কার্ডানথেরা গণের দুটি প্রজাতি

কালা নামে প্রাপ্ত ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের দু’টি প্রজাতিকে নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোকপাত করা হবে। কার্ডানথেরা নামে গণে দু’টি গাছ হলো— Cardanthera uliginosa ( Nees) Buch.-Ham. ex Benth. এবং Cardanthera triflora Buch.-Ham. ex Benth. গাছ দু’টির পৃথক পৃথক পরিচিতি দেওয়া হয়েছে।

কার্ডানথেরা গণের দুটি প্রজাতির পরিচিতি

1. Cardanthera uliginosa (Nees) Buch.-Ham. ex Benth:Cardanthera এই গণটির অর্থ হলো—গ্রীক শব্দ Kardia মানে হার্ট বা হৃৎযন্ত্র, anthera মানে পরাগ (anther) অর্থাৎ এই গণভুক্ত গুল্মগুলির পরাগ হৃদযন্ত্রের আকার-বিশিষ্ট। প্রজাতিটির নামকরণের অর্থ হচ্ছে—গ্রীক শব্দ uliginosus মানে যা জলাভূমিতে/ জলাসন্নভূমিতে জন্মে, তা থেকে uliginosa সাধারণতঃ বর্ষার সময়ে গাছ জন্মে এবং শীতকালে ফুল ও ফল হয়। বর্ষজীবী নরম গুল্ম, প্রায় ফুট খানিক লম্বা, তলার দিক থেকেই শাখা-প্রশাখা জন্মে।

শাখা-প্রশাখা সামান্য লোমবিশিষ্ট। পাতা বিপরীতমুখী। গোড়ার দিকের পাতা আয়তাকার, লম্বা, অগ্রভাগ ক্রমশঃ সরু। বোঁটা প্রায় থাকে না বললেই চলে। পাতার ধার খাঁজকাটা অথবা সমান হয়। পুষ্পদণ্ডের পাতা ডিম্বাকৃতি বা হৃৎপিণ্ডাকৃতি, প্রায় দাঁতযুক্ত। পাতাগুলি লোমহীন অথবা লোমযুক্ত হয়। ফুল কাণ্ডের অগ্রভাগে লম্বা পুষ্পদণ্ডের খাঁজে খাঁজে ফোটে। পাপড়ি লোমযুক্ত, একটি অপরটির থেকে লম্বা, হলদে রঙের, ভেতরের দিকে বেগুনী রঙের ছোপ থাকে। বীজাধার ক্যাপসুল জাতীয়, কোমল এবং লোমযুক্ত, তাতে অনেক বীজ দেখা যায়।

এই প্রজাতিটি দক্ষিণ ভারতের আন্নামালাই অঞ্চলে, উত্তরবঙ্গে এবং ডুয়ার্সে প্রচুর জন্মে। তাছাড়া দক্ষিণ বঙ্গের কোথাও কোথাও ধানের জমিতেও দেখতে পাওয়া যায় । গাছগুলি সামান্য গন্ধযুক্ত।

2. Cardanthera triflora Buch.-Ham. ex Benth:বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় ভূতলশায়ী উদ্ভিদ। প্রায় ফুটখানিক লম্বা হতে দেখা যায়। কাণ্ডের গাঁট থেকে মূল বেরোয়। পাতা গোলাকার কিংবা ডিম্বাকৃতি। যে পাতাটি ডিম্বাকৃতি, সেটির বোঁটার দিকটা ক্রমশঃ সরু। সমস্ত পাতার অগ্রভাগ ভোঁতা, ধার খাঁজ-কাটা / দাঁতাল, রোমশ। কাণ্ডের তলার দিকের পাতা অধিক খাঁজ কাটা কাটা। ফুল একটি থেকে তিনটি পাতার কুক্ষিতে গোলাকার হয়ে গুচ্ছবদ্ধভাবে ফোটে। ফুলের বর্ণ হলদেটে সাদা। বীজাধার ক্যাপসুল জাতীয়, তার মধ্যে অনেক বীজ থাকে। এটিও সাধারণতঃ বর্ষায় জন্মে এবং শীতকালে ফুল ও ফল দান করে। বাংলা দেশের জলাসন্নভূমিতে, ধানের জমিতে, পুকুরের ধারে যত্রতত্র জন্মে । তাছাড়া আসামের বিভিন্ন জলাভূমির আশেপাশেও দেখা যায় ।

আরো পড়ুন:  ঢেঁড়স খাওয়ার নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৮৪-২৮৭।

Leave a Comment

error: Content is protected !!