খুবানি ফল ও শাঁস-এর সাতটি ঔষধি ব্যবহার

শুকনা খুবানি (Prunus armeniaca) ফল ও বীজের শাঁস রোগ প্রতিকারে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এর শাঁস বেশ সুস্বাদু, সেটাও ভেষজ কাজে ব্যবহৃত হয়।

খুবানি ফল ও শাঁস-এর ঔষধি ব্যবহার

১. পুরাতন অতিসারে: মাঝে মাঝে পাতলা দাস্ত হয়, তা না হলে প্রায় প্রত্যহ দু’তিন বার করে আড়-পাতলা দাস্ত হতেই থাকে, সেটা আবার দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, তখন সেক্ষেত্রে অনেক রকম রোগের সম্ভাবনা থেকে যায়। দীর্ঘদিন ধরে হজম ক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটলে, পেটে ক্রিমির উৎপাত হলে যেক্ষেত্রে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে শুকনো খুবানী ফল একটি কিংবা দু’টি জলে মসৃণ করে বেটে তার সঙ্গে আধ কাপ জল মিশিয়ে সেটিকে ভালভাবে ছেঁকে নিংড়ে নিয়ে সকালের দিকে একবার এবং বিকালের দিকে এইভাবে তৈরী করে আর একবার সপ্তাহখানিক খেলে উপকার প্রত্যক্ষ করবেন। প্রয়োজনে আরও কয়েকটা দিন খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

২. যকৃতের ক্রিয়াশৈথিল্যে: যকৃতের ক্রিয়াশৈথিল্য হলে নানা প্রকারের রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে, তন্মধ্যে প্রথমে যেটি নজরে আসে, সেটি হলো — খাদ্য পরিপাক শক্তি হ্রাস হওয়ার লক্ষণটি। তারপর ক্রমশঃ আমাশা, অম্ল, রক্তহীনতা প্রভৃতি হতে হতে ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এই অবস্থায় প্রথম থেকে সাবধান হলে পরবর্তীকালে বহু সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে উপরের পদ্ধতিতে খুবানী মাসখানিক খেলে উপকার হবে। তারপর সপ্তাহে এক বা দু’বার করে আরও কিছুদিন খেলে অসুবিধেটা দীর্ঘদিনের জন্য থাকবে না। এসময় লঘু ও সহজপাচ্য আহার গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। যেক্ষেত্রে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সেগুলির সম্ভাব্য চিকিৎসা এইসঙ্গে চলতে থাকবে।

৩. অপুষ্টিতে: মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশের এক বিশাল সংখ্যার শিশু অপুষ্টির শিকার। এসব ক্ষেত্রে শুকনো খুবানী ফল একটি করে দিনে ২ বার বেটে বা চিবিয়ে খেলে মাসখানিকের মধ্যে উপকার বুঝতে পারবেন। এরপরে আরও কিছু দিন একবার করে খেলেই হবে।

আরো পড়ুন:  কুকুরমুতা বা তাম্রচূড়া ভেষজ গুণসম্পন্ন গুল্ম

৪. হৃদ্দৌর্বল্যে: খাওয়া-দাওয়া খুব একটা খারাপ নয়, কোন প্রকার মানসিক অশান্তিও তেমনটা নেই, বয়স মাঝারি ধরনের, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু-আধটু মেদ জমছে অথবা মেদহীন শরীর, অথচ দুর্বলতা কখনো কখনো আসে, সেইসঙ্গে বুক ধড়ফড়, কফ কাসি নেই, প্রেসারটা প্রায় কমের দিকে থাকে, তখন সবচেয়ে ভাল হয়, যদি প্রত্যহ সকালে ও বিকালে দুটি করে শুকনো খুবানী ফল খাওয়া যায়। কয়েকদিনের মধ্যে উপকারটা বুঝতে পারবেন।

৫. শুক্রাল্পতায়: উত্তেজনা প্রায় ঠিক আছে, অথচ পূর্বের মত ক্ষয় হয় না বলে পরিসমাপ্তিতে বিষাদের সুর, এটা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন আসতে পারে, তেমনি ক্ষয় করার দুর্দমনীয় ইচ্ছা থেকেও হতে পারে। তখন উপরিউক্ত পদ্ধতিতে দুটি করে শুকনো খুবানী ফলের সরবত অথবা খালি মুখে চিবিয়ে দুবেলা খেলে মাসখানিকের মধ্যেই উপকার বুঝতে পারবেন। মাঝে মাঝে এটি খেয়ে রাখলে দীর্ঘকাল ধরে জীবন ও যৌবনকে আয়ত্তে রাখা যেতে পারে।

৬. হৃৎশূলে: রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা, রক্তচাপ, শরীরে মেদ জমা প্রভৃতি কিছুই নেই, দোহারা চেহারা, মাঝারি বয়স, মাঝে মাঝে হৃদযন্ত্রে যন্ত্রণা হতে থাকে, সাধারণ পরিভাষায় ওটা আমাদের কাছে angina নামেই পরিচিত। এক্ষেত্রে যদি শুকনো খুবানী ফলের বীজের শাঁস দুটি করে দিনে ২ বার ভালভাবে চিবিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে মাসখানিকের মধ্যে উপকার পাবেন । একেবারে উপকার না পেলে আর খাবেন না।

৭. কামোত্তেজনা হ্রাসে: এক্ষেত্রে সর্বদা যে শুক্রাল্পতাই এর কারণ, তা নয়; নানা কারণ থাকতে পারে, তবে কোন প্রকার আঘাত বা অস্ত্রোপচারজনিত না হলে শুকনো খুবানী ফলের বীজের শাঁস দু’টি করে দিনে ২ বার কিছুদিন খেলে উত্তেজনা ফিরে আসে। অবশ্য বয়সের ভারে মিথুনদণ্ডের স্বাভাবিকতা নষ্ট হলে সেক্ষেত্রে করার বিশেষ কিছুই নেই।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১২০-১২১।

আরো পড়ুন:  ঘন্টাপারুল বা ঘন্টাপাটালি গাছ-এর নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণের বিবরণ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম:  Seema Bin Zeenat

Leave a Comment

error: Content is protected !!