পুন্নাগ গাছের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

পুন্নাগ দেখতে মধ্যমাকৃতি চিরসবুজ পত্রাচ্ছাদিত সৌন্দর্যযুক্ত বৃক্ষ। সাধারণতঃ ২০ থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। পাতা মোটা ও ডিম্বাকৃতি, অনেকটা বট পাতার মত। পাতার অগ্রভাগ গোল এবং ঈষৎ চাপা, লম্বায় ৪-৮ ইঞ্চি ও চওড়া ৩/৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে, বোঁটার দিক ক্রমশঃ সরু, বোঁটা ১১ ইঞ্চি লম্বা, উভয় দিক মসৃণ, উপরিভাগ গাঢ় সবুজ ও চকচকে, অনেক শিরা আছে। ফুল সুগন্ধযুক্ত, সাদা রঙের এবং চতুর্দল বিশিষ্ট। ফুল দেখতে অনেকটা নাগেশ্বর ফুলের মত। ফল ২–১ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত, মসৃণ, অল্প মাংসল ও সাদা রঙের, পাকলে হলদে রঙের হয়। বীজ থেকে তেল বেরোয়। শ্রাবণ মাসে ফুল হয়, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ফল ধরে।

পুন্নাগ-এর অন্যান্য নাম:

এটি পুন্নাগ, সুলতান চম্পা, উডি, অণ্ডল, তুঙ্গ, উণ্ডী, নমেরু, নাগম, কাঠচাঁপা, পুন্নাগম, পুন্না, সুপর্ণক, পোলাগ, পোলাং, উনভগ, পুমান, বেতফল প্রভৃতি নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Calophyllum inophyllum Linn., ফ্যামিলী Guttiferae. সারা পৃথিবীতে এই গণের মোট ১৩০টি প্রজাতি বর্তমান, ভারতে আছে ১৪টি।

বিস্তৃতি:

দক্ষিণ ভারত, পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার সমুদ্রোপকূলবর্তী স্থান, বোম্বাই প্রদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, বর্মা, মালয়, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি স্থানে জন্মে। তবে ভারতের সর্বত্র এই গাছটিকে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং হচ্ছে রাস্তার দু’ধারের ও বাগানের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য।

পুন্নাগ-এর রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার:

ছাল:– সংকোচক, আভ্যন্তরীণ রক্তপাতে প্রয়োগ করা হয়। ছালের রস তীব্র বিরেচক। ছালের চূর্ণ অণ্ডকোষের শোথে প্রলেপে হিতকর। ছালের ক্বাথ (বহিঃ প্রয়োগে) ক্ষতনাশক। এর ছালের রস দুষ্টব্রণে বিশেষ হিতকর। ছালের রস সন্ধিবাতে ব্যবহার্য। গাছের শাখা-প্রশাখা জলে সিদ্ধ করলে ঐ জলে এক রকমের তৈল ভাসতে থাকে, ঐ তৈল চক্ষুরোগে প্রযুক্ত হয়। জাভায় এটি মূত্রল গুণসম্পন্ন বলে প্রসিদ্ধ। ছালের ক্বাথ প্রবাহিকা, রক্তাতিসার ও রক্তপিত্ত প্রশমক।

পাতা:— এটি হাইড্রোসায়ানিক এসিডে সমৃদ্ধ এবং মৎস্যবিষ হিসাবে চিহ্নিত। পাতার ক্বাথ নেত্র শোথে প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার্য। মাদাগাস্কারে এর পাতা চোখের ব্রণে লাগানো হয়।

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সহজলভ্য নয়ন মোহিনী দশটি ফুল

ফল/বীজ: — বমন কারক ও বিরেচক। বীজচুর্ণ জলে মর্দন করে সন্ধিবাতে ও বাতরক্তে প্রলেপ দিলে বেদনা ও শোথ দূর হয়। বীজ থেতো করে গরম করলে যে আঠার মতো পদার্থ বেরোয়, তা গেঁটেবাতে লাগালে বাত সেরে যায়।

বীজের তৈল:— সুগন্ধযুক্ত, সাবান তৈরির একটি বিশিষ্ট দ্রব্য, এটি বিষাক্ত। এই তৈল সন্ধিবাত, চর্মরোগ, দাদ, আমবাত, দুষ্ট ক্ষত, খোস-পাঁচড়া প্রভৃতিতে বাহ্য ব্যবহার করা হয়। অতি অল্প মাত্রায় এই তৈল সেবনে প্রমেহ, গনোরিয়া, মূত্রনালীর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর রোগ, জননেন্দ্রিয়, মূত্রাশয় ও বৃক্কের শ্লেষ্মকলার রোগ, মূত্রকৃচ্ছতা প্রভৃতি রোগের উপশম হয়। এই তৈল বাজারে সর্পণ বা পোলাং তৈল হিসেবে পরিচিত। বীজের তৈল সোরাবিষ নষ্ট করে।

গাছের আঠা/গদের ধুনা:— ফোড়া নিবারক, শূলনাশক, জলে মেশালে যে তৈলাক্ত পদার্থ জলে ভেসে থাকে সেটি চোখের রোগে সারাতে কার্যকর। এই আঠা বমনকারক ও বিরেচক। গাছের টাটকা উজ্জ্বল আঠা ক্ষতে ব্যবহার্য। গাছের টাটকা উজ্জ্বল আঠা ক্ষতে ব্যবহার্য। গাছের আঠা, ছাল ও পাতা জলে সিদ্ধ করলে যে তৈলাক্ত পদার্থ জলে ভেসে থাকে, সেটা চক্ষুর ক্ষত সারাতে ব্যবহৃত হয়।

CHEMICAL COMPOSITION

Calophyllum inophyllum Fresh seeds contain: moisture 27.23, ash 1.07, protein 6.41, fat 60.72, carbohydrates 4.07%. Kernel contains: Oils 10-30%, Unsaponin matter 0.25-1.4%, Sistosterol, fatty acids (oleic 49.7%, linoleic 23.8%, palmitic 16.8% and stearic acid 9.7%) and resin 10-30%. Defatted press cake contains: moisture 6.5, ash 5.55, crude protein 29.15, reducing sugars 5.10, non-reducing sugars 6.10, starch (trace), crude fibre 5.55, lignin and undetermined constituents 42.05%. Bark contains: tannin 11.9%.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ৪২-৪৫।

আরো পড়ুন:  চাকুয়া কড়ই দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Adityamadhav83

Leave a Comment

error: Content is protected !!