আচ বা ননী এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

মাঝারি ধরনের গাছ। কাণ্ড প্রায় সোজা। পাতা চওড়া ও ডিম্বাকৃতি, লম্বা ৫-৮ ইঞ্চি এবং চওড়ায় ৩-৪ ইঞ্চি, মুলা, বোঁটার দিকে সরু। পত্র উজ্জ্বল সবুজ, রোমহীন শাখা-প্রশাখা। প্রায় চতুষ্কোণ-বিশিষ্ট। ফুল সাদা, ইঞ্চিখানিক লম্বা, ৫টি পাপড়িবিশিষ্ট, অতিশয় সুগন্ধযুক্ত, দেখতেও সুন্দর। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল ও তারপরে ফল হয়। ফল পাকে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। ফল কাঁচায় সবুজ, পাকলে সাদা, ডিম্বাকৃতি, ভেতরে শাঁস থাকে। গাছের কচি পাতা দুর্ভিক্ষের সময় লোকে খায়। ফলও খাওয়া হয়। ফলের শাঁস মাথার চুল ধোওয়ার কাজে লাগে। ডালপালা-পাতা গরু-ছাগলে খায়। রেশমপোকার চাষের জন্য এবং ওদের বংশবৃদ্ধির জন্য এই পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আচ বা ননী-এর অন্যান্য নাম

একে বাংলায় আচ বা ননী, আচফুল, আচফুলের গাছ, আউশ গাছ, আউচ গাছ; হিন্দীতে আচ, আল; সংস্কৃতে আচ্ছক, রঞ্জনদ্র প্রভৃতি বলে। এটির বোটানিক্যাল নাম Morinda citrifolia Linn., এর একটি প্রজাতি আছে, সেটি হচ্ছে M. bracteata Roxb., আকারে ছোট, পশ্চিমবঙ্গেও জন্মে। এটির শিকড়ও M. citrifolia ও এই গণের অন্যান্য প্রজাতির শিকড়ের মত পূর্বে রঙ তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হতো।

এই গণের আর একটি প্রজাতি হচ্ছে Morinda coreia Buch.-Ham., পূর্বে এটির নাম ছিল M. tinctoria Roxb. কিছু কিছু উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মনে করেন যে, এটি M. citrifolia প্রজাতির বন্য ভেদ অথবা স্থান/জলবায়ু ভেদে অন্য রূপ। কারণ সাধারণতঃ একই নামে দু’টি পরিচিত এবং দুটির ব্যবহারও একই। M. tinctoria-এর একটি var. আছে, সেটি M. tormentosa Heyne ex Roth.নামে পরিচিত। এটিও ছোট গাছ, এর ফল লোকে খায়। ব্যবহারিক ক্ষেত্র একই। এই গণের আরও কয়েকটি প্রজাতি আছে, সেগুলির শিকড় রঙ প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হতো, তার মধ্যে কতকগুলি আবার ঔষধিগুণসম্পন্ন। এগুলি সবই Rubiaceae ফ্যামিলীভুক্ত।

ব্যবহার

পূর্বে ভারতের প্রায় সর্বত্র এটির চাষ করা হতো রঙের জন্য বর্তমানে কৃত্রিম উপায়ে রঙ প্রস্তুতের ফলে এ গাছের চাষ করার প্রয়োজনীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে। এটিকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা ও ভারতের যত্রতত্র পাওয়া যায়। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের যেখানে সেখানে অযত্নসম্ভত হয়েই জন্মে। গাছের ছাল কর্কের মতো, লম্বালম্বি কাটা কাটা, কাঠ হলদে বাদামী রঙের, শক্ত এবং ভারী, খেলনা ও আসবাবপত্র তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়। জ্বর, সর্দি, অরুচিতে ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয় শিকড়, পাতা ও ফল।

আরো পড়ুন:  তেলেঙ্গামাই দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ সবজি

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ১১১-১১৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prashant Awale

Leave a Comment

error: Content is protected !!