এক দিনে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে এগারটি হিমালয়ী শকুন উদ্ধার

বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা থেকে এক দিনে এগারটি হিমালয়ী গৃধিনী বা হিমালয়ী গ্রিফন শকুন উদ্ধার হয়েছে। সবগুলো শকুনই স্থানীয় জনতার লোভ আর হিংসার শিকার হয়ে আহত এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনটির বাস্তবায়নে শিথিলতায় জনতার শাস্তি না হওয়ায় বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদ নয় এখনো নিরাপদ নয়। এরকম পরিস্থিতিতে গত ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ সারাদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা একে একে ১১ টি শকুন উদ্ধার করা হয়েছে।

সবগুলো শকুনকে উদ্ধারের পর স্থানীয় বন বিভাগের অফিসে নেয়া হয়। এই কাজে উদ্ধারকারীর প্রধান ভূমিকা পালন করেন আলোকচিত্রি ও প্রকৃতিপ্রেমি ফিরোজ আল-সাবাহ। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি সারাদিনে বিচিত্র রকমের লোকের সাথে কথা বলেন এবং মানুষগুলোকে বুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। 

এ বিষয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দায়িত্ববান ব্যাক্তিদের উদাসীনতা চরম’। তিনি লিখেছেন, ‘কোথাও তাদের বেধে রাখা হয়েছে, কোথাও পিটিয়ে মারা হয়েছে সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার মানুষের রসনা বিলাসের শিকারও হয়েছে এক দুর্ভাগ্য শকুন। শকুন খেতেও মানুষের বাধে না আজকাল। কিছু মানুষ আবার তাদের বিক্রি করার ধান্দাও করতে ছাড়েনি। এই সকল অমানুষ, মানুষরূপী পশুদের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে ১১টি গ্রিফন শকুন উদ্ধার করা গেছে। তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়া গেছে’।

ফিরোজ আল-সাবাহ এই কাজ করতে গিয়ে তিনি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্যা রেজাউল করিমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। উদ্ধারকৃত শকুনরা সেদিন পঞ্চগড় বনবিভাগের অফিসে রাখা হয়েছিল। সেগুলো ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ গাজীপুর সাফারিপার্কে পাঠানোর কথা ছিলো।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায় গত ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ সকালে পঞ্চগড় এর মীরগড় এলাকায় ৪০/৫০ টা শকুনের একটা দল দেখা যায়। তারা একে একে যেখানে সেখানে নামতে থাকে আর মানুষের হাতে ধরা পরতে থাকে। পাশের দেশে শীত বেড়ে যাওয়ায় তারা এখন আমাদের দেশে আসতে শুরু করেছে বাঁচার জন্য। উত্তরবঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে নিচে নামছে। তারা আমাদের অতিথি, পরিবেশের বন্ধু আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের রক্ষা করা, তাদের আশ্রয় দেয়া। অথচ বেশিরভাগ মানুষের প্রবণতা তাদের দেখলেই মারতে হবে।

আরো পড়ুন:  করতোয়া নদী বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

প্রকৃতিপ্রেমি ব্যক্তিরা শকুন নিয়ে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন তাদেরকে  শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বের হয়ে মাঠে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।  এছাড়াও তারা পঞ্চগড়ের বন্ধুদের কাছে অনুরোধ করেছেন কোথাও অসুস্থ শকুন দেখতে পেলে বা শকুন সংক্রান্ত কোনো খোঁজ পেলে থানায় বা বন বিভাগের অফিসে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। এই শকুন উদ্ধারের কাজে ফিরোজ আল-সাবাহকে সহযোগিতা করেন মেহেদী হাসান ও মির্জা মিকাইল আব্রার।

প্রথম প্রকাশ প্রাণকাকলিতে ২২ ডিসেম্বর ২০১৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!