আলগা মুথা বহুবর্ষজীবী ভেষজ তৃণ

আলগা মুথা

বৈজ্ঞানিক নাম: Cyperus laxus Lamk, III. Gen. 1: 146 (1791) var. laxus. সমনাম : Cyperus diffusus Vahl (1806), Cyperus nigro-viridis Thw. (1864), Cyperus kurzii (non Clarke) Camus (1912). ইংরেজি নাম : জানা নেই ৷ স্থানীয় নাম : আলগা মুথা।
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Poales পরিবার: Cyperaceae. গণ: Cyperus. প্রজাতি: Cyperus laxus.

ভূমিকা: আলগা মুথা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cyperus laxus) প্রজাতিটির গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলে জন্মে। বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

আলগা মুথা-এর বর্ণনা:

বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, মোটামুটি গুচ্ছবদ্ধ, গ্রন্থিকন্দ গুঁড়িকন্দবৎ, গাঢ় বাদামী বর্ণের শঙ্কে আবৃত, মূল দৃঢ়, তৃণকান্ড গুচ্ছাকার, ৩০-৮০ সেমি × ২-৫ মিমি, ত্রিকোণাকৃতি, মসৃণ। পত্রফলক রৈখিক, ৮-৮৫ সেমি x ৩-২০ মিমি সম্পুর্ণ সূক্ষ্মাগ্র, মূলীয় অংশ খাঁজ যুক্ত, অপর অংশ চ্যাপটা, ৩ শিরাল, প্রান্ত ও শিরার উপরের অংশ অমসৃণ, নিচের অংশ হালকা সবুজ, উপর তৃণ-সবুজ, পত্রাবরণ ৪-১০ সেমি, ফিকে সবুজ থেকে মরিচা বা লালাভ-বাদামী, মঞ্জরী পত্রাবরণ ৪-১২টি, বিস্তৃত বা পশ্চাদমুখী বক্র, অসম, দীর্ঘতমটি ৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস যৌগ থেকে অতি যৌগ, ৬-২০ × ৭-৩০ সেমি, ঘন, ছড়ানো, সাধারণ আলগা, প্রাথমিক শাখা ১০- ২০ বা ততোধিক, ৩-২০ সেমি লম্বা, অসম, ছড়ানো, শক্ত, মসৃণ, গৌণ ও প্রগৌণ শাখা ০.৫-৪.০ সেমি, কুচবৎ। স্পাইকলেট অঙ্গুলিবৎ, ঘন বিন্যস্ত, ২-৯টি, ৩-১০ × ১.৫- ৩.০ মিমি, দীর্ঘায়ত, অর্ধ-বর্তুলাকার, রসস্ফীত-চাপা, মঞ্জরী অক্ষ সোজা, আংশিক দৃশ্যমান, স্থায়ী, সরু পক্ষল।

গুম ৬-২০টি প্রতি স্পাইকলেটে, ১.৫-২.০ × ১.৫-২.০ মিমি ডিম্বাকৃতি গোলাকার, স্থূলাগ্র, শস্য শুক ০.২-০.৫ মিমি, পার্শ্ব পাতলা, কোমল, ৭-১১ শিরাল, সবুজাভ, ফিকে লাল বা বাদামী আভাযুক্ত। কীল সূক্ষ্মাগ্র, সবুজাভ। পুংকেশর ৩ টি, পরাগধানী ০.৮-১.০ মিমি, রৈখিক দীর্ঘায়ত, যোজকের বৃদ্ধির ফলে ঠোটে পরিণত, শীর্ষ শক্ত রোমবৎ। গর্ভদন্ড অনুপস্থিত, গর্ভমুণ্ড ৩ টি, গুম থেকে বহির্মুখী। নাটলেট ১.২-১.৪ x ০.৭-০.৮ মিমি, উপবৃত্তাকার, ত্রিকোণাকার, গুমের চেয়ে সামান্য দীর্ঘতর। কালো-বাদামী, সামান্য ডোরাযুক্ত। ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ৩৮ (Kumar and Subramaniam, 1986)।

আরো পড়ুন:  সোরা আলু দক্ষিণ পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মানো বিরুৎ

আবাসস্থল ও চাষাবাদ:

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় জন্মে। শুষ্ক ভূমি, সেঁতসেঁতে অরণ্য এবং কাটা বাঁশ ঝাড়। ফুল ও ফল সারাবছর ব্যাপী হয়। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি:

ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব চীন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, সলোমোন, দ্বীপপুঞ্জ। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে।

ব্যবহার:

পতিত জমির আগাছা হিসাবে জন্মে। ভূমিক্ষয় রোধে উপকারী। মিনডানাওয়ের অধিবাসীরা ঠোটের অসুখে মূল ব্যবহার করে (Kern, 1974), মূল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয় (Kunkel, 1984)

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আলগা মুথা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে আলগা মুথা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি বর্তমানে সংরক্ষণের প্রযোজন নেই।

তথ্যসূত্র ও টীকা:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ২০৬-২০৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি powo.science.kew.org থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Jonathan Amith

Leave a Comment

error: Content is protected !!