তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠা চিরসবুজ বৃক্ষ। সাধারণতঃ ৩০/৪০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়, তবে মাটির উর্বরতা বিশেষে ৫০/৬০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পত্র হৃদয়াকৃতি, দেখতে অনেকটা অশ্বত্থ পাতার মতো হলেও অগ্রভাগ ততটা সূচ্যগ্র নয়, গবাদি পশুর খাদ্য ও জমির সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও পাতার কুঁড়ি সুস্বাদু। ফুল ঘিয়ে ভেজে খায়। ফুল হরিদ্রাভ, নিচের অংশ হালকা বেগুণী রঙের, ৫টি পাপড়ি যুক্ত, আকারে ঘণ্টার মতো; ২/৪ দিন বাদে ফুল গোলাপী রঙের হয়ে যায়। বর্ষাকালে ফুল ফোটা আরম্ভ হয়, ফুল ফোটে শীতকাল পর্যন্ত, পরে ফল হয়। ফল ডিম্বাকৃতি, ১-১২ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত, পাকলে কালো রঙের হয়। ফল আকারে অনেকটা পাহাড়ী ডুমুরের মতো। ফলের উপর ৪টি রেখা থাকে। এর মধ্যে প্রতি কোষে একটি করে মোট ৪টি বীজ থাকে। কচি ফল চিরলে পীতবর্ণ আঠা (ক্ষীর) বেরোয়। এই বীজ বৃদ্ধদারকের বীজ ব’লে নকল চলছে।
পরশপিপুল-এর অন্যান্য নাম:
পারীশ বা পারীষকে সংস্কৃতে গর্দভাণ্ড, কপীতন; হিন্দীতে পারস-পিপল, গজদন্ত, পেরুষভেণ্ডি, পোরাশ, পারেশ-পিপল, পরাশ-পিপল ; বাংলায় দুম্বলা, পারীশ বলে এবং মেদিনীপুরের অঞ্চল বিশেষে এটি হাবল, হাবলি, হাউল, হাউলী নামে পরিচিত। প্রচলিত নাম পরশপিপুল।
এর বোটানিক্যাল নাম Thespesia populnea Soland.ex Correa, ফ্যামিলী— Malvaceae. সমগ্র পৃথিবীতে এই গণের ৫টি প্রজাতি আছে। প্রায় সবকটিই ভারতে পাওয়া যায়। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ:- ফল, ফুল, পাতা, বীজ, মূল, ছাল ও অন্তঃকাষ্ঠ। কাঠ খুব শক্ত, ভেতরের কাঠ ঈষৎ বেগুনে নীল ও সুগন্ধযুক্ত। এই গাছের কাঠ মূল্যবান, নানাবিধ সাজ-সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, যানবাহনের অংশ বিশেষ তৈরীর কাজে লাগে। কাঠ শক্ত ও মসৃণ।
বিস্তৃতি:
সাধারণতঃ ভারতের সর্বত্র এই গাছটি জন্মে, তবে পাহাড়ী অঞ্চলে এটিকে দেখা যায় না। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। ছায়াদার ও সৌন্দর্যবর্ধক বৃক্ষ হিসেবে রাস্তার ধারে লাগানো হয়ে থাকে। বীজ অথবা ডাল থেকে গাছ হয়। সমুদ্র অঞ্চলের খাড়ী বা নোনা জমি এই গাছের অনুকূল ক্ষেত্র, লাগানোর পর বিনা তদারকিতেও গাছটি দ্রুত বেড়ে ওঠে।
পরশপিপুল-এর ব্যবহার্য অংশ:
পাতা: সন্ধির ফোলায় পাতা বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে উপশম হয়। পরশপিপুল এর পাতার বোঁটা ভাঙ্গলে যে আঠা বেরোয়, তা বিষাক্ত কীট দংশনের যন্ত্রণা নিবারক।
ফুল: ফুলের পুংকেশর মিছরীসহ সেবনে প্রমেহ নিবৃত্ত হয়। ফুলের বোঁটা ভাঙ্গলে যে আঠা বেরোয়, তা পোকা-মাকড়ের কামড়ে ব্যবহার্য। পাঁচড়া ও দাদ জাতীয় চর্মরোগে হিতকর।
ফল: টাটকা ফল শিরঃশূলে মাথায় প্রলেপ, ফলের রস অর্শের বলিতে লাগানো হয়। দাদে হিতকর। কাঁচা ফল মিছরী বা গুড় সহ বড়ি তৈরী করে ব্যবহার করলে আমাশয়, সংগ্রহ গ্রহণী ও অর্শরোগে উপশম হয়। ফল পুড়িয়ে ছাই করে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দাদ, চুলকানিতে ব্যবহার্য।
বীজ: বিরেচক। বীজের তেল চামড়ার রোগে উপযোগী।
মূল ও ছাল: সন্ধিবাত, রক্তবিকার, চর্মরোগ, রক্তাশ, অতিসার প্রভৃতিতে ব্যবহার্য। রসায়ন, সংকোচক। ছালের ক্বাথ দিয়ে পাঁচড়া ধোওয়া হয়ে থাকে।
অন্তঃকাষ্ঠ: পিত্তরোগ, উদরশূল ও বুকের স্নায়ুজনিত শূলে ব্যবহার্য।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ২২৪-২২৫।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। অনেক গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো রক্ষ্যা করবার জন্য গাছ চেনা জরুরি।