দেশি পাট বর্ষজীবী সরল উদ্ভিদ। এর সংস্কৃত নাম কলাসকা, বাংলায় প্রচলিত নাম তিতপাতা, নালতে ও হিন্দীতে নারচা নামে পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম Corchorus capsularis Linn., ও ফ্যামিলি Tiliaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ— পাতা, কাঁচা ফল ও মূল।
সাদা পাট বা পাট-এর উপকারিতা:
১. অগ্নিমান্দ্যে (যেকোন প্রকার শ্লেষ্মবিকার ঘটিত): কাঁচা পাটপাতার রস ১ চা-চামচ সিকি কাপ জল মিশিয়ে একটু গরম করে প্রত্যহ দু’বেলা খেলে ক্ষুধামান্দ্য কমে যাবে।
২. দাস্ত অপরিষ্কারে: প্রায়ই যাঁদের দাত পরিষ্কার হতে চায় না, সেক্ষেত্রে নালতে পাতার রস ৩। ৪ চা-চামচ একটু জল মিশিয়ে অল্প গরম করে প্রত্যহ সকালে খালি পেটে খেলে দুই-এক ঘণ্টার মধ্যে দস্ত হয়ে যাবে এবং আমজড়ানো মলও বেরিয়ে যাবে।
তবে অনেকের ক্রুর কোষ্ঠ থাকে, যাকে চলতি কথায় বলে “কসা ধাত” তাঁদের রসের মাত্রা একটু বেশী খেতে হবে। তবে বারো মাস কাঁচা পাট পাতা পাওয়া তো যাবে না। সেক্ষেত্রে শুকনো পাতা ৬।৭ গ্রাম/১০ গ্রাম পর্যন্ত ভিজিয়ে একটু থেতো করে পুনরায় আধ কাপ জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ছেকে সেই জলটা খালি পেটে খেতে হবে।
৩. পেটের বায়ুতে: যেখানে দাস্ত পরিষ্কার হচ্ছে না বলে পেটে বায়ু হচ্ছে। এটাই স্থির সিদ্ধান্ত, সেখানে পাটপাতার রস বা পাতা ভিজানো জল সকালে খালি পেটে খেতে হবে, তবে রস নিলে এক-দেড় চা-চামচ রস একটু জল মিশিয়ে খেতে হবে অথবা ৫। ৬ গ্রাম পাতা ভিজিয়ে থেতো করে আধ কাপ গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেকে খালি পেটে খেতে হবে। এর দ্বারা দাস্ত পরিষ্কার হয়ে গেলে পেটে আর বায়ু হবে না। তবে এটা প্রত্যহ খাওয়ার দরকার নেই।
৪. রক্ত আমাশায়: শুকনো পাটপাতা চূর্ণ দেড় গ্রাম মাত্রায় ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশায়র বেগ আর থাকবে না।
৫. ঘুসঘুসে জ্বরে: এই জ্বরের কারণ যদি রক্ত আমাশা হয়, তাহলে পাটপাতা চূর্ণ (এটা ফেনিংস চা পাতার মত ভাঙ্গা হ’লেও চলবে) দেড় বা দুই গ্রাম মাত্রায় নিয়ে রাত্রে ১ কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, সকালে ছেকে ওই জলটা খেলে জ্বর ও রক্ত-আমাশা দুই-ই সেরে যাবে।
৬. অম্ল রোগে: আমরা একেই চলতি কথায় ‘অম্বল’ রোগ বলে থাকি। আজকাল এ রোগটায় শতকরা আশি জন ভুগছেন, বর্তমানকালে এর কবল থেকে রক্ষে ‘ পাওয়া অসম্ভবই বলা যেতে পারে, কারণ আমরা যেসব দ্রব্য আহার্য হিসেবে গ্রহণ করি সেগুলি সবসময় অকৃত্রিম থাকে না, আর যদিও হয় সেটা আমাদের শরীর গ্রহণ নাও করতে পারে, তাছাড়া স্বেচ্ছাকৃত অনেক বিরুদ্ধে দ্রব্যও আহার করি; এই বিরুদ্ধে বলতে সংযোগ বিরুদ্ধ হতে পারে, আবার কালবিরুদ্ধ হতে পারে। যাহোক, এর থেকে অগ্নিমান্দ্যও হতে পারে এবং হয়ও, সেই থেকে অম্লরোগের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে দু’বেলা আহারের আধ ঘণ্টা পরে অন্ততঃ আধ কাপ তেতো পাট ভিজানো জল খেতে হবে, তবে পাতা আধ ভাঙ্গা হলে ভাল হয়, এটা দেড় গ্রাম মাত্রার বেশী নেওয়ার দরকার নেই।
৭. যকৃৎ রোগে: যকৃৎ বা লিভারের দোষে অনেক রোগেরই সমাগম হয় দেহে। এর দ্বারা মূত্রকৃচ্ছ্রও হয়, পাডুরোগও হয়; আবার ওই দুই কারণ থেকে হৃদরোগেরও উৎপত্তি হয়। সেক্ষেত্রে পাট পাতা এক বা দেড় গ্রাম মাত্রায় এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরের দিন সকাল বেলা ছেকে ওই জলটা খেতে হবে।
৮. পেট ব্যথায় (কলিক): এই উপসর্গটা অনেক কারণেই হয়। আমাশায়, পেটের বায়ুতেই বেশী হয়। সেক্ষেত্রে পাটপাতা অন্তধমে পুড়িয়ে সেই কালো ছাই (এটাকে পিষে মিহি চূর্ণ করে নিতে হবে) ৪০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় খেতে হবে, তবে ঈষদুষ্ণ জলে গুলে অথবা ওই জলসহ খেলে ভাল হয়। এর দ্বারা ১০।১৫ মিনিটের মধ্যে পেট ব্যথার উপশম হবে।
৯. মুত্রাশয়ের রোগে: সাধারণতঃ বেশী প্রস্রাব, কোঁত দিলে প্রস্রাবের সঙ্গে লাল বা সাদা চুনগোলার মতো বেরুতে থাকলে, দাঁড়ালে বা ব’সলেই প্রস্রাব, প্রচুর বেগ এলেও ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব—যেক্ষেত্রে এর যেকোন একটির লক্ষণ প্রকাশ পায়, সেখানে এক কাপ গরম জলে ১ গ্রাম বা ২ গ্রাম পাট পাতা ভিজিয়ে রেখে ১০। ১২ ঘণ্টা বাদে ছে’কে ওই জলটা খেতে হবে।
CHEMICAL COMPOSITION
Corchorus capsularis Linn
Analysis of the plant:- Glucoside viz., capsularin. Analysis of the seeds :- Galacturonic acid; glycuronic acid; pectic acid; corchorin; corchoritin.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ১৮০-১৮২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।