বকুল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী এলাকার বৃক্ষ

বকুল

বৈজ্ঞানিক নাম: Mimusops elengi L. বাংলা নাম: বকুল, বহুল, বুকাল, বাকুল, বাকাল। ইংরেজি নাম- Spanish cherry, Indian Medlar, and Bullet wood.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Magnoliophyta শ্রেণী: Magnoliopsida বর্গ: Ericales পরিবার: Sapotaceae গণ: Mimusops প্রজাতি: Mimusops elengi L

পরিচিতি:

বাংলা ভাষায় এদের নাম বকুল, বহুল, বুকাল, বাকুল, বাকাল। তবে বকুল নামেই বেশি পরিচিত। বকুলের আদি আবাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আন্দামান ও বার্মা। তবে বর্তমানে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী এলাকার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, বার্মা, ইন্দো-চীন, থাইল্যান্ড, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এলাকা জুড়ে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া, মালয়েশিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, নিউ ক্যালিডোনিয়া (ফ্রান্স), ভানুয়াতু, এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়াতে এই গাছ চাষ করা হয়।

বাংলায় ফুলের জন্যে পরিচিত এই গাছ। বকুলের অন্যান্য ব্যবহার বাংলায় তেমন নেই। এটি একটি অতি পরিচিত ফুল। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এ গাছ পাওয়া যায়। বাগানে ছায়া পাওয়ার জন্য সাধারণত বকুল গাছ লাগানো হয়ে থাকে। এটি মাঝারি আকারের গাছ এবং এর পাতাগুলি হয় ঢেউ খেলানো। ফুলগুলো খুব ছোট হয়। বড় জোর ১ সেঃ মিঃ। ফুলগুলো দেখতে ছোট ছোট তারার মতো হলুদাভ সাদা বা ক্রীম রঙের। এই ফুল রাত্রে ফোটে এবং সারাদিন ধরে টুপটাপ ঝরতে থাকে। ফুলগুলো যখন ফোটে তখন গাছের চেহারা হয় অন্যরকম। এবং মাটিতে যখন ঝরে পরে তার দৃশ্য নয়নাভিরাম। ভারি সুগন্ধী এই বকুল ফুল। শুকনো বকুল ফুলের সুগন্ধটা অনেকদিন থাকে তাই এই ফুলের মালা অনেকদিন ঘরে রেখে দেয়া যায়। ফুলে থাকে উদ্বায়ী তেল।

গাছের বিবরণ:

বকুল একটি চিরহরিৎ মধ্যম_বিরাট বৃক্ষ। এটি ১৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কচি কাণ্ড, বৃন্ত এবং বৃতিপৃষ্ঠ বিবর্ণ-রোমশ। এই বৃক্ষের পাতাগুলো ঘন-বিক্ষিপ্ত, মসৃণ, উজ্জ্বল-সবুজ, ডিম্বাকৃতি, হ্রস্ববৃন্তক, ঢেউ খেলানো, শীর্ষ ঈষত বর্ধিত, সুক্ষ্ম। পাতা আকারে ৫ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা এবং আড়াই থেকে ৬ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। এই গাছের ফল ডিম্বাকৃতি, প্রায় ১ ইঞ্চি দীর্ঘ, পাকা অবস্থায় হলুদ বর্ণের, একবীজীয়। এই ফল দরিদ্রের খাদ্য, তৈল জ্বালানি ও ছবি আঁকার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাকা ফল কোকিল পাপিয়া ও আরো বেশ কিছু পাখির খাদ্য। হাজার হাজার মাইল পথ পেরিয়ে বসন্তকালে এদেশে আসে যেসব পরিযায়ী কোকিল ও পাপিয়ারা, তাদের খাবার যোগান দেয় এই বকুল গাছ। মাঝারি আকারের এই গাছ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চলে জন্মে। বকুল ফুল, ফল, পাকা ফল, পাতা, গাছের ছাল, কাণ্ড, কাঠ সব কিছুই কাজে লাগে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে এর ব্যবহার রয়েছে।

আরো পড়ুন:  অর্জুন এশিয়ায় জন্মানো মহা উপকারি ঔষধি বৃক্ষ

আয়ুর্বেদিক ব্যবহার:

বকুল ফুল, ফল, পাতা, কাণ্ড দিয়ে বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ের নানারকম আয়ুর্বেদিক ব্যবহার রয়েছে। এটি হৃদযন্ত্রের অসুখ, জ্বর মাথা ব্যাথা ও শরীরের অন্যান্য ব্যথা এবং দাঁতের জন্য উপকারি।

আরো পড়ুন বকুল গাছের ঔষধি ব্যবহার ও উপকারিতা

অন্যান্য ব্যবহার:

ভারতে বকুলের ফুল দিয়ে তৈরি তরল, সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহারে প্রচলন রয়েছে। ফুল দিয়ে মালা গাথার প্রচলন অনেক পুরনো দিন থেকে চলে আসছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন এলাকার নারীরা এই ফুলের মালা চুলে পরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে।

  • বকুলের পাকা ফল খাওয়া যায়। মালয়’রা এই ফল সংরক্ষণ করে রাখে এবং আচার তৈরি করে।
  • অনেক এলাকায় গাছের কাণ্ড বা নরম ডাল দাঁত মাজার জন্যে ব্যবহার করা হয়।
  • গাছের কাঠ অনেক দামি আর দুষ্প্রাপ্য কাঠ। এছাড়া গাছের কাঠ অনেক শক্ত, কঠিন হয় কিন্তু খুব সহজে কাটা যায় আর খুব সুন্দর পালিশ করা যায়। এই কাঠের রঙ গাঢ় লাল। এই কাঠ ঘর-বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।

Mimusops গ্রিক শব্দ, অর্থ বনমানুষের মুখ। সম্ভবত ফুলের আকৃতির জন্যই এমন নামকরণ। elengi হলো বকুলের মালাবারীয় নাম।

সাহিত্যে বকুল:

বাংলা সাহিত্যে বকুলের কথা নানাভাবে এসেছে। কাজী ন জ রুল ইস লাম লিখেছেন, ‘বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল’, হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন, ”ভাল থেক ফুল মিষ্টি বকুল’, ময়মনসিংহ গীতিকায় আছে ‘গাঁথ গাঁথ সুন্দর কন্যা লো মালতীর মালা/ ঝইরা পড়ছে সোনার বকুল গো ঐ না গাছের তলা।’

Leave a Comment

error: Content is protected !!