বড় থানকুনির বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica (Linn.) urban. আর ছোট থানকুনির বৈজ্ঞানিক নাম Centella japonica. দুটিরই পরিবার Apiaceae. দেখতে অনেকটা থানকুনির মতো। বড় পাতা ও ছোট পাতা ভেদে দুই প্রকারের থানকুনি এদেশে পাওয়া যায়; ছোট পাতার থানকুনি বা থ্যালকুড়ি কোচবিহার অঞ্চলে জন্মে; সেটিকে ঐ অঞ্চলে ক্ষুদে মানী বলে। ক্ষুদে মানী বা ছোট পাতার থানকুনি ‘আমাশায় ও পেটের দোষে’ বড় থানকুনির বা ঢোলা মানী থেকে বেশি উপকারি। (যদিও বলা যায় আমাতিসার কখনও প্রচলিত আমাশা শব্দের বাচ্য নয়)। নিম্নে থানকুনি পাতার লোকায়াতিক ব্যবহার বা ভেষজ গুণাগুণ বর্ণনা করা হলো। থানকুনি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
১. দেহের লাবণ্য ফিরে পেতে: থানকুনি পাতার রস ৫ থেকে ৬ চা চামচ একটু গরম করে ১ কাপ দুধের সঙ্গে একটু চিনি মিশিয়ে খেতে হয় তবে যাদের অম্বলরোগ আছে চিনি তাদের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। এটাতে দেহের লাবণ্য ও কান্তি ফিরে আসে। আয়ুর্বেদিক পরিভাষায় বলা হয় এটা রসায়ণগুণ সম্পন্ন।
২. কেশ পতনে: দেহের অপুষ্টির কারণে যাঁদের মাথার চুল উঠে যায়, উপরিউক্ত নিয়মে ব্যবহার করলে তাদেরও বিশেষ উপকার হয়।
৩. কৃশতায়: উক্ত পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে চেহারার পরিবর্তন হয়, একটু শাঁসে জলে লাগে।
৪. অস্বাভাবিক ঘাম হলে: যাঁদের বেশি ঘাম ও সে কারণে গায়ে দুর্গন্ধ হয়, সে ক্ষেত্রে উপরিউক্ত নিয়মে খেতে হবে। তবে একটু বেশি দিন খেতে হয়, এ সব ক্ষেত্রে দু এক দিন খেয়েই বাস্তবে মিলিয়ে নেওয়ার প্রবণতাটা কিন্তু সংযত করতে হয়।
৫. পেটের দোষে: শ্লেষ্মা বা কফ সংযুক্ত মল, বারে বারে যেতে হয়, ভাল পরিষ্কার হচ্ছে না, পেটে বায়ু, কোনো কোনো সময় মাথাটা ধরা; এ ক্ষেত্রে অল্প গরম করা থানকুনি পাতার রস ৩ থেকে ৪ চামচ সমান পরিমাণ গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। এটাতে উপকার নিশ্চয় হবে; তবে একটু সময় দিতে হবে।
৬. বিস্মরণে: মনে আজ আছে কাল নেই; ইচ্ছে করলেও মনে থাকছে না; এসব ক্ষেত্রে উত্তর বা পশ্চিম ভারতের বৈদ্যাকবৃন্দ এই থানকুনি রস ২ থেকে ৩ তোলা আধ কাপ দুধ ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে দিয়ে থাকেন। তবে বেশী টক, ঝাল, লবণ, ঘি, ডিম, তরকারী খাওয়ায় এর উপকার ঠিকভাবে পাওয়া যায় না।
৭. বাক স্ফুরণে: বাচ্চাদের কথা বলতে দেরী হচ্ছে, হয়তো পরিস্কার বলতে পারছে না, সে ক্ষেত্রে ১ চামচ করে থানকুনি পাতার রস গরম করে ঠান্ডা হলে ২০ থেকে ২৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে ঠান্ডা দুধের সঙ্গে কিছু দিন খাওয়ালে, ওই অসুবিধেটা চলে যাবে।
৮. ডাক হারা কোকিল: বসন্ত ফিরে যাচ্ছে অথচ সে নির্বাক, এ ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা খুব কুচি করে কেটে ছাতুর সঙ্গে খাওয়ান; ও ডাকতে শুরু করবে।
৯. অনিয়মিত ঋতু দোষে: থানকুনি পাতার রস কিছুদিন খেলে ওটা স্বাভাবিক হবে। অবশ্য মেদস্বিনীর ক্ষেত্রে নয়।
১০. দূষিত ক্ষতে: মূলসহ গাছ নিয়ে সিদ্ধ করে সেই জলে ধুলে কিংবা ঐ সমগ্র গাছটি শিলে পিষে নিয়ে সেটার সঙ্গে ঘি দিয়ে পাক করে সেটা ছেঁকে ঐ ঘি লাগালে উল্লেখযোগ্যভাবে ওটা কমে যাবে।
১১. পীনস রোগে: নাক বন্ধ এবং জ্যাবজ্যাবে, আর সর্দিও থাকে, প্রায়ই গন্ধ হয় যাদের তারা থানকুনির শিকড় ও ডাঁটার মিহি গুড়োর নস্যি নিলে ওটা কমে যাবে।
১২. সাধারণ ক্ষতে: সে যেখানেই হোক না কেনো, থানকুনি পাতাকে সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে ধুয়ে দিলে উপকার হবেই আর এই পাতার রস দিয়ে তৈরী করা ঘি লাগালে নিশ্চয়ই নিরাময় হয়।
১৩. মুখে ঘা: অনেক কারণেই হয়, তবে অম্লপিত্ত রোগে বেশি দিন ভুগতে থাকলে এটা প্রায়ই দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, তার সঙ্গে এই পাতাসিদ্ধ গারগোল (Gargle) করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।
১৪. জ্বর ও আমাশায়: এখানে আমাশায় মানে আমাতিসার এবং জ্বর দুটাই হয়েছে। সাধারণত এটা বাচ্চাদেরই বেশী দেখা যায় সে ক্ষেত্রে এই গাছের পাতার রস গরম করে ছেঁকে খাওয়াতে হবে।
১৫. আঘাতে: থেতলে গেলে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে সেখানে প্রলেপ দিলে ওটা সেরে যাবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২৪-২৭।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Shashidhara halady
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।