কলমি শাক অতি পরিচিত একটি শাক। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বাংলায় অনেকের প্রিয় ও পরিচিত শাক। এর ব্যাটানিক্যাল নাম Ipomoea reptans (Linn.). পরিবার Convolvulaceae. কলমি গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি শাকের নাম।
কলমির প্রতি ১০০ গ্রাম আহারোপযোগী শাকে ১০৭৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন আছে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আমিষ ১.৮ গ্রাম, শর্করা ৯.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি ০.৫৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৪২ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে ৪৬ কিলোক্যালরি। ভিটামিন-এ’র অভাবে আমাদের দেশে প্রতি বছর ৫ লাখ শিশু রাতকানায় আক্রান্ত হচ্ছে। একই কারণে প্রতিদিন গড়ে ১০০ এবং বছরে ৩০ হাজার শিশু একেবারেই অন্ধ হয়ে যায়। অথচ ক্যারোটিনসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি কলমিশাক খেলে এ জাতীয় রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। শিশুরা যেন পর্যাপ্ত বুকের দুধ পেতে পারে এজন্য মায়েদের কলমিশাক খাওয়া বাঞ্ছনীয়।[১]
উপকারিতা:
১. আফিংয়ের বিষক্রিয়ায়: ঢলে পড়েছে, হাতের কাছে কিছু নেই, কলমি শাকের রস করে অন্ততঃ এক ছটাক খেলে; শরীর স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
২. প্রথম বয়সের যৌবনের চাঞ্চল্যের কু-অভ্যাসে শরীর হাড়-সার, ঘুমলেই ক্ষরণ, এর সঙ্গে মাথা ধরা, হাত-পা জ্বালা, অগ্নিমান্দ্য, মুখে জল আসা, পড়াশুনা মনে না থাকা ইত্যাদি এ ক্ষেত্রে কলমী শাকের রস ২ চা-চামচ, তার সঙ্গে অশ্বগন্ধা (Withania somnifera Dunal.) মূল চূণ ১ গ্রাম আন্দাজ মিশিয়ে খেতে হয়; অল্প দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো। এর দ্বারা তার যেসব উপসর্গ উপস্থিত হয়েছিল সেগুলি তো যাবেই, অধিকন্তু তার ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে যাবে।[২]
৩. কোলের শিশু রাত জাগে আর দিনে ঘুমোয়: অনেকের বিশ্বাস রাত্রিবেলায় জন্মালেই বুঝি এই হয়, তা ঠিক নয়; এর জন্য অনেক সময় দেখা যায় তার মল কঠিন হয়েছে এবং দুধে তোলে সে। এ ক্ষেত্রে অল্প গরম দুধের সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ ফোঁটা কলমী শাকের রস খাওয়ালে এই উপদ্রব চলে যাবে।
৪. বসন্তের প্রতিষেধক: বাড়িতে জল-বসন্ত কলে যেতে চায় না, এ ক্ষেত্রে কলমী শাকের রস ২ চা-চামচ একটু, গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রত্যহ সকলের খেলে ভালো হয়; এর দ্বারা অন্যান্যরা রক্ষা পেতে পারেন। এ ভিন্ন আশপাশের বাড়িতেও এটা খাওয়া উচিত।
৫. স্তন্যে দুধ বাড়তে: শিশু-পোষণের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুও দুধ নেই, এ ক্ষেত্রে কলমি শাকের রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ মাত্রায় একটু ঘিয়ে সাঁতলে খেতে হয়। সকালে ও বিকালে দু’বার খেলেই ভাল হয়। এটাতে দুধ বাড়বেই।
৬. গলারিয়ায়: জ্বালা-যন্ত্রণা, তার সঙ্গে পুজ পড়া, এ ক্ষেত্রে কলমী শাকের রস ৪ থেকে ৫ চা-চামচ অল্প ঘিয়ে সাঁতলে দুইবেলা খেতে হয়। এর দ্বারা কয়েকদিনের মধ্যেই এ জ্বালা-যন্ত্রণা ও পুঁজ পড়া বন্ধ হয়।
৭. ঠুনকো হলে: কলমি বেটে অল্প গরম করে স্তনে লাগাতে হয় এবং ঐ শাকের রস দিয়ে ধুতে হয়; এর দ্বারা বসা দুধ পাতলা হয়ে নিঃসরণের সুবিধা হয় এবং যন্ত্রণাও কমে যায়।
৮. হুলের জ্বালা: বোলতা, ভীমরুল, মৌমাছি প্রভৃতির হুল ফুটানোর জ্বালায় এই কলমি শাক বেটে লাগালে জালা কমে যায়। অগত্যা পক্ষে কলমীর ডগা ঘষে দিলেও উপকার হয়।
৯. নিমুখো ফোঁড়ায়: ভেতরে পুজ হয়েছে, বেরুতে পারছে না, বসে যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ঐ কলমীর শিকড় ও ডগা একসঙ্গে বেটে ফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিতে হয়; এর দ্বারা ফোঁড়ার মতো হয়ে যায়।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Hydrocarbons viz, pentairiacotane tiacontance. (b) Sterol, (c) Acids viz, melissic acid, behenie acid, butyric acid and myristic acid. (d) Essential oil=0.08%. (e) Diferent type of resin-7.27%,
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. নাহিদ বিন রফিক, শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ, তারিখহীন, কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), http://www.ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/১৪২৪/অগ্রহায়ণ/শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ
২. আয়ুবেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,৯।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।