বর্ণনা: দেহ চাপা এবং লম্বা। পৃষ্ঠপাখনার পশ্চাতের পৃষ্ঠদেশ প্রায় সোজা। মাথা নরম ত্বক দ্বারা আবৃত। প্রায় প্রান্তীয় মুখ বিদ্যমান। সম্মুখ নাসারন্ধ্র সুস্পষ্টভাবে তুন্ডশীর্ষে অবস্থান করে। পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র একটা সরু প্রান্তযুক্ত। ২ জোড়া স্পর্শী বিদ্যমান, তন্মধ্যে ম্যাক্রিলার স্পর্শী সিমফাইসিসের উপরে অবস্থিত। চোয়ালের দাঁত পৃথক প্যাচে বিভক্ত। তবে তালুতে কোনো দাঁত থাকে না। ফুলকাপর্দা সামনের দিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত কিন্তু যোজক থেকে পৃথক। চর্বিযুক্ত পাখনা ছোট। পৃষ্ঠ এবং বক্ষপাখনায় শক্ত ও চ্যাপ্টা কাটা থাকে যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র। দাঁতযুক্ত। পৃষ্ঠভাগ সাদাটে-কালো কিন্তু উদরের উপরিভাগ রুপালি বর্ণের।
স্বভাব ও আবাসস্থল: থাই পাঙ্গাশ সর্বভূক প্রজাতির মাছ। সাধারণত ক্রাস্টেশিয়ান, বিভিন্ন প্রকার মাছ, পঁচা শাকসবজি প্রভৃতি খায়। বড় বড় নদীতে বাস করে। এরা অভিপ্রায়নকারী মাছ এবং বর্ষাকালে ডিম ছাড়ার জন্য নদীর উঁচু অংশের দিকে সাঁতরাতে থাকে।
বিস্তৃতি: থাই পাঙ্গাশ প্রজাতির মাছ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: P hypophthalmus প্রজাতিটি ১৯৯০ সালে প্রথম থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। তখন মৎস্য বিভাগের ২০ টি মাছের পোনা পালনের খামারে এই পরবর্তীতে এই মাছের পোনা চাষীদের মধ্যে বিতরন করা হয়। অতঃপর বেসরকারি মৎস্য খামারীরা এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। মৎস্য চাষীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অর্ধনিবিড় ও সনাতন উভয় পদ্ধতিতে এই মাছের চাষ শুরু করে।
নিবিড় পদ্ধতির মৎস্য খামারের অধিকাংশই ঢাকা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং ফেনীতে অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে ফেনীর রকমারী’ মৎস্য খামারে প্রতি হেক্টরে ১২০০০টি পোনা ছাড়ার পর হেক্টর প্রতি ১১ মেট্রিকটন পাঙ্গাস উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছিল। ২০০১ সালে নরসিংদীর একটি বেসরকারি মৎস্য খামারের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল হেক্টরে প্রতি ২৫ মেট্রিক টন। যদিও প্রতিটার গড় ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। বাজারে পাঙ্গাস মাছের চাহিদা অনেক বেশি, পরিমিত দামে বিক্রি হয় এবং এটি অ্যাকুয়াকালচারের জন্যও এদেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ মাছ হিসেবে বিবেচিত হয়। শেষ দশকে মৎস্য বিভাগ (DoF) এবং তৃতীয় মৎস্য প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্পের অধীনে প্লাবনভূমি এবং বিলে এই প্রজাতির পোনা ছাড়া হয়নি। এই মাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং বাংলাদেশের মৎস্য চাষীরা নিবিড় পদ্ধতিতে এটি চাষ করে থাকে। বাজারে টাটকা মাছ বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মাছের দাম সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ টাকা পড়ে।
বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: এটি পচা ও গন্ধযুক্ত প্রাণী এবং উদ্ভিজ উপাদান খেয়ে জলাশয়ের তলদেশ পরিস্কার রাখতে অবদান রাখে।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: এই প্রজাতিটি IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশে এটি বর্হিদেশীয় মাছ হিসেবে বিবেচ্য।
মন্তব্য: যদিও এই প্রজাতিটি আমাদের দেশে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অ্যাকুয়াকালচারে ব্যবহৃত হচ্ছে। তথাপি উন্মুক্ত জলাশয়ে এদের প্রাকৃতিক প্রজননের কোনো তথ্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। Pangasius নামটি স্থানীয় পাঙ্গাশ নাম থেকে এসেছে।
তথ্যসূত্র:
১. এ কে আতাউর রহমান, গাউছিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। in আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৬৫–১৬৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।