ভূমিকা: মালাঙ্গাকুরি বা চাপরা ঘাস (বৈজ্ঞানিক নাম: Eleusine indica) এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে সর্বত্রে জন্মে।
মালাঙ্গাকুরি বা চাপরা ঘাস-এর বর্ণনা:
গুচ্ছাকার বর্ষজীবী স্বল্পকাল স্থায়ী বহুবর্ষজীবী তৃণ, কাণ্ড খাড়া বা বক্রভাবে উধ্বর্গ ৪৫-৬৫ সেমি উঁচু, সরু বা সুদৃঢ়, শাখান্বিত, রোমশবিহীন, মসৃণ, চাপা, স্বল্প পর্বযুক্ত, পর্বরোমশ বিহীন, প্রায়শ মোটা। পত্রফলক রৈখিক, সাধারণত ভাজকৃত, প্রায় ৫-৩০ x ০.৩-০.৬ সেমি, সূক্ষ্মা, দীর্ঘ কোমল রোমাবৃত, একাধিক শিরাল, অনুফলক ঝিল্লিসদৃশ, কর্তিতা, ১ মিমি লম্বা, রোমশ, পরিঘাত কলা রোমশবিহীন, আবরণ কাগজবৎ।
পুষ্পবিন্যাস ১-১৫ (সাধারণত ৪-৫)টি সরু উধ্বর্গ। স্পাইকযুক্ত, স্পাইক (১-৫) আঙ্গুলাকার, ৪.৫-১৩.৫ সেমি লম্বা। স্পাইকলেট ৩-৯ পুষ্পবিশিষ্ট, উপবৃত্তাকার, ৪.৫-৫.৫ মিমি লম্বা, পুস্পিকা প্রান্তআচ্ছাদী, মঞ্জরী অক্ষের পর্বমধ্য ০.৫ মিমি লম্বা, শক্ত, চাপা, রোমশবিহীন, মসৃণ, শীর্ষ প্রসারিত। গ্লুম প্রায়সূক্ষ্মাগ্র, শূকবিহীন, রোমশবিহীন, অসম, ১-একাধিক শিরা বিশিষ্ট, স্থায়ী, নিচের গুম সরু আয়তাকার, ১.৫-২.৭ মিমি লম্বা, উপরের ঘুম উপবৃত্তাকার-ভল্লাকার, ১.৮-৪.৫ মিমি লম্বা। লেমা ভল্লাকার, দীর্ঘাগ্র, ৩-শিরাল, কিলযুক্ত, ঝিল্লিময়, মসৃণ, রোমশবিহীন, শূকবিহীন, সর্বনিম্নেরটি ২.৭-৩.০ মিমি লম্বা, অন্যান্য লেমা ক্ষুদ্রতর। পেলিয়া স্থূলা, কিল পক্ষল। ক্যারিঅপসিস ১.০-১.৫ x ০.৫-০.৭ মিমি, ত্রিকোণাকার, পৃষ্ঠ অলংকৃত, ফলত্বক দ্বারা আচ্ছাদিত, গাঢ় বাদামী, ভ্রুণ তির্যক।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৮, ৫৪ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় জন্মে। সাধারণত আগাছারূপে চা বাগান, লন, সবজী বাগান, পতিত জমি, পথিপার্শ্ব, উন্মুক্ত জঙ্গলে জন্মিতে দেখা যায়। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জুন-আগস্ট। বীজ ও মূলায়িত পার্শ্ব বিটপে বংশ বৃদ্ধি হয়।
বিস্তৃতি: সাধারণত উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত, উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও জন্মে। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মিতে দেখা যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক:
আবাদী জমির বিরক্তিকর আগাছা। ভূমিক্ষয় রোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরুণ অবস্থায় সুস্বাদু পশুখাদ্য, পরিণত অবস্থায় সায়ানোজেনেটিক এবং বিষাক্ত (Bor, 1960)। অনাবৃষ্টির সময় দানা মানুষের খাদ্যরূপেও ব্যবহৃত হয় (Skerman and Riveros, 1960)
মালাঙ্গাকুরি বা চাপরা ঘাস-এর জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:
গায়ানায় গাছটির ক্বাথ, বাচ্চাদের মাংসপেশির আক্ষেপ এবং যকৃতের পীড়ায় ভেষজ ঔষধরূপে প্রয়োগ করা হয় (Kirtikar et al., 1935)। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় অস্থিভাঙ্গা নিরাময়ে এই গাছ ব্যবহার করে (Uddin, 2006)।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মালাঙ্গাকুরি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি আশংকামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মালাঙ্গাকুরি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি বর্তমানে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৬৮ আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Sphl
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।