সুধীরলাল চক্রবর্তী বাংলা ভাষার সুরকার ও সঙ্গীতজ্ঞ। সুপণ্ডিত ও সংগীতরসিক পিতার পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাড়িতে উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসর বসতো। ফলে ছোটবেলা থেকে সংগীত শিক্ষার অনুপ্রেরণা লাভ করেন। সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আধুনিক, রাগপ্রধান, গজল, ঠুমরী প্রভৃতি গানে পারদর্শী এবং একজন সুদক্ষ সুরকার ছিলেন। ১৯৪৩-৪৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বেতারকেন্দ্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর গাওয়া ও সুরারোপিত বহু গ্রামোফোন রেকর্ড বের হয়েছে।
সুধীরলাল চক্রবর্তী ১৯১৬ সালে তৎকালীন ফরিদপুর জেলা এবং বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০ এপ্রিল ১৯৫২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কালেক্টর অফিসের কর্মী গঙ্গাধর চক্রবর্তী ছিলেন তাঁর পিতা। কৈশোরে কলকাতায় এসে তিনি তৎকালীন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর শিষ্য হিসেবে সংগীত চর্চা শুরু করেন। শাস্ত্রীয় সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি সুর রচনাতেও তাঁর যথেষ্ট উৎসাহ ছিলো। কলকাতায় তিনি পাঁচ বছর তালিম নেন।[১]
সুধীরলাল চক্রবর্তীর গান সম্পর্কে প্রতিবাদী ধারার গণসংগীত শিল্পী কবীর সুমন লিখেছেন,
সুধীরলালের সুরে পদাবলি কীর্তন হাতছানি দিলেও পল্লিসংগীতের কোনও আঙ্গিকের লেশমাত্রও ছিল না। এই দিক দিয়ে তিনি বরং বৈঠকি গানের ধারার শিল্পী। প্রধানত হারমোনিয়াম তবলা সহযোগেই তাঁর গান খোলে ভাল।… সূক্ষ্ম অলংকারসমৃদ্ধ আধুনিক সুর রচনায় কাজী নজরুল ইসলাম ও হিমাংশু দত্তর পর তিনিই শেষ সম্রাট।[২]
সুধীরলাল চক্রবর্তী ‘মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে/ মাকে মনে পড়ে আমার, মাকে মনে পড়ে’ গানটির সুরকার ও শিল্পী। এছাড়াও ‘আঁখি যদি ভোলে তবু মন কেন ভোলে না’, ‘এ জীবনে মোর যতকিছু ব্যাথা, যতকিছু পরাজয়’, ‘এ দুটি নয়ন পলকে হারায় যারে’, ‘ও তোর জীবনবীণা আপনি বাজে’, ‘কেন ডাকো পিয়া পিয়া, ওগো মন পাপিয়া, সারা নিশি জাগিয়া’, ‘খেলাঘর মোর ভেসে গেছে হায়, নয়নের যমুনায়’, ‘ভালোবেসেছিনু আলেয়ারে, চেয়েছিনু জোছনা কৃষ্ণারাতে’, রজনী গো যেও না চলে, এখনো যায়নি লগন’ প্রভৃতি গানে তিনি সুরারোপ করেছিলেন এবং গেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি পবিত্র মিত্র, প্রণব রায়, তারক ঘোষ, দেবেশ বাগচীর লেখা গানে গেয়েছিলেন। দ্বিসাম্প্রদায়িক কাজী নজরুলের বন্ধু, অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরকার ও শিল্পী, সেরা সঙ্গীত শিক্ষক এবং গীতা দত্ত, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, শ্যামল মিত্রের মত সেরা শিল্পী গড়ার কারিগর, সুধীরলাল চক্রবর্তী বাংলা আধুনিক ছিঁচকাঁদুনে গানের একজন খ্যাতিমান সুরকার ও গায়ক।
তথ্যসূত্র:
১. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ঢাকা, এপ্রিল, ২০০৩; পৃষ্ঠা-৪০৭-৮।
২. কবীর সুমন; সুমনামি, রবিবাসরীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, কলকাতা। ইউআরএল: http://my.anandabazar.com/content/রবিবাসরীয়-82
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।