এই বীজের তেল বাদামতেলের পরিবর্তে ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ইউনানী চিকিৎসকেরা উক্ত বীজ মস্তিষ্কের হিতার্থে ব্যবহার করে থাকেন। ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার্য অংশ ফল ও বীজ।

তরমুজ-এর উপকারিতা ও প্রয়োগ:

. ক্লান্তি দূরীকরণে: শ্রমজনিত ক্লান্তি যতই আসুক তরমুজের শাঁস চটকে সেইটাই ছেকে ঐ রসটা খেলেই ৫ থেকে ৬ মিনিট পরেই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

২. অপুষ্টির দোষে: কাঁচা তরমুজ-এর শাঁস কুচিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে, তারপর তাকে গুঁড়া করে নিয়ে রেখে প্রত্যহ ১ কাপ গরম দুধে দু-এক চা-চামচ গুঁড়া মিশিয়ে সকালে অথবা বিকালে খেলে ১০/১৫ দিনের মধ্যেই দেহপুষ্টির বিকাশ হবে। তবে অন্য কোন শারীর ক্রিয়ার বিপর্যয় যদি অপুষ্টির কারণ হয়, তবে সেটার চিকিৎসা পূর্বেই করতে হবে।

আরো পড়ুন:  মাদলা বা ঘোড়াকরঞ্জ-এ আছে ভেষজ গুণাগুণ

. হৃদরোগজনিত পিপাসায়: এক্ষেত্রে পাকা তরমুজের রস আধ কাপ বা এক কাপ নিয়ে তার সঙ্গে ২/৩ টিপ জীরের গুঁড়া ও একটু চিনি মিশিয়ে খেলে পিপাসাটাও কমবে, হৃদরগেরও উপশম হবে।

৪. টায়ফায়েড় জ্বরে: শরীর যখন আনচান করছে, মাথা লোটাচ্ছে, প্রস্রাব কম হচ্ছে অথচ পেটটা নরম হয়ে মাঝে মাঝে পাতলা দাস্ত হচ্ছে, এই অবস্থা হলে আধপাকা বা কাঁচা তরমুজের রস ২ চা-চামচ করে বারে বারে অর্থাৎ অন্ততঃ ৩/৪ বার খাওয়ালে সুন্দর উপকার পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, জ্বরের বেগও কমে যাবে।

৫. প্রস্রাবের স্বল্পতায়: খোসা ছাড়ানো তরমুজ-এর বীজ বেটে ঠাণ্ডা জলে গলে একটু, চিনি মিশিয়ে সরবত করে খেতে হবে; তবে খোসা ছাড়ানো বীজ অন্ততঃ ৫-৬ গ্রাম হওয়া চাই; সরবত করে অন্ততঃ ২ কাপ হওয়া চাই। এটা খেলে কিছুক্ষণ বাদে প্রস্রাবে আর জ্বালা থাকবে না, এমনকি প্রস্রাবের কৃচ্ছতার জন্য শোথ হলেও এই যোগটিতে খুবই উপকার হবে।

. সন্তর্পণে: যাঁরা উপবাস, অনিদ্রায়, অপুষ্টিকর আহারে বৃক্কের (কিডনী) শুষ্কতায় কষ্ট পাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে মূত্রকৃচ্ছতাও আসছে, তাঁরা প্রত্যহ ১ গ্লাস তরমুজের রস খেয়ে দেখতে পারেন। কাঁচা ও পাকা তরমুজে গুণের পার্থক্য একেবারে যে নেই তা নয়, তবে সেটা গৌণ সম্ভব হ’লে ওর সঙ্গে একট, কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাওয়া ভাল।

. বৃষ্যের প্রয়োজনে: বৃষ্য শব্দটি আয়ুর্বেদের নিজস্ব পরিভাষা। জীবনের অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় শুক্রের বৃদ্ধি এবং শুক্রের সুতির, তবে একসঙ্গে দুটি কাজ করার দক্ষতা তো সব ভেষজের থাকে না, কিন্তু তরমুজের বীজের সে শক্তি আছে। খোসা ছাড়ানো তরমুজের বীজ অন্ততঃ ৫ গ্রাম নিতে হবে, তাকে জলে বেটে দুধসহ (১ কাপ) খেতে হবে, এর দ্বারা অসুবিধেটার সম্মুখীন হতে হবে না।

CHEMICAL COMPOSITION

Citrullus laratus (Thunb.) Matsumara Nakai
Syn.–Citrullus vulgaris Sehrad ex Erkl. & Zeyh.

Analysis of fruit:— Moisture 95.7%; protein .1%; fat .2%; mineral matter .2%; carbohydrates 3.8%; carotene (traces); pectine (rich); amino acid y-amino B- (pyrazolyi-N)-propionic acid. Analysis of seed:- moisture 7.1%; protein 34-3%; fat 44%; carbohydrate 4.8%; ash 2:7%; fibre 6.7%; nitrogenous matter (glutelin 9.4%; peptones 1.1%); oils 20-40% (myristic 2%; palmitic 7:6%; stearic 0.1%; oleic 35.5% and linoleic 48.7%); enzyme and an amino acid. Analysis of seed cake:— moisture 8.6-10.1%; protein 28-59%; fat 7%; carbohydrate 8-14%; fibre 12-39%; ash 4-5%. Juice contains:-Citrulline 0:17%; Pro-vitamin-A (trace) and vitamin-C (trace).

আরো পড়ুন:  অনন্তমূল দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ লতা

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৮৯-১৯১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!