বর্ণনা: ভুঁই আমলা খাড়া সহবাসী, বর্ষজীবী বীরুৎ, প্রায় ৭০ সেমি উঁচু, শাখাসমূহ কোণাকার। পত্র সোপপত্রিক, উপপত্র ১.০-১.২ মিমি লম্বা, ভল্লাকার, শুস্ক ঝিল্লি সদৃশ, সূক্ষ্মাগ্র, বৃন্ত ক্ষুদ্র, পত্রফলক উপবৃত্তাকার-দীর্ঘায়ত থেকে উপবৃত্তাকারবিভল্লাকার, ৫-১২ x ২-৫ মিমি, শীর্ষ স্থূলাগ্র বা গোলাকার, মূলীয় অংশ সরু, ঝিল্লিযুক্ত, পার্শ্বীয় শিরা ৪-৭ জোড়া, অস্পষ্ট, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ, নিচের পৃষ্ঠ ফ্যাকাশে ও ধূসর। পুষ্প হলুদাভ, অসংখ্য, কাক্ষিক, পুংপুষ্প ১-৩টি, স্ত্রীপুষ্প একটি।
পুংপুষ্প: সবৃন্তক, বৃন্ত ১ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৬টি, অর্ধগোলাকার-বিডিম্বাকার ০.৫ x ০.৫ মিমি, গোলাকার, চাকতি গ্রন্থি ৬টি, গুটিকাকার, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড যুক্ত, পরাগধানী আনুভূমিক, অনুপ্রস্থ বিদারী।
স্ত্রীপুষ্প: বৃন্ত ১.৪- ১.৯ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৬টি, অসম, ১.০-১.৫ x ০.৪-০.৫ মিমি, দীর্ঘায়ত-বিভল্লাকার, গোলাকার, সাদা, চাকতি পাতলা, চ্যাপ্টা, অনিয়মিত ৬-১০ খন্ডিত, কিছু সংখ্যক গোলাকার দন্ত যুক্ত ও প্রশস্ত, কিছু ত্রিকোণাকার ও ২ খন্ডিত, অবশিষ্ট খন্ড রৈখিক, গভাশয় অর্ধগোলাকার, ব্যাস ১ মিমি, মসৃণ, গর্ভদন্ড ক্ষুদ্র, মুক্ত। ফল ত্রিকোণাকার-অর্ধগোলাকার, ১.৫-২.৫ মিমি ব্যাসযুক্ত, মসৃণ, সবুজ বা মরচে বর্ণযুক্ত। বীজ ১.০ x ০.৬ মিমি, পেছনে ৭-৮ অনুদৈর্ঘ্য খাঁজযুক্ত।
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার: ভুঁই আমলা আর্দ্র আবহাওয়ায় বেলে-এঁটেল মাটি। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে আগস্ট-অক্টোবর মাসে। বীজে বংশ বিস্তার ।
বিস্তৃতি: আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদিআরব ও ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: উদ্ভিদটি মুত্রবর্ধক রূপে গণোরিয়া ও মূত্র নালির অন্যান্য পীড়ায় ব্যবহার করা হয়। মূল জন্ডিস ও বিটপ আমাশয় উপকারী। পাতা দ্বারা তৈরি পুলটিস হাড়ভাঙ্গা ও ক্ষত রোগে ব্যবহার করা হয়, এর সাথে লবণ যোগ করা হলে চুলকানি রোগ সারে। তরলসিক্ত মূল ও পাতা ভাল টনিক ও মূত্রবর্ধক, দুগ্ধবৎ তরুক্ষীর ঘায়ে উপকারী। বাকল রেচক রূপে ব্যবহৃত (Kirtikar et al., 1935)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় জন্ডিস রোগে পাতার রস দধি সহযোগে গ্রহণ করে। তারা মূলের ক্বাথ মরিচের সাথে একত্র করে আমাশয় এবং কান্ডের ক্বাথ চাল ধোয়া পানির সাথে মিশ্রিত করে অতিরিক্ত রক্তস্রাবে ব্যবহার করে। সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায় উদ্ভিদের ক্বাথ গোলমরিচের সাথে একত্র করে জনন অঙ্গের পীড়ায় প্রয়োগ করে। বিচূর্ণ পাতা দ্বারা ঘানার আদিবাসীরা গনোরিয়া রোগের চিকিৎসা করে। হাইতির আদিবাসী সম্প্রদায় মূল ও পাতার ক্বাথ পাকস্থলীর ব্যথার ব্যবহার করে (Pal and Jain, 1998)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ভুঁই আমলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ভুঁই আমলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. রহমান, এম অলিউর (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৭৭-৪৭৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Sengai Podhuvan
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।