লিচু ফল-এর আটটি ভেষজ গুণাগুণ

লিচু ফল-এর অধিকাংশ স্থানে লিচি কিংবা লিচু বলা হয়। লিচুর খাদ্যাংশকে জেলির মত কিংবা সরবতের (Syrup) মত করে সংরক্ষণ করা যায়। এই যে লিচু আমরা খাই এটিই চীন দেশ থেকে আগত এবং এর বোটানিক্যাল নাম Litchi chinensis Sonn.

লিচু ফল-এর ভেষজ ব্যবহার

১. দুর্বলতায়: যেকোন প্রকার রোগভোগের পর, প্রসবের পর, গরমের দিনে অতিরিক্ত ঘোরাঘুরি করলে কিংবা অধিক মাত্রায় ঘর্মস্রাব হলে পর দুর্বলতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ৮। ১০টি লিচুর খোসা ও বীজ বাদ দিয়ে শাঁসগুলিকে অল্প লবণ সহযোগে দু’বেলা কয়েকদিন খেলে উপকার পাবেন। যে সময় লিচু পাওয়া যাবে না, সে সময় লিচু থেকে প্রস্তুত সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. অতিরিক্ত ক্লান্তিতে: রোদে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে কিংবা সামান্য পরিশ্রম করলে যদি ক্লান্তি আসে, তাহলে ৮ থেকে ১০টি লিচুর শাঁস ভালভাবে চটকে তাতে কাপ দেড়েক জল ও পরিমাণমত লবণ মিশিয়ে সরবত বানিয়ে তৎক্ষণাৎ খেলে কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লান্তি চলে যায়। অবশ্য ক্লান্তিটা অধিক হলে দিনে ২ বার হিসেবে দু’এক দিন এটির ব্যবহার করা উচিত। অন্য কোনো রোগের কারণে ঘন ঘন ক্লান্তি এলে ঐ রোগের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এটিও ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. অপুষ্টিতে: সাধারণতঃ শিশুরাই এর শিকার হয়ে পড়ে, অবশ্য বয়স্করা যে একেবারে হন না, তা নয়। এক্ষেত্রে দু’এক বছরের শিশুকে দু’টি করে লিচু দিনে দুবার খাওয়ালে মাস দুয়েকের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়। বয়স বাড়লে মাত্রাও বাড়বে। বয়স্কদের মাত্রা ৮। ১০টি করে লিচু দিনে ২ বার ব্যবহার্য।

৪. পিপাসায়: গরমের দিনের পিপাসায় লিচুর শাঁস দিয়ে প্রস্তুত সরবত খেলে ওটি আর থাকে না। তবে এই সরবতের সঙ্গে প্রয়োজনমত লবণ মিশিয়ে নিলে ভাল হয় । অবশ্য এই পিপাসা যদি ডায়াবিটিসের জন্য হয়ে থাকে, তবে এর দ্বারা কোন কাজ হবে না ।

আরো পড়ুন:  কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল এবং প্রধান বৃক্ষ

৫. মস্তিষ্কের দুর্বলতায়: মনে থাকছে না, সর্বদা একটু ভুলো ভুলো মন, কোন ভাবনা-চিন্তা করতে গেলেই অস্বস্তি, সেক্ষেত্রে ৮। ১০টি করে লিচু দিনে ২ বার লবণ সহযোগে খেলে দুর্বলতা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

৬. হৃদ্দৌর্বল্যে: সামান্য পরিশ্রমে বুক ধড়ফড় করে, দুর্বলতা আসে, তখন কোনকিছুই ভাল লাগে না; কেবল মনে হয়— একটু শুয়ে পড়লেই যেন বেঁচে যাই। এমতাবস্থায় ৮ । ১০টি করে লিচু দিনে ২ বার করে কিছুদিন খেলে দুর্বলতাটা ধীরে ধীরে কাটবে।

৭. যকৃতের ক্রিয়াহ্রাসে: এক্ষেত্রে ক্ষুধা ঠিকমত হয় না, দাস্ত অপরিষ্কার, খাদ্যে অরুচি প্রভৃতি থেকেই থাকে। তখন দিনে ২ বার করে কিছুদিন লিচুর সরবত খেতে পারলে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।

৮. বার্ধক্য প্রতিরোধে: দুইবেলা লিচু খেলে, বেশি নয়, ৪। ৫টি করে দু’বার, বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে। বয়সটা বুড়িয়ে গেলেও শরীর ও মন তাজা থাকবে।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৪০-১৪১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!