বাত ( Arthritis) এক ধরনের প্রদাহ। যা অস্থির সন্ধিতে হয়। এটা হাত, পা, মেরুদণ্ডে হয়। বাতের নানা প্রকারভেদ আছে। তবে আমাদের হাতের কাছে প্রাপ্ত খাবার বা উদ্ভিদের মাধ্যমেই বাত থেকে আরাম পাওয়া যায়।
বাত রোগ সারানোর ভেষজ উপায়:
১. পিপুল: তবে এ বাতে শ্লেষ্মর প্রাধান্য থাকবে। শুধু তাই নয়, প্রায়ই শরীরটা থম মেরে যায়, মনে হচ্ছে, এবার শরীর অচল হয়ে পড়বে। এই রকম পরিস্থিতিতে পিপুল চূর্ণ ২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ১ চা-চামচ আদার রস সহ সকালে ও বৈকালে দু’বার খেতে হবে। তবে আদার রসটা গরম করার পর তার ওপর থেকে ১ চা-চামচ ঢেলে নিতে হবে। আর একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, শরীরটা কড়া হয়ে যাচ্ছে এটা বুঝলে একবার করে খেতে হবে।
২. তেজপাতা: সন্ধিস্থলের বাতে বা গেঠের বাতে তেজপাতার ছাল গুঁড়া করে প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যাবে।
৩. জিকা: বাত রোগের জন্য জিকার ছাল একটি মহৌষধ। এ গাছের ছাল তিন থেকে চার গ্রাম বেটে এক চামচ মধুর সাথে রোজ সকালে একবার করে খেলে উপকার হয়। তবে নিয়মিত বেশ কিছুদিন খাওয়া দরকার।
৪. চালতা: বাত রোগে চালতার একটি কচি ছোট ফল বেটে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে খেলে বাতের ব্যাথায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে ফল বাটার পর ৩০ গ্রাম মতো হতে হবে।
৫. মাধবী: পুরানো বাত রোগ হলে মাধবীলতার পাতার টাটকা রস ২০ মি. লি. আধ কাপ ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে রোজ সকালে একবার করে খেলে রোগী আরাম পায়।
৬. হাড়জোড়া: গা-হাত-পা ব্যথা, যন্ত্রণায় কষ্ট হচ্ছে এটা প্রায়ই হয়, এক্ষেত্রে হাড়জোড়ার ফুলুরি করে খেলে বিশেষ উপকার হবে। তৈরী করার নিয়ম হলো- আঙ্গুলের এক গাঁটের মত (পর্ব) হাড়জোড়ার ডাঁটা ওপরের খোসাটাকে ছাড়িয়ে তাকে এক-দেড় মঠো আন্দাজ ২৫-৩০ গ্রাম ডালের সঙ্গে বেটে নিয়ে তাকে টিকিয়া করে ভাজতে হবে, অর্থাৎ গোল ফুলুরি না করে চ্যাপ্টা করে ভাজতে হবে। সেইটাই ভাত খাওয়ার সময় খেতে হবে। অবশ্য অন্য সময় মুড়ির সঙ্গেও খাওয়া যায়।
৭. ব্রাহ্মীশাক: এ বাতটা এমন যে, ক্রমশ শরীরে অবসাদের ঝিমুনি আসে, এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্রাহ্মীশাকের রস একটু গরম করে তা থেকে ২ চা-চামচ নিয়ে প্রত্যহ একবার অথবা ২ বার খেতে হবে এর দ্বারা শরীরটা ঝরঝরে হবে। এছাড়াও ব্রাহ্মী পাতার রস চার চামচ এবং তার অর্ধেক (দু’চামচ) তারপিন তেল একসাথে মিশিয়ে মালিশ করলে উপকার হয় ।
৮. লেবু: গেঁটে বাত রোগে পাতিলেবুর রস মালিশ করলে বা পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
৯. রসুন: গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে দুই থেকে তিন কোয় রসুন বাটা খেতে হয়; অথবা ৫ থেকে ৭ ফোটা রসুনের রস ঘিয়ে মিশিয়ে খেলেও হয়। সরষের তেলে রসুন ভেজে সেই তেল মালিশ করলে বাতের যন্ত্রণা কমে যায়।
১০. তিল: লোহার কড়াই চুলায় বসিয়ে গরম হবার পর তাতে ৫০ গ্রাম কাল তিল দিয়ে ভেজে নিতে হবে। এরপর ভাজা তিলকে জ্বাল দেয়া ৩০ মিলিলিটার দুধে ভিজিয়ে । (ভেজানো থাকবে পনের মিনিট) সে তিলকে ঐ দুধ দিয়ে বাটতে হবে। ভালোভাবে বাটা হলে বাতে আক্রান্ত অঙ্গে (যেখানটা ফুলে গেছে এবং জোরে টিপলে লাগছে) তিল বাটা পুরু করে প্রলেপ দিলে ফুলা, যন্ত্রণা কমে যাবে। কেবল বাত নয়, ফোঁড়া এবং বিষফোঁড়া, কিছুক্ষেত্রে যন্ত্রণাদায়ক ব্রণে বাটা তিলের প্রলেপ দিলে উপকার হয়।
১১. গাঁদলা: হর গৌরী মিলনের মত গাঁদাল ও এরন্ড তেল (Castor oil) । এই গাঁদালের রসে এরন্ডতেল তেল মিশিয়ে অতি প্রত্যুষে খেলে, আর তার সঙ্গে পথ্যাশী হলে বাত রোগ পালাবেই। গাঁদালের পাতার রসের সাথে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেলে ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই আমবাতের যন্ত্রণা লাঘব হবে।
১২. দুরালভা: এই রোগের হয়েছে বুঝতে পারলে বেশ কিছুদিন দুরালভা ভিজানো জল খেতে হবে। দুরালভা ১৫। ২০ গ্রাম থেতো করে প্রায় এক লিটার গরম জলে ১০। ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ছেকে সেই জলটা সমস্তদিনে খেতে হবে।
১৩. শিউলি: টাটকা ১৫ থেকে ২০টি শিউলি গাছের পাতা দুই কাপ পানিতে সিদ্ধ করে আধা কাপ থাকতে আঁচ থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে। সে পানি সকালে এবং একইভাবে সন্ধ্যায় খাওয়া দরকার। কিছুদিন নিয়ম করে খেলে বাত রোগ আরোগ্য হয়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Abdulaziz Alkanderi
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।