কদম বা বুল কদম বা বুল কদম্ব হচ্ছে রুবিয়াসি পরিবারের এন্থোসেফালুস গণের একটি মধ্যম বা বৃহৎ-আকৃতির সপুষ্পক বৃক্ষ। কদম গাছের পাতা, ফুল ও বাকলের এগারটি বহুমুখী ঔষধি ব্যবহার ও গুণাগুণ বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে।
উল্লেখ্য কদম গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম Neolamarckia cadamba) (ইংরেজি নাম burflower–tree, laran, Leichhardt pine) প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।[১] কদমের আছে অনেক আয়ুর্বেদিক ভেষজ গুনাগুণ যা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কদম এশিয়ার মধ্যম বা বৃহৎ আকৃতির সপুষ্পক নান্দনিক ভেষজ বৃক্ষ
আয়ুর্বেদিক ব্যবহার:
১. কোষবৃদ্ধিতে (Hydrocele): অনেকে কদমপাতা বেধে থাকেন। এর কারণ হচ্ছে যদি গাছের ছালকে বা ত্বক চন্দনের মতো বেটে কোষে লাগিয়ে তারপর কদমপাতা দিয়ে বাঁধা হয়, তাহলে ব্যথা ও ফোলা দুই-ই কমে যাবে।
২. শিশুদের কৃমিতে: অনেকে এই পাতার রস খাইয়ে থাকেন, কিন্তু বয়সানুপাতে মাত্রা বেশি হলে বমি হতে পারে, এ ক্ষেত্রে সব থেকে নিরাপদ পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে খাওয়ানো। ৪ থেকে ৫ বৎসরের শিশুদের ৩ গ্রেণ মাত্রায় সকালে একবার খাওয়ানো যায়; যদি না কমে তাহলে সকালে ও বিকালে ২ বার দিতে হবে। সপ্তাহ মধ্যে উপদ্রব কমে যাবে। এটায় প্রত্যহ মলের সঙ্গে কিছু কিছু বেরিয়েও যাবে, এমন-কি কেচো ক্রিমি বা গোল ক্রিমি (Round worm) ও সুতা কিমি (Thread worm) বের হবে।
প্রসঙ্গত জেনে রাখি ভালো-পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্রিমিনাশক ঔষধের দুটি ধারা আছে। একশ্রেণীর ঔষধ পোকাগুলোকে জীবনক্রিয়াকে স্তব্ধ করে (Metabolic poison) তাদের মৃত্যু ঘটায়; এদের বলা হয় ভারমিসাইডস (Vermicide)। এটির ব্যবহার কিন্তু সীমিত। আর এক শ্রেণীর ঔষধ যেগুলি ক্রিমি কীটের মত্যু না ঘটিয়ে কীটগুলিকে অসাড় করে, ওদের ক্রিয়া অনেকটা নারকোটিক ধরণের; এগুলিকে বলা হয় ভারমিফিউজেস (Vermifuges) । আমাদের কদমপাতা এক্ষেত্রে শেষোক্ত ধরণের কাজ করে।
৩. অর্বুদ বা টিউমার (Tumour): কচি ছাল চন্দনের মতো বেটে সহ্যমত গরম করে লাগালে কমে যেতে থাকে, ব্যথা থাকলে সেটাও সেরে যায়।
৪. মুখে দুর্গন্ধ: যাঁদের মুখে মাঝে মাঝে দুর্গন্ধ হয়, তাঁরা কদম ফুল কয়েকটা নিয়ে কুচিয়ে কেটে জলে সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে দিনে রাত্রে কুল্লি করলে অবশ্যই তা দূর হবে।
৫. ওয়াট সাহেবের বইতে লেখা- তদানীন্তন যুগের সার্জেন ডাঃ আনন্দমোহন মুখার্জি লিখছেন , শিশুদের মুখের ঘায়ে ও স্টোমাটাইটিসে (Stomatitis) কদমপাতা সিদ্ধ জলের কবল ধারণ (মখে রাখা) বা কুলকুচায় শীঘ্র সেরে যায়। এই গাছের ছাল জ্বরে ব্যবহার হয় এবং টনিকেরও কার্য করে, এ ভিন্ন বহু রোগের ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার করা হয়েছে।
৬. নেশার আশায়: আজকালকার কথা নয়, সেই বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের যুগ থেকে চলে আসছে। গাছের ছালে গর্ত করে শুকনো ছোলা ও লবঙ্গ পুরে রাখা হতো, পরদিন ছালগুলি কদমের রস টেনে ফুলে গেলে সেগুলি খাওয়া হত। এটাতে অল্প নেশাও হয় এবং বৈবশ্য (বিবশতা) সৃষ্টি করে। এখনও উড়িষ্যার গ্রামাঞ্চলে গাঁজার কলিগুলাকে কদম গাছের গায়ে পুতে রেখে পরের দিন যথানিয়মে সেবিত হয়ে থাকে। তাই তাকে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে সেকালের কোকেন।
চরক:
১. কদমের ছাল জ্বরনাশক ও বলকারক বা শক্তি বৃদ্ধি করে। ইহার ছালের চূর্ণ, অহিফেন ও ফিটকিরি সমপরিমাণে মিশিয়ে অক্ষিকোটরের চতুর্দিকে দিলে চক্ষুপ্রদাহ বা ব্যথায় আরাম হয় (Dymock)।
২. কদম পাতার ক্বাথ ক্ষতে ও মুখের ঘায়ে দিলে সেরে যায়।
৩. কদমের ত্বকের রস জীরাচূর্ণ ও চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে শিশুর বমি নিবারিত হয়।
৪. প্রবল জ্বরে যখন অতিশয় পিপাসা পায়, তখন কদম ফলের রস সেবন করলে পিপাসা নিবারিত হয় (R. N. Khory)।
৫. কোনো স্থানে বেদনা, শুক্রশোধন ও বমির জন্য কদম নির্যাস হিতকর। (চরক)
রাসায়নিক গঠন:
(a) Acids viz, quinonic acid, cinchotannic acid. (b) Tannins.[২]
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. এম আতিকুর রহমান এবং এস সি দাস (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১৫-১১৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,১৬২-১৬৩।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Tatters
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।