ভূমিকা: লাউ বা কদু (বৈজ্ঞানিক নাম: Lagenaria siceraria) কিউকারবিটাসি পরিবারের লাগেনারিয়া গণের একটি বৃহৎ বর্ষজীবী সপুষ্পক বীরুৎ। এই সবজিটির আছে বহুবিধ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। আয়ুর্বেদ মতে, লাউ হচ্ছে মধুরস। লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এ ছাড়া শরীর ও মস্তিষ্ককে ঠাণ্ডা রাখে। তাই আমাদের বেশি করে লাউ খাওয়া প্রয়োজন।[১]
বৈজ্ঞানিক নাম: Lagenaria siceraria (Molina) Standl., Publ. Field Mus. Nat. Hist. Chicago, B. Ser. 3: 435 (1930). সমনাম: Cucurbita siceraria Molina (1782), Lagenaria vulgaris Seringe (1825). ইংরেজি নাম: Bottle Gourd, Club Gourd, Whiteflowered Gourd. স্থানীয় নাম: লাউ, কদু, পানি লাউ।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants শ্রেণী: Eudicots উপশ্রেণি: Rosids বর্গ: Cucurbitales পরিবার: Cucurbitaceae উপপরিবার: Cucurbitoideae গণ: Lagenaria প্রজাতি: Lagenaria siceraria (Molina) Standl..
বর্ণনা:
লাউ বা কদু গাছের কান্ড শাখান্বিত, খাঁজযুক্ত কৌণিক, রোমশ। আকর্ষ সূত্রাকার, রোমশ, -২ খন্ডিত। পত্র বৃন্ত ও পত্র ফলকের সংযোগ স্থলে ২টি দ্বিপার্শ্বিক ক্ষরণকারী গ্রন্থির উপস্থিতি এই উদ্ভিদটিকে কিউকারবিটেসি গোত্রের বাকি সব উদ্ভিদ থেকে পৃথক করা হয়েছে। পত্র ডিম্বাকার-তাম্বুলাকার বা বৃত্তাকার-ডিম্বাকার, ১০-৩৫ x ১০-৩৫ সেমি, অবিভক্ত বা ৩-৫ খন্ডিত, করতলাকার ৫-৭ শিরাল, প্রান্ত অনিয়মিত দপ্তর, গোড়ার অংশ তাম্বুলাকার, উভয় পৃষ্ঠ রোমশ, বৃন্ত ১০-২৫ সেমি লম্বা, পুরু, অর্ধবেলনাকার, প্রায়শই ফাঁকা, শীর্ষাংশ দ্বিগ্রন্থিল। উদ্ভিদ সহবাসী।[২]
পুংপুষ্প: মঞ্জরীদন্ড বৃন্তের অনুরূপ লম্বা, সরু, বৃতিনল ধুতুরাকার, ২ সেমি লম্বা, খন্ড ভল্লাকার, ৫ সেমি লম্বা, দলমন্ডল হলুদ বা সাদা, খন্ড ৩-৪ x ২-৩ সেমি, ঘন। ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, শীর্ষ মোটামুটি খাতাগ্র, ৫-শিরাল, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড ৩-৪ মিমি লম্বা, পরাগধানী চকচকে, ৮-১০ মিমি লম্বা।
স্ত্রী পুষ্প: মঞ্জরীদন্ড পুংপুষ্পের মঞ্জরী দন্ডাপেক্ষা ক্ষুদ্রতর, বৃতি ও দল মন্ডল পুংপুষ্পের বৃতি ও দল মন্ডলের অনুরূপ, গর্ভাশয় লম্বা ঘন রোমশ, গর্ভদন্ড পুরু, খাটো, গর্ভমুন্ড প্রসারিত, দ্বিখন্ডিত। ফল বিভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট, সবুজাভ হলুদ। বীজ ৭-২০ মিমি লম্বা, সাদা, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত থেকে ত্রিকোণাকার, শীর্ষ কর্তিতা বা ২টি দন্ডযুক্ত, কদাচিৎ গোলাকার। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সারাবর্ষ ব্যাপী, তবে ফেব্রুয়ারী-মে পর্যন্ত বেশি।
ক্রোমোসোম সংখ্যা হচ্ছে 2n = ২২ (Whitaker, 1930).।
বিস্তৃতি: আফ্রিকা, চীন, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। আদিনিবাস সম্ভবত আফ্রিকার উষ্ণাঞ্চল।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
কাচা ও অপরিপক্ক ফল সবজিরূপে খাওয়া হয়। পরিপক্ক ফলের খোসা থেকে বোতল, পাইপ, ফুঁদিয়ে হাওয়া ঢুকাইবার চোঙ্গা, নস্যের কৌটা ইত্যাদি তৈরি হয়, খোসা থেকে সঙ্গীতের যন্ত্রাদিও তৈরি করা হয়। ফলের রসালো অংশ বমনেদ্রককারী, রেচক, শীতলতা দায়ী ও মূত্রবর্ধক। বীজের তেল মাথা ব্যথায় উপকারী। লাউয়ের ভেষজ গুনাগুণ জানতে
আরো পড়ুন: লাউ বা কদুর ১৬টি ঔষধি গুনাগুণ ও পুষ্টি উপকারিতা
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
ভারতে ফলের রস দেশি ওষুধ রূপে অর্শ ও বাতরোগে ব্যবহার করা হয়। ভারতের জাতাপাস, কয়াস ও সাভারাস আদিসম্প্রদায় পোড়া ঘায়ে পাতার রস প্রয়োগ করে। বীজের তেল আফ্রিকায় রান্নার কাজে ব্যবহার করে।
চাষ পদ্ধতি:
লাউয়ের বংশ বিস্তার ঘটে বীজে। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়। এরা রৌদ্র করোজ্জ্বল মুক্ত এলাকা, সুনিষ্কাশিত PH ৬-৭ যুক্ত মাটিতে ভালো জন্মায়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে লাউ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র সংকেটর কারণ নেই এবং এটি বাংলাদেশের বর্তমান মান অবস্থায় আশংকা মুক্ত (lc)। এটি বাংলাদেশে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিষ্প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. নাহিদ বিন রফিক, শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ, তারিখহীন, কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), http://www.ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/১৪২৪/অগ্রহায়ণ/শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ
২. এম অলিউর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৭-৩১৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।