নীলকলমী দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ লতা

নীলকলমী ভারতের অধিকাংশ স্থানে কালাদানা নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে I. nil-এর বীজ কালাদানা হলেও বহু ক্ষেত্রে I. muricata, Crotalaria juncea, Acacia arabica, Peganum harmala, Ocimum basilicumClitoria ternatea প্রভৃতির বীজও কখনো আসলের সঙ্গে ভেজাল হিসেবে, কখনও কালাদানা নামে বাজারে আসে। অতএব চেনার সামান্য গোলমাল হলেই বিপদ।

নীলকলমী-এর পরিচিতি

Convolvulaceae পরিবারের Ipomoea গণভুক্ত প্রায় ৫০টি প্রজাতি ভারতে জন্মে। তন্মধ্যে নীলকলমী বা Ipomoea nil (L.) Roth একটি। এই বর্ষজীবী শক্ত ডাঁটা বিহীন লতাটি ভারতের সমতল ভূমির প্রায় সর্বত্র, এমনকি ৬ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত হিমালয়ের বিভিন্নস্থানে জন্মে। ভারতের কোথাও কোথাও বাগানে সৌন্দর্যবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে লাগানো হয়। প্রকৃতপক্ষে এটি অযত্নসম্ভূত একটি লতা, সাধারণতঃ পতিত জমিতে জন্মে। এই লতাটির পাতা পর্যায়ক্রমে একটি একটি করে থাকে, গোলাকার, হৃৎপিণ্ডাকৃতি, তিনটি লতিযুক্ত। ফুল বেশ বড়, দেখতে প্রায় কলমী শাকের (I. aquatica) ফুলের মত, তবে হালকা অথবা গাঢ় নীল রঙের ও গোলাপী দাগযুক্ত। এই নীল ফুল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাল বর্ণের হয়। ফলগুলি প্রায় গোল অথবা ডিম্বাকৃতি, মসৃণ, তার ভেতরে ৪–৬টি বীজ আছে। বর্ষার শেষে ফুল ও শীতকালে ফল হয়। এই বীজগুলি কালাদানা হিসেবে বাজারে আসে। বীজ কোণবিশিষ্ট, কালো রঙের, খুবই ছোট, ১০০টি বীজ ওজন করলে মাত্র ৩–৪ গ্রাম হয়।

গুণপনা

বীজ স্বাদে প্রথমে মিষ্ট হলেও পরে তা অতিশয় কটু। সাধারণতঃ বিরেচক ঔষধ হিসেবে কালাদানার চূর্ণ (২–৪ গ্রাম মাত্রায়) অথবা সুরাসার ব্যবহৃত হয়। বীজে প্রচুর পরিমাণে resin থাকে এবং সেটিই বিরেচকধর্মী। তবে এই বীজ অধিক খেলে বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। Resin ব্যতীত এতে সামান্য পরিমাণে স্যাপোনিন, মিউসিলেজ ও ট্যানিন পাওয়া যায়। বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায়, তা হালকা হলুদ রঙ বিশিষ্ট ও দুর্গন্ধযুক্ত।

কালাদানা এককভাবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি অন্যান্য দ্রব্য সহযোগেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এটি কৃমিনাশক গুণ সম্পন্ন এবং কুষ্ঠ ও ক্ষয়কাসে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস স্নিগ্ধ গুণ-বিশিষ্ট।

আরো পড়ুন:  দেশী ছোট এলাচ বা মধুনিক্কন দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ বিরুৎ

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৮২-২৮৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি Useful Tropical Plants থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Quentin Groom

Leave a Comment

error: Content is protected !!