পরিচিতি: শ্বেত বলা বা শ্বেত বেড়েলা মালভেসি পরিবারের একটি গুল্ম। বলার প্রচলিত নাম বেড়েলা, হিন্দিতে বলে বরিয়ারা, বরিয়ার, বরিয়াল, খরেটী, খরৈটী, খিরৈটী। উড়িষ্যায়ও এটিকে বলা বলে। এরা বর্ষজীবী উপগুল্ম বা ক্ষুপ জাতীয় গাছ। বেড়েলা ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত উচু হতে দেখা যায়। ভারতের উষ্ণ এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের যন্ত্রতত্র হয়ে এই গাছ হয়ে থাকে। বর্ষার শুরুতে গাছ জন্মে, শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসের মধ্যে ফুল ও ফল হতে শুরু করে। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে বীজ পেকে পড়ে যায়। যেসব গাছে হলুদ ফুল হয়, তাদের বলা হয় পীত বেড়েলা বলে, আর যে গাছে সাদা ফুল হয় তাকে বলা হয় শ্বেত বেড়েলা বলে; অবশ্য এই সাদা ফুলের গাছ বেশি উচু হতে দেখা যায় না। তবে সাদা ফুলের গাছ যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না, যত্ন করে বাগানে লাগাতে হয়।
বর্তমানে বহু প্রজাতির বেড়েলা গাছ আমাদের নজরে আসে, এরা সকলেই একই গণভুক্ত, যে গাছের পাতা পশমময় অর্থাৎ ভেলভেটের মতো মসৃন এবং তার আকার হৃদযন্ত্রের মতো সেই বেড়েলা ঔষধ হিসাবে বেশি কার্যকর ও হৃদবলকারক। এটি বাঁকুড়া, বীরভূম, ময়ুরভঞ্জ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এর ফুল ও ফল ছোট। এটির বোটানিকাল নাম Sida Cordifolia Linn.ফ্যামিলি Malvaceae.
আরো দুই প্রকার হলুদ ফুলের বেড়েলা গাছ আমরা সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। সে গাছের পাতার ধার বা কিনারা করাতের মতো কাটা এবং আকারে বর্শাকৃতি হয়। এটির বোটানকাল নাম Sida rhombifolia Linn. ; এর আরেক প্রকার গাছ আছে, সেটার ফুল ঘিয়ে রঙের হয়। এর বোটানিকাল নাম Sida rhomboidea Roxb., এটিকে উপরিউক্ত গাছটির একটি ভিন্ন জাত বলা হয়। আরও একটি বেড়েলা গাছ আছে, সেটির ফুল সাদা হয়। এর বোটানিকাল নাম Sida Stipulata, এদের সকলেরই ফ্যামিলি Malvaceae.[১]
বিস্তৃতি: বাংলাদেশ, ভারত, অস্ট্রেনিয়া, নিউ গিনি, ফিলিপাইনসহ এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ পর্যন্ত এই গাছের বিস্তৃতি।
চাষ পদ্ধতি: এই গাছ চাষ করতে হয় না পতিত জমিতে হয়। তবে বীজ থেকে গাছ জন্মে। মে থেকে জুনে ফুল হয়। আগস্ট মাসে ফল পেকে পড়ে যায়।
আরো পড়ুন: বলা বা বেড়েলার এগারটি ভেষজ গুণাগুণ
ব্যবহার্য অংশ: ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয় মূল বা মূলসহ সমগ্র গাছ। এর মূলের রস ক্ষত সারাতে কার্যকর। মূলের ছাল চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা কেটে যায়।[২]
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা – ১৪৪।
২. শেখ সাদী; উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ২৮৮।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।