বর্ণনা: এই প্রজাতির মাছের দেহ Puntius গণের অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় গভীর এবং চ্যাপ্টা। মুখ প্রান্তীয় , উর্ধ্বচোয়াল কিছুটা দীর্ঘতর। ঘাড়ের উপরের অংশ সামান্য অবতল। স্পর্শী অনুপস্থিত। পার্শ্বরেখা অসম্পূর্ণ এবং ৬ থেকে ১০ টি আঁইশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। পার্শ্ব সারিতে ২৪ থেকে ২৮ টি আঁইশ কিন্তু অনুপ্রস্থ সারিতে ১১ থেকে ১২টি আঁইশ বিদ্যমান; শ্রোণীপাখনার গোড়া থেকে পার্শ্বরেখা পর্যন্ত ৪ থেকে ৪.৫ সারি আঁইশ থাকে কিন্তু পৃষ্ঠপাখনার পূর্বে ৯ সারি আঁইশ বিদ্যমান। পৃষ্ঠপাখনার শেষোক্ত পাখনাদন্ডটি অশাখান্বিত ও অস্থিগঠিত যা পশ্চাৎ কিনারা বরাবর শক্ত দাঁতযুক্ত। পৃষ্ঠপাখনা পুচ্ছপাখনার গোড়া অপেক্ষা তুন্ড শীর্ষের অধিক নিকটে উৎপন্ন হয়।
বক্ষপাখনা তুন্ড ব্যাতীত মাথার দৈর্ঘ্যের সমান। শ্রোণীপাখনা পৃষ্ঠপাখনা ভিত্তির ঠিক নিচে থেকে শুরু হয়। এদের দেহ রুপালি বর্ণের তবে পৃষ্ঠভাগ কিছুটা কালো, আবার আঁইশগুলোর গোড়াও কালো হয়ে থাকে। একটা বড় কালো দাগ পায়ুপাখনার পশ্চাৎ অংশের ঠিক উপরে অবস্থিত। এদের মধ্যে প্রজনন ঋতুতে কিছু কিছু মাছের পার্শ্বদিকে লাল বা রক্তলাল বর্ণ ধারণ করে , কানকো থেকে উজ্জ্বল লাল বর্ণের। প্রতিফলন পাওয়া যায়, আবার পাখনাগুলো লালচে হয় এবং কয়েক সারি কালো বিন্দু বহন করে। একটা কালো ডোরা পৃষ্ঠপাখনার পাখনাদন্ডের মাঝ বরাবর অবস্থিত (Rahman , 2005 )।
স্বভাব ও আবাসস্থল: কাঞ্চন পুঁটি প্রজাতির মাছ বিভিন্ন পোকা, ক্রাস্টেশিয়ান, জলজ কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিজ উপাদান খায় (Shafi and Quddus, 1982)। এরা বিভিন্ন ডোবা, নদী, খাল-বিল, ঝিল, এবং পুকুরে বাস করে। বর্ষাকালে এদেরকে প্লাবন ভূমিতে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন প্রকার ডায়াটম, শৈবাল বা জলজ আগাছা খেয়ে বেঁচে থাকে । প্রজনন ঋতুতে মাছগুলির দেহ চমৎকার বর্ণ ধারণ করে। এবং এদের পার্শ্বদিকে লাল বা রক্তলাল বর্ণ দেখা যায় ।
বিস্তৃতি: পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। এই প্রজাতির মাছ সমগ্র পৃথিবী ব্যাপি পরিচিত এবং বর্তমানে মৎস্য চাষীদের নিকটও বেশ জনপ্রিয়। এটি বাংলাদেশের প্রায় সব মিঠাপানিতেই সচরাচর পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: কাঞ্চন পুঁটি প্রজাতিটি Puntius গণভূক্ত। প্রজাতিসমূহের মধ্যে অন্যতম শোভাবর্ধক মাছ এবং দেখতে খুবই চমৎকার। সম্ভবত মৎস্য চাষীদের নিকট Puntius গণভূক্ত প্রজাতিটিই সর্বাধিক পরিচিত ও জনপ্রিয় (Talwar and Jhingran, 1991)। বাংলাদেশে এটি জনপ্রিয় খাবার মাছ যা Puntius গণভূক্ত অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গে একত্রে চাষ ও বাজারজাত করা হয় ।
বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: কাঞ্চন পুঁটি মাছ জলজ উদ্ভিদ এবং তলদেশে বসবাসরত কাদার জীব খেয়ে আবাসস্থল পরিস্কার রাখতে সহায়তা করে ।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতির মাছ। এখনও হুমকির সম্মুখীন নয় । তবে বর্ষাকালে এদেরকে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় ।
মন্তব্য: এই প্রজাতির মাছ বেশ শিকারী প্রকৃতির এবং সহজেই অন্যান্য ছোট মাছের সঙ্গে একত্রে পালন করা যায় ( Talwar and Jhingran, 1991 )।
তথ্যসূত্র:
১.রোকনুজ্জামান, মোঃ (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ এবং অন্যান্য। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃ: ৯৫–৯৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।