বিলাতি ধনিয়া সুগন্ধি, ভেষজ গুণে ভারা গুল্ম

বিলাতি ধনিয়া

বৈজ্ঞানিক নাম: Eryngium foetidum L., Sp. Pl. 1: 232 (1753). সমনাম: Eryngium antihystericum Rottler. ইংরেজি নাম: জানা নেই. স্থানীয় নাম: বিলাতী ধনিয়া।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. অবিন্যাসিত: Asterids. বর্গ: Apiales. পরিবার: Apiaceae. গণ: Eryngium প্রজাতি: Eryngium foetidum.

ভূমিকা: বিলাতি ধুনিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Eryngium foetidum) এ্যাপিয়াসিস গণের এ্যারিঙ্গাম পরিবারের একটি গুল্ম। এই প্রজাতিটি আবাদ করা হয়। অনেকে বাসায় টবে লাগায়।

বিলাতি ধনিয়া-এর বর্ণনা:

মূলীয় রোজেট থেকে ৮-৪০ সেমি দীর্ঘ গাছ । প্রধান মূল গুচ্ছমূল বিশিষ্ট মুলকাকার। কাণ্ড শাখাবিশিষ্ট, সবুজ। নিম্নাংশের পত্র বহু সংখ্যক, পত্রবৃন্ত খর্ব বা লুপ্তপ্রায়, আবরণ অনূর্ধ্ব ৩ সেমি লম্বা, ফলক বল্লমাকার বা বি-বল্লমাকার, ৩.৫-১৬.০ x ১.০–৩.৫ সেমি, নিম্নাংশ কীলকাকার থেকে পর্বলগ্ন, শীর্ষ স্থুলা, ক্যালোজ-প্রান্ত বিশিষ্ট, সভঙ্গ থেকে সূক্ষ্মভাবে কণ্টকযুক্ত-ক্রকচ, পক্ষ জালিকা শিরাবিন্যাস, উপরের পত্র অবৃন্তক, প্রতিমুখ, গভীরভাবে কণ্টকরোমীক্রকচ থেকে উপখন্ডিত।

পুষ্পবিন্যাস দূরাপসারীভাবে ত্রিখন্ডিত, পার্শ্ব শাখা সমূহ প্রায়শই একপার্শ্বীয় ভাবে প্রসারিত হয়, শীর্ষ বহুসংখ্যক, খর্ব পুষ্পদণ্ডী। পুষ্প শীর্ষ বেলনাকার, ৫-১২ x ৩-৫ মিমি, মঞ্জরীপত্র ৪-৭টি, পত্রাকার, বল্লমাকার, ১-৩ x ০.৪-১.০ সেমি, পরিব্যাপ্ত থেকে পশ্চাদমুখী বক্র, প্রান্ত ১-৩ কণ্টকরোমী-ক্রকচ। মঞ্জরীপত্রিকা বল্লমাকার, ১.০-১.৫ X প্রায় ০.৫ মিমি, উজ্জ্বলভাবে শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ প্রান্তবিশিষ্ট।

বৃতি দন্ত ডিম্বাকৃতি-বল্লমাকার, ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, সূক্ষ্মাগ্র, দলসমূহের সমান, বি-বল্লমাকার থেকে বিডিম্বাকার, গর্ভদণ্ড খাড়া, দলবৃন্ত বিশিষ্ট। গর্ভাশয় ডিম্বাকার, গর্ভদণ্ড খাড়া, প্রায় ১.১ মিমি লম্বা, অল্পভাবে বৃতি দন্ত অতিক্রম করে, সূত্রাকার, দূরাপসারী, মুণ্ডাকার গর্ভমুণ্ড বিশিষ্ট। ফল ডিম্বাকার-গোল, ১.০-১.৫ x ০.৫-০.৭ মিমি, গুটিকা দ্বারা আবৃত। ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৬ (Kumar and Subramaniam, 1986)

আবাসস্থল ও চাষাবাদ:

বিলাতি ধুনিয়া বনাঞ্চল বা বনাঞ্চলের কিনারা, ভেজা স্থান, রাস্তার কিনারা এবং আবাদকৃত। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল এপ্রিল থেকে জানুয়ারি মাস। এই প্রজাতি বীজ থেকে বংশ বিস্তার করে। বাগান বা জমিতে অন্যান্য সবজির সাথে চাষ করা যায়। কোন প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক ছাড়াই ফলন ভালো হয়। এছাড়া বাসার ছাদ, বেলকুনিতে টবে লাগালেও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে।

বিস্তৃতি:

বিলাতি ধনিয়া মধ্য আমেরিকার দেশজ। বর্তমানে এশিয়া থেকে চীন এবং চীন থেকে ইন্দোনেশিয়া, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকাতেও প্রবর্তিত এবং ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি ঢাকা ও টাঙ্গাইল জেলায় পাওয়া যায়।

ব্যবহার: পাতা কাঁচা অবস্থায় ভাতের সাথে খাওয়া হয় এবং সুপের সুগন্ধী দানে ব্যবহার করা হয় (Coriandrum sativu এর মত) এবং প্রজাতিটির ঔষধী গুরুত্ব রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বিলাতি ধনিয়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বিলাতি ধনিয়া সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি সংরক্ষণের জন্য চাষাবাদের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

তথ্যসূত্র ও টীকা:

১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ১৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krzysztof Ziarnek, Kenraiz

Leave a Comment

error: Content is protected !!