ঢেঁড়স খাওয়ার নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

ক্ষুপজাতীয় বর্ষজীবী গাছ। সাধারণতঃ ২-৩ ফুট পর্যন্ত উচু হয়। পাতাগুলি দেখতে অনেকটা এরণ্ড গাছের (Ricious Commis) ছোট পাতার মত, কাণ্ড এবং পাতা খসখসে ও এতে সক্ষম সক্ষম রোম আছে। পাতা ৩-৫টি অংশে বিভক্ত। পত্রবৃন্ত (পাতার বোঁটা) ৫/৬ ইঞ্চি লম্বা। ফল হলদে ও মধ্যভাগ বেগুনি রং-এর। ফল ৬-১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, অগ্রভাগ ক্রমশঃ সরু ও ফলের গায়ে কয়েকটি শিরা আছে। ফল পেকে শুকিয়ে গেলে ফেটে যায়, কিন্তু তৎপূর্বে তাকে গাছ থেকে তুলে নেওয়া হয়। বীজের বর্ণ ধূসর। বর্তমানে ভারতের সর্বত্রই (প্রায় সমস্ত বৎসরেই) কোন না কোন স্থানে এর চাষ হয়ে থাকে। এর বাংলা নাম ঢ্যাঁড়শ ও হিন্দী নাম ভিণ্ডী। বোটানিক্যাল নাম Hibiscus esculentus Linn. ফ্যামিলি Malvaceae. ব্যবহার্য অংশ—পাতা, ফল ও বীজ।

ঢেঁড়স-এর উপকারিতা:

১. দাস্ত অপরিষ্কারে: তার সঙ্গে সমস্ত শরীরে কামড়ানি। সেক্ষেত্রে বীজ বাদে কাঁচা ঢেঁড়স ২০। ২৫ গ্রাম ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছে’কে সেই জল মাঝে মাঝে খেতে হবে। এর দ্বারা ওই অসুবিধেটা চলে যাবে এবং প্রস্রাব ও দাস্ত দুই-ই পরিষ্কার হবে।

২. প্রস্রাবে উগ্রগন্ধ: কাঁচা ঢেঁড়স বীজ বাদ দিয়ে ২৫। ৩০ গ্রাম নিতে হবে, তারপর তাকে একসের জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ এক পোয়া থাকতে নামিয়ে, ছেকে, ঠাণ্ডা করে ওই জলটা সারাদিনে ২। ৩ বারে খেতে হবে। এমনিভাবে কয়েকদিন খেতে খেতেই দেখা যাবে প্রস্রাবের উৎকট দুর্গন্ধ কমে গিয়েছে।

৩. প্রস্রাবের স্বল্পতায়: যাঁরা জল কম খান না অথচ প্রস্রাব তেমনটি হয় না, তাঁরা বীজ বাদে কাঁচা ঢ্যাঁড়স ২৫। ৩০ গ্রাম ৪। ৫ কাপ জলে সিদ্ধ করে দেড়/দু কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে চটচটে সেই পিচ্ছিল জলটি খেলে প্রস্রাব সরল হবে ও পরিমাণেও বেড়ে যাবে।

৪. ধাতু ক্ষরণে: মুত্রনালী (লিঙ্গ) টিপলেই একটা তরল পিচ্ছিল পাতলা আঠা বেরোয়। সব ক্ষেত্রেই এটা যে ধাতু হবে তাও ঠিক নয়, এটা প্রোস্টেট গ্লান্ডে (Prostate gland) ক্ষরণও হতে পারে; যে ধরনেরই ক্ষরণ হোক না কেন, ২৫। ৩০ গ্রাম ঢ্যাঁড়স (কচি ৩। ৪টি) বেটে ঠাণ্ডা জলে মিশিয়ে কাপড়ে ছেকে কয়েকদিন খেতে হবে। এর দ্বারা ২। ৪ দিনের মধ্যেই ওই অসুবিধেটা চলে যাবে। তবে একটা কথা বলা দরকার যে, হজমশক্তি যদি ভাল না থাকে তবে কাঁচা বেটে না খেয়ে জলে সিদ্ধ করে ছেকে খাওয়াই ভাল।

আরো পড়ুন:  ভুঁই আমলা গুল্মের আট ধরনের রোগ সারাবার ভেষজ উপকারিতা বা গুণাগুণ

৫. খুসখুসে কাসিতে: কাঁচা ঢ্যাঁড়স (বীজ বাদ) কুচি কুচি করে কেটে কড়া রোদে শুকিয়ে সেগুলি গুঁড়া করে ৫-৭ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে চিনির কড়া রসে মেড়ে বাতির মত পাকিয়ে রাখতে হবে। গলা খুসখুস করলেই একটু নিয়ে চুষে খেতে হবে। সে যেকোন বয়সের লোকই খেতে পারে। যেদিন খাওয়া যায় সেই দিনই উপকার হয়।

৬. সঙ্গ সুখের পরে জালায়: আনন্দও হলো তৃপ্তিও হলো, ব্যস, জ্বালা আরম্ভ হলো, তার সঙ্গে টনটনানি ব্যথা, এটার প্রধান কারণ হলো শুক্রাল্পতা অথচ কামত্তেজনা ভালই আছে। তাঁরা পাকা ঢ্যাঁড়স বীজ শুকিয়ে, গুড়া করে ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রয় ঈষদুষ্ণ জলের সঙ্গে এবেলা-ওবেলা কয়েকদিন খেয়ে দেখন, এই অস্বস্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন।

৭. ব্লাড সুগারে: রক্তে শর্করার আধিক্য ঘটতে থাকলে কালো জামবীজ চূর্ণ ১ গ্রাম ৩। ৪টি কচি ঢ্যাঁড়স সিদ্ধ জলের সঙ্গে প্রত্যহ কিছুদিন খেলে ব্লাড সুগার আর থাকবে না।

CHEMICAL COMPOSITION

Hibiscus esculentus

1. Analysis of fresh pod :- (a) Moisture 88%; (b) Protein 2.2%, (c) Fat 0.2%, (d) Mineral matter 0.7%, (e) Fibre 1.2%, (f) Carbohydrates 7.7%, (g) Calcium 0.09%, (h) Phosphorous 0.08%, (i) Iron (1.5 mg/100 g). 2. (a) Vitamin A (740 i.u) (b) thiamine (O.08 mg), (c) riboflavin (0.07 mg), (d) Ascorbic acid (30 mg), (e) Niacin (1.1 mg/100g). 3. Fatty acid composition of the oil :— (a) Myristic acid 0.70%; (b) Palmitic acid 21.1%; (c) Stearic acid 4.60%; (d) Linoleic acid 20.36%; (e) Oleic acid 45.54%; (f) 9-hexadecanoic acid (12, 12-epoxy oleic acid); (g) y-Tocopherol 0.043%; (h) £tocopherol (0.0319. 4. Pigments :– (a) GOSSypetin (3,5,7,8,3,4hexahydroxyflavone) and Quercetin (3,5,7,3,4′ – pentahydroxy flavone).

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

আরো পড়ুন:  চিত্রপত্রী বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ২৪-২৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!