আঠারোবাঁকি নদী বাংলাদেশের খুলনা, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার একটি নদী

আঠারোবাঁকি নদী (ইংরেজি: Atharobanki River) বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের খুলনা, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৫ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটি বাংলাদেশের কালিয়া, মোল্লাহাট, তেরখাদা, রূপসা ও খুলনা সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক আঠারোবাঁকি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ১।[১]

উৎপত্তি প্রবাহ: আঠারোবাঁকি নদী নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পাহাড়তলা ইউনিয়নে প্রবহমান মধুমতি নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী এবং রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ও নাইহাটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলার সদর উপজেলার ওয়ার্ড নং ২১-এ রূপসা (খুলনা) নদীতে পতিত হয়েছে।[১]

আঠারোবাঁকি নদীর গড় গভীরতা ৫ মিটার এবং নদী অববাহিকার আয়তন ২৫৮ বর্গকিলোমিটার। ফেব্রুয়ারি মাসে যখন সবচেয়ে কম প্রবাহ থাকে তখন পানি প্রবাহের পরিমাণ থাকে ৬০ ঘনমিটার/সেকেন্ড। তখন নদীর গভীরতা থাকে ৩ মিটার। আগস্ট মাসে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৭৫ ঘনমিটার/সেকেন্ড। তখনই পানির গভীরতা দাঁড়ায় ৬ মিটার।[২] 

পূর্বে নদীটি অনেক বড় নদী হিসেবে পরিচিত ছিলো। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে নদীটির উৎসমুখ শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে মধুমতির সংগে এই নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নদীটির প্রবাহের প্রকৃতি বারোমাসি। বর্ষাকালে দুকূল উপচে এই নদীর পানি প্লাবনভূমিতে প্রবাহিত হয়। সারাবছর নদীতে ছোটবড় নৌকা চলাচল করে। নদীটিতে জোয়ারভাটার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ভাটির দিকে রূপসা নদীর অংশে জোয়ারভাটার প্রভাব রয়েছে। এ নদী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃক নির্ধারিত চতুর্থ শ্রেণির নৌপথ।[১]

অন্যান্য তথ্য:  এই নদীর অববাহিকায় কোনো প্রকল্প নেই। এই নদী তীরের স্থাপনার মধ্যে আছে, সেনেরবাজার, আলিয়াপুরহাট, শেখপাড়া হাট, ছাগলদহ হাট, গাংনী বাজার, নাগরকান্দি বাজার এবং পাতলা হাট। এই নদীতে কোনো ব্যারাজ বা রেগুলেটর নেই। তবে উভয় তীরে গড়ে ১৯.৫ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে।

আরো পড়ুন:  কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের যশোর সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার একটি নদী

মন্তব্য: আঠারোবাঁকি নদী রূপসা জেলার আলাইপুর গ্রামের কাছে ফতেপুর মৌজায় ভৈরবের সাথে মিলিত হয়ে বাগেরহাটের দিকে ধাবিত হয়েছে। ‘আঠারোবাঁকি’র সাথে ঐতিহাসিক অনেক ঘটনা জড়িত। যেমন, সুলতানী আমলে ফতেপুর গ্রামে সম্ভবত একটি কেল্লা নির্মিত হয়েছিল। তাই এ কেল্লা ফতেপুর নামেও অভিহিত করা হয়। বাংলার সুবাদার ইসলাম খান (১৬০৮-১৬১৩) ও তার বাহিনী ‘আঠারোবাঁকি’ নদী পার হয়ে ভৈরব ‘আঠারোবাঁকি’ নদী সংগমস্থলে ভূষণার অধিপতি শত্রুজিতকে পরাজিত করেছিলেন। [২]

তথ্যসূত্র:

১. মানিক, মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ঢাকা, পৃ: ১৬-১৭।
২. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ১২৪-১২৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!