জয়ন্তী বৃক্ষের, ডাল, পাতা, ফলের তেরোটি ভেষজ গুণাগুণ

বৃক্ষ

জয়ন্তী

বৈজ্ঞানিক নাম: Sesbania sesban (L.) Merr. সমনাম: Aeschynomene aegyptiaca (Pers.) Steud.; Aeschynomene sesban L.; Emerus sesban (L.) Kuntze সাধারণ নাম: common sesban, Egyptian rattle pod, Egyptian riverhemp, Egyptian sesban অন্যান্য নাম: Hindi: जैत jait, जयत jayat, नादेयी nadeyi • Kannada: ತಕ್ಕಿಲೆ takkile • Manipuri: chuchurangmei • Marathi: शेवरी shevari, वैजयंती vaijayanti • Nepalese: जयन्ति jayanti • Pali: तक्कारी takkari • Punjabi: ਜੈਂਤ੍ਰ jaintar • Sanskrit: जैत्री jaitri, जयंतिका jayantika • Tamil: சிற்றகத்தி cirrakatti, கருஞ்செம்பை karu-n-cempai • Telugu: జాలుగ zaluga
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Fabales পরিবার: Fabaceae গণ: Sesbania প্রজাতি: Sesbania sesban

পরিচিতি: জয়ন্তী বৃক্ষ বেশী উচু হয় না, সাধারণত ১০/১২ ফুট পর্যন্ত হতে দেখা যায়; গাছ বেশী ঝোপঝাড় হয় না, পাতাগুলি দেখতে অনেকটা তেতুল পাতার মতো। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Sesbania sesban (Linn.) Mear.,পরিবার Fabaceae. জয়ন্তী গাছটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

জয়ন্তী ছোট আকারের বাংলাদেশের ঔষধি গাছ

রোগ প্রতিকারে

১. নাকের জল: প্রায় সারা বৎসরই পড়ে, হয় সকালের দিকে না হয় সন্ধ্যেবেলা ঝির ঝির করে আসে, কাঁচা সর্দি কিছুতেই যায় না। এদের পক্ষে ভাল ঔষধ এই জয়ন্তী পাতা ৫/৬ গ্রাম একটু সিদ্ধ করে, তেল দিয়ে সাঁতলে শাকের মত খাওয়া, এর দ্বারা ঐ আপদটা চলে যাবে।

২. জ্যাম: নাক বন্ধ, মাথাও ভার, সর্দি গড়ায় না, বেরোয়ও না; এক্ষেত্রে জয়ন্তী বৃক্ষের পাতার রস ২ চা-চামচ একটু গরম করে প্রত্যহ সকালের দিকে খেয়ে দেখুন, সমস্যা সেরে যাবে।

৩. শিশুর সর্দিতে: এটাতে প্রায়ই ভোগে, বুকে বসে যায়, হাঁসফাঁস করে, মনে হয় যেন হাঁপানীর টান, এক্ষেত্রে জয়ন্তী বৃক্ষের পাতার রস একটু গরম করে সেটা থেকে ২/৩ ফোঁটা দুধে মিশিয়ে খেতে দিন; আর বাকী রসটার সঙ্গে একটু সরষের তেল মিশিয়ে বুকে ও পিঠে আস্তে আস্তে মালিশ করে দিলে ঐ কষ্টটা চলে যাবে, আর সর্দি তরল হয়ে হয় বমি হবে, না হয় দাস্তের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে।

আরো পড়ুন:  গোলাপী শিরিষ উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ দেশের শোভাবর্ধক ও ভেষজ বৃক্ষ

৪. সিকতা মেহ: প্রস্রাবের তলানিতে এরারুটের মতো পড়ে, এটাতে বয়সের কালাকাল কিছু নেই, তবে শরীরের বলাধান কমে যাচ্ছে; এক্ষেত্রে চক্রপাণি দত্তের একাদশ শতকের সিদ্ধ যোগ হলো জয়ন্তী পাতার রস ২ চা চামচ একটু দুধ মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দুবার খাওয়া। এটাতে ঐ অসুবিধাটা চলে যাবে। তবে প্রথমে এক বা দেড় চা চামচ করে খাওয়া আরম্ভ করা উচিত।

৫. ইক্ষুমেহ রোগে: প্রস্রাব বেশী, ইক্ষু বা আখের রসের মত গন্ধও, পিঁপড়েও লাগে, হাঁটার বল কমেও যাচ্ছে; এটা কিন্তু মধুমেহের পূর্বাবস্থা। এক্ষেত্রে জয়ন্তী বৃক্ষের পাতার রস ২ চা চামচ করে সকালে ও বিকালে দুবার খেয়ে দেখুন উপশম হবে।

৬. মধুমেহ: এই জয়ন্তী বৃক্ষের পাতার রস ৩/৪ চা চামচ একটু গরম করে, ঠান্ডা হলে অন্তত  আধা কাপ দুধে মিশিয়ে খেতে হয়। এটা ১৭শত খৃষ্টাব্দের চিকিৎসক ও গ্রন্থকার বঙ্গসেনের আমল থেকে চলে আসছে, তবে প্রাচীন রীতি ভঙ্গ করে একটা কথা আজ জানাই যে, আমার মাননীয় রক্ষণশীল বৈদ্য যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এই জয়ন্তী পাতা শুকিয়ে চূর্ণ করে ঔষধ হিসেবে দিতেন যবের আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি করে খেতে। মাত্রা ছিল ৪/৫ গ্রাম। আর তাঁরা যে কোনো ঔষধই দিতেন, তার একটির সহপান বা অন্যপান এই জয়ন্তী পাতার রস থাকবেই।

৭. বাত শিরায়: অমাবস্যা, পূর্ণিমা, একাদশী হলেই, হয় শিরে টান ধরে, না হয় জ্বরভাব বা জ্বর অথবা দুই, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পায়ের পেশীতে বা বগলে ব্যথা, এক্ষেত্রে এক বা দেড় ইঞ্চি করে পাতা সমেত জয়ন্তীর ডাল ভেঙ্গে নিয়ে সেটাকে অল্প ভাপিয়ে, গরম অবস্থায় সেই জায়গাটিতে বেধে রাখলে ওটা উপশমিত হবে।

৮. বোলতা, ভীমরুল বা বিছের হুলের বিষের জ্বালায়: জয়ন্তী বৃক্ষের বীজ বেটে বা ঘষে ওখানে লাগিয়ে দিলে বিষের জ্বালা প্রশমিত হবে।

আরো পড়ুন:  ক্ষুদিজাম বাংলাদেশের বনাঞ্চলে জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

৯. পালা জ্বরে: এ জ্বর ২ দিন বা ৩ দিন অথবা ৪ দিন অন্তর আসতে পারে, অনেক সময় ১৫ দিন অন্তরও হয়। এক্ষেত্রে জয়ন্তী বৃক্ষের শিকড় মাথায় বাধলে ওটা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। এ উক্তিটি অথর্ববেদিক সম্প্রদায়ের বৈদ্যাক গোষ্ঠী পরম্পরায় চলে আসছে। হয়তো বা হ্যাঁ, হয়তো বা না এ তর্ক চিরকালই থাকবে। আমরা রত্নও তো ধারণ করি এবং সে বিধিও তো দেওয়া আছে। বাস্তব কিনা সেটা দেখার জন্যই সূত্রটা এখানে রেখে গেলাম।

১০.বসন্ত রোগের প্রতিষেধক: মাঘের শেষ থেকেই রোগ আসে, সে সময় শরীরে পিত্তশ্লেষ্মার সঞ্চয় হয়ে রসস্থ হয়; এই সময় জয়ন্তীর বীজ ২৫টি পিষে, একটু ঘি মিশিয়ে বাসি জল দিয়ে খেতে হয়, এর দ্বারা ঐ সঞ্চয়টা নষ্ট হয়, এটি প্রতিষেধক হিসেবে বহুকাল থেকে চলে আসছে।

১১. শূল ব্যথা: পেটে অসম্ভব যন্ত্রণা, কারণ বোঝা যাচ্ছে না, সে যেজন্যেই হোক, গমের আটার বা ভূষিমিশ্রিতর সঙ্গে জয়ন্তী পাতা বেটে রুটি করে, হাতে গড়েই হোক আর বেলনি দিয়ে বেলেই হোক, চাটুতে সেঁকে সহমত গরম গরম যেখানে ব্যথার অনুভব হচ্ছে সেখানে বসিয়ে দিলে ৪/৫ মিনিটের মধ্যেই উপশম হবে।

১২. শ্বেতীতে (শ্বিত্র রোগে): দেহের যেখানে রোমোদ্গম হয় না, যেমন অধরে বা ঠোঁটে, হাতের ও পায়ের তলায়, মলদ্বারে ও মেঢ্রে –দেহের এইসব অঙ্গে যদি সাদা দাগ হয়, সেটা দুঃসাধের পর্যায়ে পড়ে যায় দীর্ঘদিন হয়ে গেলে। তথাপি বলা আছে, প্রাথমিক স্তরে শ্বেত জয়ন্তীর মূলের ছাল গোদুগ্ধে দিয়ে বেটে লাগালে ও খেলে এ রোগের উপশম হয়। অন্য জায়গায় হলে উপশম হবে-একথা বঙ্গসেন তাঁর পুস্তকে লিখে গিয়েছেন।

১৩. গর্ভ নিরোধে: অনেকে ভাবছেন এটার প্রয়োজন আছে জনসংখ্যাকে সীমিত করার জন্যে; কিন্তু আমরা দেখতে পাই, চরক সুশ্রুতের যুগে, এমনকি একাদশ শতকের চক্রপাণি দত্তের কাল পর্যন্তও এ সমস্যা ছিল না, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ষোড়শ শতকে এসে এ ভাবনা মাথায় ঢুকেছে ভাবমিশ্রের, ইনি ভাবপ্রকাশ গ্রন্থের রচয়িতা, কি কারণ ছিল তা জানি না। তিনি একটি সিদ্ধযোগ লিখে গিয়েছেন, সেইটা বলি, নারী ঋতুমতী হলে সেই তিন দিন জয়ন্তী পাতা বেটে পুরনো গুড় দিয়ে রোজ সকালে খালিপেটে সরবত করে খেতে বলেছেন, এর দ্বারা এই অশোকাষ্টমীটা কেটে যাবে, মাসে আবার হলে পুনরায় এই তিন দিন খেতে হবে। এমনকি এও শোনা যায় বন্ধ বৈদ্যদের কাছে যে, কয়েক মাস নিয়মিতভাবে এই তিন দিন করে খেলে তাঁর গভর্ণধারণের ক্ষমতাটাই চলে যায়, অথচ শরীর খারাপ হয় না। বৈজ্ঞানিকগণ এইবার এইটাকে নেড়েচেড়ে দেখান এটা বাস্তব কিনা।

আরো পড়ুন:  স্থল পদ্ম গ্রীষ্মমন্ডলে জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদ

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা, ৮৪-৮৯।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

1 thought on “জয়ন্তী বৃক্ষের, ডাল, পাতা, ফলের তেরোটি ভেষজ গুণাগুণ”

Leave a Comment

error: Content is protected !!