সোনাপাতা বা কেতুরী হলদি (Curcuma angustifolia ) তিক্ত, মূত্রকারক, বিরেচক, অস্ত্রের কৃমি গতিবর্ধক, পিত্ত নিঃসারক; চর্মরোগ, বাতব্যাধি, উদরকৃমি, অর্শ, শোথ, মেহ প্রভৃতি নাশক; রসায়ন ও শুক্রবর্ধক।
লোকায়তিক ব্যবহার
১. কোষ্ঠবদ্ধতায়: নানা প্রকারের জ্বর, অজীর্ণ, অম্লপিত্ত, প্রদাহ, রাতব্যাধি প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রে কোষ্ঠবদ্ধতা এলে কিংবা যাঁরা সাধারণতঃ কোষ্ঠবদ্ধতায় ভোগেন, এসব ক্ষেত্রেই সোনাপাতা বা সোনাফল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মৃদু বিরেচক এবং পাতিকারক নয় বলে গর্ভিণী, প্রসূতা, বালক ও বৃদ্ধদের কোষ্ঠবদ্ধতায় যেমন ব্যবহার করা নিরাপদ, তেমনি অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের ক্ষেত্রেও। নিম্নলিখিত যোগগুলির যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন-
(ক) সোনাপাতা বা কেতুরী হলদি ৭ । ৮টি এক কাপ গরম জলে সন্ধ্যার সময় ভিজিয়ে ৩ । ৪ ঘণ্টা পরে ভালভাবে চটকে সেটিকে ছেঁকে নিয়ে রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার শেষে শোওয়ার সময় ওটিকে পান করবেন। ভয়ঙ্কর কোষ্ঠবদ্ধতা থাকলে ১০। ১২টি ফলও ব্যবহার করতে পারেন। এগুলি বয়স্কদের মাত্রার চেয়ে শিশুদের মাত্রা অর্ধেক অথবা কম।
(খ) সোনাপাতা ৩ । ৪ গ্রাম সন্ধ্যার সময় কাপ দেড়েক জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ আদ কাপ থাকতে নামিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। রাত্রে শোয়ার সময় ওটিকে ছেঁকে জলটি খেয়ে নিন। কোন কোন ক্ষেত্রে পেট-কামড়ানি দেখা দিলে সোনাপাতার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে মৌরী ও শুঁঠ (প্রত্যেকটি ২। ১ গ্রাম) থেঁতো করে মিশিয়ে সিদ্ধ করবেন। এই কাথটিকে রাত্রে তৈরী করে পরদিন সকালেও খেতে হবে। তবে তখন দু’একটি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। কারণ এই ক্বাথটি খাওয়ার ৩। ৪ ঘণ্টা পরেই সাধারণতঃ দাস্তের বেগ আসে। যদি সকাল সকাল কোন কাজে বেরুবার প্রয়োজন হয়, তখন বেকায়দায় পড়তে হবে। যাঁদের কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই, তাঁরা সকালের দিকে খাবেন। অফিসযাত্রীদের ক্ষেত্রে রাত্রে খাওয়া ভাল, নতুবা খুব ভোরে। ভোরের দিকে খেলে যদি পেট-কামড়ানি হয়, তখনও কাজের ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে আর একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনে পাতার মাত্রা ৫ গ্রাম পর্যন্ত করলে ক্ষতি নেই এবং এটি বয়স্কদের মাত্রা।
(গ) সোনাপাতা ৫। ৭ গ্রাম, মৌরী ৩। ৪ গ্রাম ও শুঁঠ ২ গ্রাম একত্রে চূর্ণ ক’রে দুপুরের দিকে কাপখানিক গরম জলে ভিজিয়ে রেখে রাত্রে শোয়ার সময় ছেঁকে খেতে পারেন। অবশ্য এই যোগটির সঙ্গে গ্রাম দু’ই যষ্টিমধু মিশিয়ে নিলে আরও ভাল কাজ পাবেন। এটিও বড়দের মাত্রা। এ যোগটি গর্ভিণী ও প্রসূতাদের পক্ষে অত্যধিক নিরাপদ বিরেচক।
২. অস্ত্রের ক্রিমি গতির হ্রাসে: এর ফলে সবচেয়ে যে সমস্যাটা বিরাট আকার ধারণ করে, তা হলো—কোষ্ঠবদ্ধতা। মল গুটলে হয়ে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়মিত ডুস না দিলে উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে সোনাপাতা, মৌরী, শুঁঠ ও যষ্টিমধু ভিজানো জল উপরিউক্ত মাত্রায় ও পদ্ধতিতে তৈরী করে সেটির অর্ধেকটা সকালে খালিপেটে এবং বাকিটা সন্ধ্যার দিকে খেতে হবে। মাসখানিক লাগাতার ব্যবহার করার পর একদিন ছাড়া একদিন বেশ কিছুদিন ব্যবহার করতে হয়। স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে বুঝতে পারলে প্রত্যহ একবার করে খেলেই চলবে।
৩. ক্রিমিতে: ছোট (সুতো) অথবা বড় ক্রিমির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে হলে সোনাপাতা সিদ্ধ জল পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে সন্ধ্যার সময় তৈরী করে রাত্রে শোয়ার সময় সপ্তাহখানিক খেলে ক্রিমির উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবেন। তবে উপকার না পেলে পাতার মাত্রা বাড়াতে হবে।
৪. স্তন্যপায়ী শিশুর কোষ্ঠবদ্ধতায়: এক্ষেত্রে শিশুকে কিছু খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। কোষ্ঠবদ্ধতায় ব্যবহার্য পূর্বোক্ত তিনটি যোগের যেকোন একটি মাকে খাওয়ালেই কাজ হবে। মায়ের দুধ শিশু খেলে শিশুর কোষ্ঠ সাফ হয়ে যাবে। তবে যে শিশু মাতৃদুগ্ধপানে বঞ্চিত, তাকে সামান্য মাত্রায় (১ চা-চামচ) ঐ ক্বাথ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
৫. যকৃতের ক্রিয়া হ্রাসে: এর ফলে ক্ষুধা ভাল হয় না, রক্তহীনতা দেখা দেয়; অম্ল, চোঁয়া ঢেকুর, কোষ্ঠবদ্ধতা প্রভৃতি আসে। এক্ষেত্রে সোনাপাতা, মৌরী, শুঁঠ ও যষ্টিমধু পূর্বোক্ত মাত্রায় নিয়ে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে কাপখানিক থাকতে নামিয়ে রাত্রে টাকা দিয়ে রাখতে হবে এবং পরদিন সকালে ছেঁকে অর্ধেকটা এবং বিকালের দিকে অনেকটা খেতে হবে। স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে বুঝতে পারলে একবার করেই খেলেই সমস্যার সমাধান হবে।
৬. অর্শে: দাস্ত পরিষ্কার হয় না, যখন-তখন রক্ত পড়ে, এক্ষেত্রে কোষ্ঠবদ্ধতার ক্ষেত্রে বর্ণিত তিনটি যোগের যেকোন একটি যোগ কিছুদিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
৭. দাদে: পাতা ও বীজ বেঁটে লাগালে কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২২৭-২২৯।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।