থাই সরপুটি এশিয়ার দেশসমূহের বাণিজ্যিক মাছ

বাণিজ্যিক মাছ

থাই সরপুটি

বৈজ্ঞানিক নাম: Barbonymus gonionotus (Bleeker, 1853)  সমনাম: Barbus gonionotus Bleeker, 1850, Verh. Batav. Genootsch. Kunst. Wet., pp. 1-23; Barbus javanicus Natuurkd, 1855, Nat. Tijdschr. Neder. Indië, pp. 391-414. ইংরেজি নাম: Java Barb. স্থানীয় নাম: থাই সরপুটি, রাজপুটি। 
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস 
জগৎ: Animalia পর্ব: Chordata উপপর্ব: Vertebrata মহাশ্রেণী: Osteichthyes শ্রেণী: Actinopterygii বর্গ: Cypriniformes পরিবার: Cyprinidae গণ: Barbonymus প্রজাতি: Barbonymus gonionotus

বর্ণনা:  দেহ দৃঢ়ভাবে চাপা; পৃষ্ঠদেশ উঁচু এবং বাঁকা, মাঝে মাঝে পশ্চাৎ কপাল অবতল থাকে। মাথা ছোট; তৃভ সূচালো ও মুখ প্রান্তীয়। স্পর্শী খুব ক্ষুদ্র বা লুপ্তপ্রায়, বিশেষ করে উপরেরটি মাঝে মাঝে সম্পূর্ণ অদৃশ্য থাকে। পার্শ্বরেখা অঙ্গ সম্পূর্ণ তাজা মাছের দেহ রুপালি-সাদা বর্ণের, তবে মাঝে মাঝে সোনালি আভাও থাকে। পৃষ্ঠীয় এবং পুচ্ছপাখনা ধূসর থেকে ধূসর হলুদ বর্ণের; পায়ুপাখনা এবং শ্রোণীপাখনা হালকা কমলা রঙের এবং কিনারা লালচে হয়; বক্ষপাখনা ফ্যাকাসে হলুদ বা হালকা হলুদ বর্ণের হয়। মুখ চক্ষু প্রস্থের তুলনায় অনেক কম।

স্বভাব ও আবাসস্থল: থাই সরপুটি মাছ পানির উপরিভাগ এমনকি তলদেশ উভয়স্থানেই বাস করে, স্বাদু পানি থেকে স্বাদু পানিতেই এদের অভিপ্রায়ন ঘটে। এরা উদ্ভিজ বস্তু ( যেমন- লতাপাতা, আগাছা, Iported reptans এবং Hydrilla প্রভৃতি) এবং অমেরুদন্ডী প্রানী খায়। নদী, হ্রদ এবং অন্যান্য মিঠাপানির জলাশয়ে বাস করে। এরা নদী, স্রোতযুক্ত জলাধার, প্লাবনভূমি এবং বিশেষ সময়ে জলাধারের মধ্যম গভীরতা থেকে তলদেশ পর্যন্ত বাস করে। স্রোতযুক্ত জলাশয় অপেক্ষা স্থির পানির জলাশয়ই বেশি পছন্দ করে। অভিপ্রায়নকারী মাছ তবে দীর্ঘ দূরত্বে অভিপ্রায়ন করে না। এই মাছ বর্ষার শুরুতে যখন পানির উচ্চতা বাড়তে থাকে তখন নদীর উঁচু অংশের দিকে অভিপ্রায়ন করে বলে জানা যায়। যখনই এটি কোন উপনদী, খাল বা স্রোতযুক্ত জলাধার খুঁজে পায় তখনই কোন উঁচু স্থান, এমনকি প্লাবিত অঞ্চলের দিকেও সাঁতরায়। আবার বন্যার পানি যখন নেমে যায় তখন এরা পুণরায় নদী, খাল বা স্রোতযুক্ত জলাধারে ফিরে যায়।।

আরো পড়ুন:  থাই পাঙ্গাশ বাংলাদেশে আগ্রাসি প্রজাতির মাছ

বিস্তৃতিঃ এই প্রজাতির মাছ এশিয়া এবং সমগ্র মেকং অঞ্চল জুড়ে, বদ্বীপ থেকে শুরু করে থাইল্যান্ডের চিয়াং সং পর্যন্ত যেখানে লোনাপানি মিশ্রিত হয়েছে তার আশেপাশে পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: এই প্রজাতি ১৯৭০ সালে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। প্রথমে পোনামাছ চাষযোগ্য পুকুরে লালন-পালন করা হয় এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে বড় হলে হ্যাচারীতেই এদের প্রজনন ঘটে। এই মাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং ডোবা, মৌসুমী পুকুর এবং ধানক্ষেতে চাষের জন্য উপযুক্ত। এটি ৩ থেকে ৬ মাস চাষ করলে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের হয় এবং মাছ চাষী ও ক্রেতা উভয়ের কাছেই একই রকম সমাদর থাকে। সাধারণত তাজা মাছ বাজারজাত করা হয়, তবে বিশেষ । সময়ে অ্যাকুরিয়াম মাছ হিসেবে বিক্রি হয়। এই মাছ অনেক সময় অ্যাকুয়াকালচার (Aquaculture) এ কৃত্রিম বংশ বিস্তারের জন্য হরমোনের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি জলাশয়ের অতিরিক্ত আগাছা দমনে সহায়ক। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের মৎস্য চাষ পদ্ধতিতে B, Roniornofus প্রজাতি দেশীয় Puntius sarana প্রজাতির তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: থাই সরপুটি প্রজাতি জলজ পরিবেশে পোকামাকড়ের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পানির উপরিতল থেকে Algal blaxom দূর করতে সহায়তা করে। এরা জলজ পরিবেশের গলিত ও পচা খাবার খেয়ে পানি। বিশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। এই মাছ চাষ পদ্ধতি থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে জানা যায় নি। পক্ষান্তরে এটি বাংলাদেশের মৎস্যচাষ পদ্ধতিতে নিজেকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মন্তব্য: এই প্রজাতির প্রাকৃতিক মাছ নিজেরা বংশবিস্তার করতে পারে তবে তাদের বাস্তুসংস্থানিক প্রক্রিয়া অজানা।

তথ্যসূত্র:

১. এ কে আতাউর রহমান, গাউছিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৮–৪৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!