ঘন্টাপারুল বা ঘন্টাপাটালি-এর বোটানিক্যাল নাম Screbera swietenioides Roxb. ফ্যামিলী Oleaceae. এই গাছের আর একটি প্রজাতি আছে, তার বোটানিক্যাল নাম s. pubescens Kurz., এ কোমল রোমশ, পক্ষাকার, উভয়দিকে ৩/৪ জোড়া পত্রিকা এবং সম্মুখে একটি পত্রিকা থাকে। ফুল ছোট, সাদা ও ধূসর রঙের, রাত্রে অধিক সুগন্ধ ছড়ায়। ফল কিছু ছোট। কাঠ ধূসর বর্ণের, কাঠ থেকে তাঁতের মাকু প্রস্তুত হয়।
ঘন্টাপারুল বা ঘন্টাপাটালি-এর পরিচিতি:
গাছটি দেখতে মধ্যমাকার। গাছটি ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। পাতা পক্ষবৎ সদল, দ্বিভগ্ন, ৪ ইঞ্চি লম্বা, ২ ইঞ্চি চওড়া। পত্রদণ্ডে উভয় দিকে ৩/৪ জোড়া পাতা থাকে। কোন কোন পাতা লম্বায় ৬ থেকে ৭ ইঞ্চিও হয়ে থাকে, অগ্রভাগ ক্রমশঃ সরু। মূল পত্রটি বেশ বড়। ফুল শ্বেতাভ, বাহ্যকোষ ঘণ্টাকৃতি, অভ্যন্তর কোষ ছত্রাকার। পাপড়ি শ্বেতবর্ণের এবং ধূসর বর্ণের দাগ বিশিষ্ট। ফল অনেকটা ছোট নাসপাতির মত দেখতে, লম্বায় ২–৩ ইঞ্চি এবং ব্যাস এক থেকে দেড় ইঞ্চি, বেশ শক্ত। বীজকোষে ২-৪টি বীজ থাকে। ফল বড় ঘুঙুরের মত মাঝখানে কাটা থাকে। গ্রীষ্মকালে ফুল ও শীতকালে ফল হয়। বিহারের আদিবাসী বালকদের অন্ডকোষ বড় হলে এই গাছের ফল কোমরে বেঁধে দেয়। কোষ দুটির একটি বড় ও একটি ছোট হলে তাকে গ্রামাঞ্চলে একশিরা বলে এবং সেক্ষেত্রে এর ফল কোমরে বেঁধে রাখার রেওয়াজ আজও প্রচলিত। হয়তো বা এজন্য এই গাছের একটি চলতি নাম একশিরা। এ নামটি হিন্দীভাষী অঞ্চলেই অধিক প্রচলিত।
এই গাছের ছাল ধূসর বর্ণের, কাঠ খুব শক্ত। বিভিন্ন আসবাব ও গৃহাদি নির্মাণ কাজে হত হয়ে থাকে। বাংলায় এটি ঘণ্টাপারুল নামেই খ্যাত। সংস্কৃত নামগুলি বৈদ্যকের নথিতেই বলা। হিন্দীভাষী এলাকায় এটি মোষা, মোখা, একশিরা প্রভৃতি নামে পরিচিত। হিন্দী ভাষী অঞ্চলের কোথাও কোথাও আবার এটিকে ঘণ্টাপারুলও বলে ।
বিস্তৃতি
ছোটনাগপুর, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, মধ্যভারত, রাজপুতনা ও হিমালয়ের পাদদেশে স্থানে স্থানে এটি জন্মে। ব্যাপকভাবে খুবই কম দেখা যায়। পাতা দেখতে অনেকটা পারুল বা পাটালি পাতার মতো এবং ফলটি হয় ঘণ্টার (ঘুঙুরের) মত, তাই এর নাম ঘণ্টাপারুল বা ঘণ্টাপাটলী। আফ্রিকা ও ভারতে এটির মোট ৬টি প্রজাতি পাওয়া যায়। ঔষধের জন্য ব্যবহার্য অংশ :— মূল, ফুল ও পাতা।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ৫০-৫২।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Milind Girdhari
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।