ফলের রস স্বাদে মধুর, শীতগুণ সম্পন্ন, পিত্ত প্রশমক, ক্রিমিনাশক, ক্ষধাবর্ধক ও বেদনানাশক। ঔষধ হিসাবে পাতা ব্যবহৃত হয় যা ক্ষুধাবর্ধক, পিত্ত প্রশমক, মূত্রকারক, প্লীহারোগে, রক্তস্রাবে ও কুষ্ঠ রোগে হিতকর। পাতার রস শিশুদের চোখে দিলে চোখের যন্ত্রণার উপশম হয়। ফল ক্রিমির উপদ্রবে হিতকর। পিত্তপ্রশমক, হাঁপানি ও কাসিতে ব্যবহৃত হয়। বীজ মদবিরেচক ও বমনকারক। অতিসার রোগেও এর ব্যবহার দুষ্ট হয়। মূলের ছাল কারো কারো মতে গর্ভস্রাব কারক, বিরেচক, মূত্রকারক ও বিষদোষ নাশক।
পরিচিতি
ঝিঙ্গা বা ঝিংগা বর্ষজীবী লতাগাছ কিন্তু কোণ বিশিষ্ট, মসৃণ গাঁট থেকে নতুন কাণ্ড বের হয় ও পরিণত সময়ে ফল ও ফল হয়, লতাটি আকর্ষযুক্ত, সাধারণত বেড়ার গায়ে, মাচায় ও অন্য গাছকে আশ্রয় করে প্রসারিত হয়ে থাকে। সাধারণত স্ত্রী পুরুষ ভেদে লাউ কুমড়ার মতো দুই রকমের ফল হয়। স্ত্রী জাতীয় ফুল থেকেই ফল হয়। ফলের বর্ণ ঈষৎ হলদে। সন্ধ্যার পূর্বে ফুল ফোটে। সবুজ বর্ণের ফুল বোঁটার দিক থেকে ক্রমশঃ মোটা এবং শিরতোলা, এজন্য এর নাম ধারা কোষাতকী।
ফলের অভ্যন্তরস্থ প্রকোষ্ঠগুলি যেন জাল বুনে তৈরী। সেটা আমরা দেখতে পাই ফল পাকলে। প্রকোষ্ঠের মধ্যে অনেকগুলি বীজ থাকে। এগুলি দেখতে অনেকটা ডিম্বাকতি ও চেপ্টা। এর কচি ফলই তরকারী হিসেবে ব্যবহত হয়। ভারতের সর্ব প্রদেশেই কমবেশী এর চাষ হয়, সাধারণতঃ বাংলায় ফাগুন-চৈত্রে বীজ পোতা হয়, এভিন্ন অন্যকালেও যে চাষ হয় না তা নয়, ঋতুকালের তারতম্যে (অন্যান্য প্রদেশে) অন্য মাসেও এই সবজীর চাষ হয়।
এর সংস্কৃত নাম ধারা কোষাতকী; বাংলা নাম ঝিঙ্গা বা ঝিংগা, হিন্দীতে ঝিমানি ও তামিলে ভেরিবিরা নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Luffa acutangula Roxb. ও ফ্যামিলি Cucurbitaceae.ব্যবহার্য অংশ- পাতা, ফল, বীজ ও মূল। এই গণের (Genus) আরো একটি প্রজাতি আছে, সেইগুলি দেখতে আকারে ছোট, ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা, গুচ্ছবদ্ধ অবস্থায় হয়, কিন্তু এর গায়ে শিরা নেই বললেই হয়। এটি ঝরি ঝিঙ্গে নামে পরিচিত।
ঝিঙ্গা বা ঝিংগা-র উপকারিতা:
১. শোথের মত্রাল্পতায়: অবশ্য অনেক কারণেই শোথ হ’য়ে থাকে। তবে মচকে গেলে বা ফোড়া হলে সেই স্থানের শোথের ক্ষেত্রে কার্যকরী হয় না। হৃদরোগ যকৃতগত রোগ ও অন্যান্য কারণে শোথ হয় এবং তাতে মূত্রেরও কৃচ্ছতা হয়। সেই সময় ঝিঙে (পাকা নয়) ও তার পাতার রস অথবা যেকোন একটির রস করে একটু গরম করে রাখতে হবে, তা থেকে ২ চা-চামচ করে দু’ঘণ্টা অন্তর ৩। ৪ বার আধ কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দিতে হবে, তবে পাতার রস হলে ২ বারের বেশী নয়। ঝিঙের রস হ’লে ৪ বার দেওয়া যায়। এর দ্বারা যে দুটি প্রধান উপসর্গ শোথ ও মূত্রাল্পতা—এ দুটির উপশম হবে।
২. মাথার যন্ত্রণায় (শ্লেম্মাজনিত): ঝিঙে ফলের রস (পাকা নয়) ২। ৩ ফোটা করে নাকে টেনে নিলে এবং সেই সঙ্গে ২ চা-চামচ ক’রে রস খেলে (একটু, গরম করে ৭/৮ চা-চামচ জল মিশিয়ে) শ্লেম্মা বেরিয়ে গিয়ে যন্ত্রণাটা কমে যাবে।
৩. বমনেচ্ছায়: চাপা অম্বল, প্রায় গা বমি বমি করা, সেই ক্ষেত্রে পাকা ঝিঙে বীজ বেটে (৩/৪টি) এক কাপ জলে গলে খেতে হয়। যদি পেটে বায়ু থাকে সেটাও কমে যাবে। বমনেচ্ছাটাও থাকবে না, তবে ওটা বেটে জলে গলে ন্যাকড়ায় ছেকে নিতে হবে। আর একটা কথা বলার আছে, ঝিঙে যদি তেতো (তিক্ত) হয়, তাহলে তার বীজ বেটে খেলে বমন হয়। সুতরাং যাদের শরীর দুর্বল, কিংবা বৃদ্ধ, বালক, গর্ভিণী, হৃদ্ররোগে আক্রান্ত এমন রোগীকে এটা খাওয়ানো সমীচীন হবে না।
৪. কণ্ঠরোগে: আয়ুর্বেদের দৃষ্টিতে এটাকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন দাদকে বলা হয়েছে ক্ষুদ্র কুষ্ঠ। যদি দেখা যায় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না অথবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ঝিঙে পাতার রস এক-দেড় চামচ প্রত্যহ সকালে ও বিকালে একটু, জল মিশিয়ে খেতে হবে। আর কুষ্ঠের রূপ যেখানে প্রকাশ পেয়েছে সেখানে ওই পাতার রস লাগাতে হবে। এইভাবে অন্ততঃ ২ মাস প্রত্যহ খেতে হবে, তাতে এ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
৫. অর্শের রক্তপড়ায়: একে রক্তাশও বলা হয়। রক্ত পড়ে, তার সঙ্গে যন্ত্রণা। এক্ষেত্রে কচিও নয় আবার বড়োও নয় এই রকম ঝিঙে কুচি কুচি করে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে তাকে গুড়ো করে নিতে হবে এবং কাপড়ে বা চালনিতে ছেকে ওই গুঁড়া ১ গ্রাম মাত্রায় আধ কাপ গরম জলে মিশিয়ে প্রত্যহ সকালে ও বিকালে দু’বার ক’রে খেতে হবে। এটা দৈব ঔষধ বলে প্রচলিত।
৬. চোখে পিচুটি ও জুড়ে যেতে থাকলে: (এটা শ্লেষ্মবিকার থেকেই হয় আবার ঠাণ্ডা লেগেও হয়) ওই সময় ঝিঙের কচি পাতার রস দুই এক ফোটা করে দুচোখে দিতে হবে। তবে রসটা গরম করে, ঠাণ্ডা হলে সেটা চোখে দিতে হবে।
CHEMICAL COMPOSITION
Luffa acutangula (L.) Roxb.
Analysis of edible fruit :- Moisture 95.4%; protein -5%; fat .1%; carbohydrate; mineral matter 3%; carotene 56 U/100g.; Phytin; amino acids; calcium .04%; Phosphorus .04% and iron 1.6 mg/100g. Seed contains :- Luffin; cucurbitacins B, D, G and H; saponin glycoside 20%; enzyme; fixed oil 19.9% (saturated, oleic and oleanolic acid). Seed kernel contains:— Crude protein 39.8% fat 48.4%; fibre 1.89%; Pentosans 2.24%; reducing sugars 3.61% and ash 4.77%. Root contain :- Cucurbitacin-B and cucurbitacin-C; amino acids —arginine; glycin; threonine; glutanic acid; bucine; serine; alanine; y-aminobutyric acid and pipecolic acid.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২৪০-২৪২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।