চীনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা

চীনাবাদাম (Arachis hypogea) খাদ্য ও ভেষজ হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারি। ব্যবহারের পূর্বে একটা দিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা উচিৎ, সেটা হলো— হজমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে কিনা। এটি সহজে হজম হতে চায় না। শুকনো বাদাম ভিজিয়ে খাওয়া যায়, আবার ভেজেও খাওয়া চলে। শুকনো বাদাম ভেজে ওপরের খোসা বাদ দিয়ে সরবত তৈরী করেও খাওয়া যায়। কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কিভাবে চীনা বাদামকে ব্যবহার করা যেতে পারে, সেটাই এখন বলা হচ্ছে-

চীনাবাদাম-এর গুণাগুণ

১. স্নায়বিক দৌর্বল্যে: নানা কারণে এই দুর্বলতা এসে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ যৌবনের গণ্ডীটা পেরুবার পর থেকেই এটা স্বাভাবিকভাবেই আসে। নানা প্রকার রোগে ভোগার পরও আসে। এক্ষেত্রে অগ্নিবল বিচার করে যোগটি ব্যবহার করতে হবে। বালিতে ভাজা ছাড়ানো চীনাবাদাম ১০ গ্রাম নিয়ে ভালভাবে জলে বেটে তাতে কাপখানিক জল ও ২ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে সরবতের মতো করে প্রত্যহ সকালে ও বিকালে দু’বার খান। হজমে কোনো অসুবিধা হলে মাত্রা কমিয়ে খাওয়া আরম্ভ করুন। আর যদি কোন প্রকার অসুবিধা না হয়, তাহলে ঐভাবে সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে পারেন এবং জলের পরিবর্তে দুধও ব্যবহার করবেন। কিছুদিন খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।

২. শুক্রাল্পতায়: যেভাবেই হোক প্রচুর ক্ষয় হয়েছে, কিন্তু দেহ-মনে ভোগের বাসনা তীব্র অথচ ফলপ্রসূ হয় না। তখন ভাজা বাদামের (তেলে ভাজা নয়) সরবত দুধ দিয়ে তৈরী করে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে দিনে ২ যার করে কিছুদিন খাবেন। এর দ্বারা শরীরে পুষ্টি আসবে, শুক্রাল্পতা নষ্ট হবে এবং সেইসঙ্গে দেহ-মনে নতুন করে উন্মাদনার স্রোত বইবে। তবে তারুণ্যের জোয়ারে যাঁরা ভাসতে চান ভাসুন, কিন্তু বয়সটা যাঁদের ৪০ বা ৪৫-এর উপরে, তাঁরা একটু ভেবে-চিন্তে পা বাড়াবেন ।

৩. প্রসবাস্তিক দুর্বলতায় ও স্তন্যাল্পতায়: একটি বা দুটি সন্তান যাতে সুস্থ-সবল হতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা বিশেষ কর্তব্য। বিশেষতঃ প্রথম বাচ্চাটা হবার সময়ই ভুলটা হয়ে থাকে। প্রসবের পর দুর্বলতা থাকলে সেদিকে নজর দেওয়া এবং বাচ্চার বুকের দুধে কুলোচ্ছে কি কুলোচ্ছে না সেদিকে লক্ষ রাখা প্রসূতির প্রাথমিক কর্তব্য। প্রসবের ৮ থেকে ১০ দিন পর থেকে চীনা বাদামের সরবত দুধ অথবা জল দিয়ে প্রস্তুত করে ৫ থেকে ৬ মাস খেতে হবে। এর দ্বারা দুর্বলতা কমবে এবং স্তনে দুগ্ধ আসবে। হজমে বিঘ্ন ঘটলে এবং পেটে বায়ু জমলে অল্প অল্প ক’রে খাওয়া অভ্যেস করার সঙ্গে সঙ্গে একটু হজমকারক ঔষধও খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুন:  আগর পাহাড়ি অঞ্চলের চিরসবুজ ঔষধি বৃক্ষ

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১২৬-১২৭।

Leave a Comment

error: Content is protected !!