কোষ্ঠবদ্ধতা বা কোষ্ঠকাঠিন্য মানুষের সচরাচর হয়ে থাকে। তবে এটা যদি দীর্ঘদিনের হয় তাহলে সেটি সাধারণ থাকে না। খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা সেই সমস্যার সমাধান করতে পারি।
কোষ্ঠবদ্ধতা বা কোষ্ঠকাঠিন্য সমাধানে ঘরোয়া উপায়
১. বাঁধাকপি: প্রায়ই কোষ্ঠবদ্ধতায় হতে থাকে, এক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম বাঁধাকপি কুচি কুচি করে কেটে তাতে অল্প লবণ মিশিয়ে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ কাপ খানিক থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, হালকা গরম- দরিম অবস্থায় সকালের দিকে একবার খাওয়া উচিত। তারপর সম্ভব হলে ঐ সিদ্ধ হওয়া রুপির টুকরোগুলোকে ফেলে না দিয়ে ফোড়ন সহযোগে ঘণ্টের মত তৈরি ক’রে দুপুরে ভাত অথবা রুটি অথবা যা খান, তার সঙ্গে খেলে আরও ভাল ফল তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে ।
২. বন শুলফা: যেক্ষেত্রে এটি স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে, সমস্যাটা সেখানেই। এই সমস্যা সমাধান করতে বনশুলফা ব্যবহার করতে পারেন। বন শুলফার ক্বাথ প্রত্যহ সকালে খালি পেটে লাগাতার ১০। ১৫ দিন খাওয়ার পর আরও কিছুদিন ২। ৩ দিন ছাড়া ছাড়া খেতে হবে।
৩. লেবু: এটি সাময়িক কিংবা দীর্ঘদিনের যেমনই হোক না কেনো, তেমনি কোন না কোন রোগের জন্যও আসাটা স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে সব সময় মনে রাখা দরকার যে, কোষ্ঠবদ্ধতাটা কিভাবে এসেছে তা জেনে নেবুর রসের মাত্রা ঠিক করতে হবে।
সাময়িকভাবে দু’চার দিন দেখা দিলে বা দীর্ঘ রোগভোগের পর শারীরিক দুর্বল অবস্থায় কিংবা গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠবদ্ধতা হলে প্রত্যহ সকালে খালি পেটে এক গ্লাস (আন্দাজ ২ কাপ হালকা গরম জলে) একটা পাতি বা কাগজী নেবুর রস নিংড়ে পর পর সপ্তাহখানিক খেলেই স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।
দীর্ঘদিনের কোষ্ঠবদ্ধতা হলে কিংবা অর্শ রোগীর বেলায় দেখা দিলে প্রত্যহ সকালে একসঙ্গে দু’টি পাতি লেবু-র রস উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বেশ কিছুদিন ব্যবহার করার পর (আন্দাজ মাসখানিক) আরও মাস দুই একটা করে নেবুর রস খেলে উপকার পাবেন । তবে এক্ষেত্রে এই যোগটি একেবারে বন্ধ না করে মাঝে মাঝে খেলে চলবে ।
৪. আলু ও শাক: নানা কারণে এটির শিকার হতে হয় প্রায় প্রত্যেককেই কখনো না কখনো। এর পাল্লায় জীবনে পড়েননি, একথা হলফ করে কেউ বলতে পারবেন বলে মনে হয় না। যাই হোক, কোন প্রকার রোগে ভোগার পর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে থাকলে এবং সেইসঙ্গে দুর্বলতা দেখা দিলে আলু ও আলু শাক কিভাবে ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন সেটা জেনে রাখা ভালো—
(১) আন্দাজ ১০০ গ্রাম করে আলু ভাতে দিয়ে নতুবা জলে সিদ্ধ করে তারপর ছাল ছাড়িয়ে পরিমাণমত লবণ মিশিয়ে দিনে দু’বার ভাত বা রুটির সঙ্গে কিংবা জলখাবারের সঙ্গে খেতে হবে ।
(২) আলু গাছের নরম নরম ডগা ও পাতা আন্দাজ ৫০ গ্রাম নিয়ে অল্প ভাপিয়ে জলটা নিংড়ে সেটিকে ভেজে অথবা আলু, বেগুন সহযোগে তরকারী রান্না ক’রে একবেলা কিংবা দু’বেলা খেতে হবে।
(৩) মসুর অথবা ছোলার ডালে কচি আলু শাক আন্দাজ ২৫। ৩০ গ্রাম দিয়ে রান্না করে পরিমাণমত ডাল খেতে হবে।
উপরিউক্ত পদ্ধতির যেকোন একটি একবেলা, প্রয়োজনে দু’বেলা কিছুদিন খাওয়া উচিত। উপকার বুঝতে পারলে তারপর নিয়মিত খাবারও প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন— যদি আলু খেলে অম্ল হতে থাকে অথবা অঙ্কুরিত আলু যাঁরা অম্লপিত্তে ভুগছেন, কিংবা যাঁদের মধুমেহ (ডায়াবিটিস) রয়েছে, তাঁরা কিন্তু আলু সিদ্ধ করে খাবেন না; সেক্ষেত্রে আলু গাছের ভাজা বা ডালে আলু গাছ দিয়ে খেতে পারেন।
৫. ইসবগুল: পুরাতন কোষ্ঠবদ্ধতা হলে ঈশবগুলের বীজ কিংবা ভূষি ৫–১০ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে এক কাপ ঠাণ্ডা অথবা হালকা গরম জলে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর তাতে ২। ৩ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে ভালভাবে গুলে সকালের দিকে খালি পেটে একবার এবং এভাবে রাত্রে শোয়ার সময় একবার কিছুদিন খেতে হবে। দাস্ত নিয়মিত হওয়া আরম্ভ হলে কেবল রাত্রের দিকে একবার খেলেই চলবে। এভাবে কিছুদিন (মাস দুই আন্দাজ) খাওয়ার পর এটিকে সপ্তাহে ২। ৩ দিন, আরও পরে একদিন ক’রে ব্যবহার করা উচিত। বীজ জলে ভেজানোর পূর্বে ঠাণ্ডা জলে একবার ধুয়ে নিলে ভাল হয়।
অম্লপিত্ত রোগজনিত কোষ্ঠবদ্ধতায় চিনি না ব্যবহার করাই শ্রেয়। রোগভোগকালীন কোষ্ঠবদ্ধতায় সারাদিনে ঈশবগুলের ভূষির সরবত ৩। ৪ বার খাওয়া যেতে পারে। প্রতিবারে জল কাপ দেড়েক, ভূষি ৩৫ গ্রাম, চিনি ৩। ৪ চা-চামচ নিয়ে সরবত বানাতে হবে। বীজ ও ভূষির মাত্রা অবস্থা বিশেষে কম-বেশি করে নিতে হয়। যাতে অধিক দাস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখি— ঈশবগুলের বীজ কিংবা ভূষির মত এত নির্দোষ দাস্ত পরিষ্কারক ঔষধ খুবই কম আছে, যা মানুষ অতি সহজে বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করতে পারে এবং যেকোন রোগে ভোগার সময় দাস্ত পরিষ্কার রাখার জন্য ব্যবহার করলে কোন প্রকার অসুবিধায় পড়তে হয় না ।
৬. মিষ্টি কুমড়া (Cucurbita maxima): ছোটবেলা থেকেই শাক-সবজি খাওয়ার প্রবণতা যাঁর নেই, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ্ঠবদ্ধতাও মাথা চাড়া দিতে থাকে। এর ফলস্বরূপ সারা জীবন দুর্ভোগ ভোগ করতে হয়। তখন কাঁচা অথবা পাকা কুমড়োর তরকারি উপরিউক্ত পদ্ধতিতে তৈরী ক’রে দু’একদিন অন্তর খাবেন। অবশ্যই ভাল থাকবেন ।
৭. হিং: তাওয়ায় সেঁকা অল্প পরিমাণে হিংকে একটু গরম জলে গুলি ধীরে ধীরে পান করলে গলাভাঙ্গা, পুরনো কাশি, সর্দি, মলরোধ বা কোষ্ঠবদ্ধতা, পার্শ্ব শূল প্রভৃতির প্রশমন হয়।
৮. নারকেল: পিত্ত-শ্নেমার ধাতু, বায়ুর জন্য দাস্ত পরিষ্কার হয় না; এক্ষেত্রে ঝুনা নারকেলের জল প্রত্যহ খালি পেটে এক বা দুই কাপ করে খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ অসুবিধেটা চলে যাবে।
৯. ফুটি বা বাঙ্গি: বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যা একটু আগেই বলেছি।
১০. কুল বা বরই: সাধারণত বাত পিত্তের ধাত, অবশ্য এদের কোষ্ঠবদ্ধতা বড় থাকে না, তবে যদি এদের সেটা আসতে থাকে, তখনই বুঝতে হবে অর্শ রোগ দরজার গোড়ায় এলো বলে; এক্ষেত্রে মিষ্টি পাকা কুলকে চটকে, খোসা ও বীজগুলো বাদ দিয়ে অথবা ছেঁকে, তার সঙ্গে অল্প জল মিশিয়ে ছেঁকে, কয়েকদিন খেতে হয়। এটাতে ঐ কোষ্ঠবদ্ধতা সেরে যায়। আর অর্শটা তখনকার মত থমকে দাঁড়িয়ে যায়। এখন প্রশ্ন, তখন যদি কাঁচা কুলের সময় না হয়? তা হলে শুকনো কুল ১৫ গ্রাম আন্দাজ নিয়ে ৩/৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে খোসা বীজ বাদ দিয়ে, অল্প লবণ বা চিনি মিশিয়ে খেলেও হবে, তবে সেটা অনুকল্পই হলো।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা
২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।