অ্যাঞ্জেলিকা গণের তিনটি প্রজাতির বিবরণ এখানে দেওয়া হলও। এই প্রজাতিগুলো পাহাড়ি ও শীতাঞ্চলে জন্মে। প্রত্যেকটির ভেষজ গুণাগুণ আছে। আদিবাসী ও অয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়েছে।
অ্যাঞ্জেলিকা গণের প্রজাতিগুলো:
১. চণ্ডা/গ্রন্থিপর্ণ/গেঁটেলা: Angelica archangelica Linn. Var. himalaica (C.B. Clarke) Krishna & Badhwar. এই প্রজাতিটি কাশ্মীর থেকে সিকিম পর্যন্ত হিমালয়ের বিভিন্ন স্থানে ৩ থেকে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় সাধারণত জলের নালা বা স্রোতের সংলগ্ন স্থানে জন্মে। গাছের কাণ্ড সোজা, সাধারণত ৫ থেকে ১০ ফুট লম্বা। গাছ ও মূল সুগন্ধযুক্ত। পাতা আয়তাকার, লম্বায় ১ ফুট, ২-৩টি পাখির পালকের ন্যায় আকার বিশিষ্ট। ফুল সাদা, গুচ্ছকারে হয়। বীজও সুগন্ধযুক্ত।
সমগ্র গাছ, বীজ ও মূল গন্ধদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূল ও বীজ থেকে তেল প্রস্তুত হয়। মূলের তেলে সুগন্ধ বেশি। মূল ও বীজ হালকা জীবাণুনাশক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং স্বাতন্ত্রের উপর কাজ করে। মূল বায়ুনাশক, হজমকারক, ঘর্ম ও প্রস্রাবকারক গুণ সম্পন্ন। ইউরোপে মদ্য এবং উৎকৃষ্ট গন্ধদ্রব্য প্রস্তুতের জন্য এর তেল ব্যবহৃত হয়। এর মূলে ৫ প্রকার furocoumarins পাওয়া যায়, যা শ্বেতী রোগের পক্ষে হিতকর।
অনেকে গ্রন্থিপর্ণকে নাগদমনী (Artemisia vulgaris) বা Polygonum aviculare Linn, বলে থাকেন। এ দুটি উদ্ভিদ সম্বন্ধে সামান্য তথ্য সংগ্রহ করলে বুঝতে পারবেন, এগুলির কোনটিকেই গ্রন্থিপর্ণ বা চণ্ডা বা গেঁটেলা বলা যাবে না। প্রথমটির মূল শক্ত কাষ্ঠবৎ, সুগন্ধযুক্ত নয়, দ্বিতীয়টির মূল কাষ্ঠবৎ, আঁশযুক্ত, সুগন্ধ নেই। এগুলি সমতলেও জন্মে।
২. চোরক/গ্রন্থিপর্ণ ভেদ/ গেঁটেলা ভেদ: Angelica glauca Edgew. পশ্চিম হিমালয়ের কাশ্মীর থেকে সিমলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে, হিমালয় প্রদেশ ও উত্তর দেশের স্থান বিশেষে এবং কাংড়া উপত্যকার উপর ধানলাধর পাহাড়ে সাধারণত ৬ থেকে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় সুগন্ধযুক্ত এই গাছটি জন্মে। ৪ থেকে ১০ ফুট লম্বা, কাণ্ড ফাঁপা, সোজা। পাতা ১ থেকে ৩টি উপপত্রবিশিষ্ট। ফুল সাদা, হলদে অথবা বেগুনি রঙের। ফুল একসঙ্গে ছত্রাকারে গুচ্ছবদ্ধভাবে হয় । মূল বাদামী-ধূসর রঙের, নরম, সুগন্ধযুক্ত, মধুর তিক্ত রসান্বিত ।
এই উদ্ভিদের সমস্ত অংশই বিভিন্ন প্রকারের রোগ নিরাময়ে সহায়ক। বিশেষত উপযুক্ত পুষ্টির অভাবে ক্ষয়জনিত রোগে, মেয়েদের প্রচুর রক্তস্রাবে, পৈত্তিক ও নানা রকমের পেটের গোলমালে উপকারী। এ ছাড়া গবাদি পশুর সংক্রামক মহামারী রোগেও চমৎকার কাজ করে। মূল উত্তেজক, হৃদয়ের বলবর্ধক, বায়ুনাশক, কফনিঃসারক, পেটফাঁপা-অজীর্ণ-কোষ্ঠবদ্ধতা-নিবারক, ঘর্মস্রাবকারক ও বমন নাশক । এর মূলেও কুমারিন পাওয়া যায়। চোরকের মূল আচার ও চাটনি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ এটিকে চোরপুষ্পী (Andropogon aciculatus Roxb.) বলেন! চোরপুষ্পীর গাছ সমতলভূমির যত্রতত্র দেখা যায়, তার মূলে বা কাণ্ডে কোন সুগন্ধ নেই ।
৩. স্থোণেয়ক/স্থৌণেয়/গ্রন্থিপর্ণভেদ/ গেঁটেলা ভেদ: Angelica sikkimensis (Clarke) P. K. Mukh. এই গণের আর একটি গাছ সিকিম অঞ্চলে ৩৭ হাজার ফুট উচ্চতায় পাওয়া যায়, এটিকে স্থৌণেয়ক বলা হয় । এর মূল ও গাছ সুগন্ধযুক্ত এবং ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয় । কারো কারো মতে Clerodendrum infortunatum -ই (ভাঁট/ ঘণ্টাকর্ণ) স্থৌণেয়ক। এটি যত্রতত্র জন্মে এবং এর মূল ও সমগ্র গাছ তিক্ত ও কটু গন্ধযুক্ত।
সিকিমের ১০–১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় Angelica গণের আর একটি প্রজাতি Angelica nubigena ( Clarke) P. K. Mukh. জন্মে। সেটিও গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ। তবে তাকে স্থৌণেয়ক বলা যাবে কিনা সেটা বিচার্য বিষয়। এই প্রজাতিগুলি বর্তমানে নামমাত্র পাওয়া যায় বললে অত্যুক্তি হয় না ।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৭৯-৮০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Lazaregagnidze
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।