চুলকানি বা চুলকানী ত্বকের অন্যতম বিব্রতকর সমস্যা। এই চুলকানি বিভিন্ন কারণে হয়। শরীরের ভেতরে বা বাইরে উভয় স্থানে হতে পারে। ঘামাচির মতো, চাকা চাকা হয়ে, লালচে দাগ ইত্যাদির আকারে দেখা যায়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজেই চুলকানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ভেষজ গুণাগুণ:
১. কালজিরা: কালজীরে ভাজা তেল গায়ে মাখলে চুলকণার উপশম হবে। ১০০ গ্রাম সরষের তেলে ২৫। ৩০ গ্রাম কালজীরে ভেজে সেই তেল ছেকে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
২. মচকুন্দ: এরা প্রায়ই সর্দি-কাসিতে ভোগেন, শরীরে ঠাণ্ডা লাগলেই চুলকনা হয়। ধারণা হয়, বোধ হয় রক্ত খারাপ হয়েছে। এক্ষেত্রে মচকুন্দ গাছের ছাল ৫ গ্রাম ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছে’কে, সকাল অথবা বৈকালের দিকে খেতে হবে। দুই-তিন দিনের পর থেকেই ওটা কমতে থাকবে।
৩. আশশেওড়া: তেল-হলুদ মাখার মত মাখতে হবে। সরষের তেল ১০০ গ্রাম কড়ায় চড়িয়ে নিম্ফেন হলে আশশেওড়া বা মটকিলা (Glycosmis pentaphylla) মূলের ছাল ২৫ গ্রাম মিহি করে বেটে নিতে হবে এবং ওই তেলে ভেজে নিয়ে ওর সিটেগুলোকে ছেকে ফেলার দরকার নেই, অবশ্য এমন করে ভাজতে হবে যেন ওগুলি পড়ে না যায়। ওই সিটে মেশানো তেল গায়ে প্রত্যহ একবার করে মাখতে হবে। এটা মাখলে ৩-৪ দিনের মধ্যে চুলকনার উপশম হবে
৪. কুকশিমা: এ রোগে যাঁরা অক্লান্ত হয়েছেন তাঁরা ধরে নিতে পারেন যে, তাঁদের রক্তদৃষ্টি আসছে, কারণ এটা এক ধরনের চর্মরোগ। এক্ষেত্রে কুকশিমার সমগ্র গাছটিকে মিহি করে বেটে সেটাকে গায়ে মাখতে হবে। ঘণ্টাখানেক বাদে সেটা ধুয়ে ফেলতে পারেন। এইরকম ৪-৫ দিন গায়ে মাখলে ওটা সেরে যাবে
৫. শণপাতা: শণপাতা বেটে সেটাতে অল্প জল মিশিয়ে, গায়ে মেখে, দেড়দ, ঘণ্টা বাদে স্নান করতে হয়, এই রকম ২-৩ দিন করলে চুলকণা সেরে যায়।
৬. কুঁচ: ছোট ছোট ফসকুড়ির সঙ্গে চুলকানি, যা সহজে সারানো যায় না, এমন ক্ষেত্রে কুঁচ ফল বাটা তিল তেলে পাক দিয়ে সে তেল লাগালে চুলকানি সেরে যায়।।
৭. দেবদারু: দেবদারুর ছাল চূর্ণ করে সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে দেহে বেশ ভালোভাবে মালিশ করুন। একঘণ্টা পরে গোসল করবেন। এর ফলে ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই চুলকানির চিহ্ন থাকবে না।
৮. গোলমরিচ: গোলমরিচ ও গন্ধক (কবিরাজি দোকানে পাওয়া যাবে) মিহি করে পিষে ঘি দিয়ে ভাল করে মেড়ে নিয়ে গায়ে লাগালে এবং তারপরে রোদে গিয়ে বসলে চুলকুনি সেরে যায়।
৯. ভেন্না: ভেন্না মূলের ছাল বাটায় হলুদের গুড়ো মিশিয়ে গায়ে মাখতে বা লাগাতে হয়। এর দ্বারা ওটার উপশম হবে।
১০. ছোলা: চুলকানি ফুসকুড়িতে এছাড়া ছোলার বেসন জলে গুলে শরীরে মালিশ করে তারপর স্নান করলে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়। ত্বক পরিষ্কার হয়, চুলকুনি সারে। বেসন জলে গুলে মেখে ধুয়ে ফেললে মাথার চুলকুনি ও ফুস্কুড়ি সেরে যাবে।
১১. নিসিন্দা: নিসিন্দার তেল ব্যবহার করলে চুলকানি সেরে যায়। (তিলের তেলের সঙ্গে নিসিন্দার রসের পাক)
১২. পান: পুরাতন দাদ বা চাপড়া-চুলকানিতে পানের রস ঘষে দিলে কয়েক দিনেই ও অবস্থাটার অবসান হয়।
১৩. কাকমাচী: এটা শরৎকালে ও শীতের শুরুতে বেসাতি, এটির বৈশিষ্ট্য হলো প্রথমেই হাতে ধরবে, তারপর যোগ্যস্থানে আক্রমণ করবে। এদের পক্ষে কাকমাচী বাটা একটু গরম করে গায়ে মাখলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই এই রোগটা চলে যাবে। তাছাড়া সম্ভব হলে স্বাদু কাকমাচীর পাতা জলে অল্প সিদ্ধ করে, জলটা ফেলে দিয়ে, শাকের মতো রান্না করে অল্প পরিমাণে খেতে পারলে আরও ভালো হয়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
সত্যিই কাজে আসবে কি না জানি না। খুব মারাত্মক বাজে একটা রোগের নাম দাউদ। আপনার লিখা ইনফরমেটিভ আশা করি ঠিক হবে দাউদ।