মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে ওই গাছটি কোথাও কোথাও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জন্মে। এছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে সারা ভারতবর্ষে, বিশেষতঃ শুষ্ক বনাঞ্চল সমূহে, শাল জঙ্গলে, হিমালয়ের পাদদেশে এটি পাওয়া যায়। সারা পৃথিবীতে এই গণের ৪৫টি প্রজাতি পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ১০টি ভারতে পাওয়া গেলেও আলোচ্য প্রজাতিটি (Helicteres isora) বেশি পরিচিত এবং ঔষধার্থে ব্যবহার্য।
প্রকাভেদ:
এই প্রজাতির দুই প্রকার গাছ চিহ্নিত হয়েছে- (১) var. tometosa—এটির পাতার নিচের দিকটায় রোঁয়া নাই অর্থাৎ রোমশহীন, মধ্য ও উত্তর ভারতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। (২) Var. glabrescens—এটির পাতার উভয় দিক প্রায় কেশহীন, দঃ ভারতে পাওয়া যায়।
আতঁমড়া-এর অন্যান্য নাম:
বাংলায় এটি আঁতমোড়া নামে পরিচিত। ফলের নামই এইটি। হিন্দী ভাষাভাষী অঞ্চলে একে মরোড়ফলী, মুর্বা, এঠনী, এংঠক, মুরের, এন্ঠিগোয়ংঠী, মুরেরুয়া, কাপসী, জোংক ফল, ভেণু, মরোসী বলে। সংস্কৃতে আবর্তনী, আবর্তলা, মৃগ শৃঙ্গ (মৃগ শিংগা) বলে; এছাড়া আরও কয়েকটি পর্যায়বাচী সংস্কৃত নামের উল্লেখ পূর্বে করা হয়েছে। উড়িষ্যার অঞ্চল বিশেষে এটিকে মুরমুরিয়া, মুরিমুরি বলে।
এটির বোটানিক্যাল নাম Helicteres isora, পূর্বে এটির নাম ছিল Helicteres chrysocalyx. Mig. এবং Helicteres Roxbhurghii, G. Don., পরিবার Sterculiaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ :— গাছের ও মূলের ছাল, ফল ও পাতা।
পরিচিতি:
ছোট ক্ষুপ জাতীয় গাছ, সাধারণত ৮/১০ হাত উঁচু হতে দেখা যায়, ধূসর রঙের ত্বক, কাণ্ডের নরম অংশ রোমাবৃত। পত্র বিপরীত কিন্তু সমান্তরাল নয়, কিনারা খাঁজ কাটা কাটা, উপরিভাগ অমসৃণ। ফুল একক বা অল্প পরিমাণে বিক্ষিপ্ত স্তবক বা গুচ্ছ, ১-২ ইঞ্চি লম্বা, সবুজাভ বাদামী, পাখির ঠোঁটের মত, বেলনাকার, পেচানোভাবে পাক দেওয়া গর্ভপত্র, পাকলে ঐগুলির মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীজ থাকে।
বংশবিস্তার ও চাষাবাস:
বষাকালে বীজ থেকে গাছ হয়। বছর দুয়েকের পর গাছে ফুল ও ফল হয়। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফুল ও পরে ফল হয়, ফল পাকে ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে। ফল রাত্রে জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেটি মাটিতে পুঁতলে সহজে গাছ হয়, তবে আরও সহজ হয় গাছটির শিকড় থেকে ওঠা চারা লাগালে।
আতঁমড়া-এর ব্যবহার:
গাছের ছাল থেকে এক জাতীয় মূল্যবান আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায়। পাটের গাছ থেকে যেভাবে পাট বের করতে হয়, প্রায় সেভাবেই এর ছাল থেকে তৈরী হয় তন্তু বা আঁশ (fibre)। ছোট ছোট ডাল, বৃন্ত, গাছের ছাল প্রভৃতি লেখা ও ছাপার জন্য কাগজ তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও নরম নরম ডাল গরু-ছাগলের খাদ্য। কাঠ সাদা রঙের, নরম, বিশেষ জ্বালানীর জন্য ব্যবহার্য। এই কাঠ থেকে প্রস্তুত চারকোল বন্দুকের বারুদ তৈরীর কাজে লাগে।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ৭৬-৮০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Adityamadhav83
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।