গিমা শাক পরিত্যক্ত জমিতেও হয় আবার আলু, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি ক্ষেতে জন্মে থাকে। যত্ন ছাড়া এই শাক হৃষ্ট-পুষ্টভাবে বেঁচে থাকে। তবে স্যাঁতস্যাঁতে অর্থাৎ কলতলা, পুকুরপাড়ে, নালার পাশে এটি ভালো ভাবে জন্মে। বোটানিকাল নাম Glinus oppositifolius (L.) Aug.DC. এটি Molluginaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
স্বাদে তিক্ত, কফ পিত্তাধিক্যনাশক ও রুচিকারক, আর রোগারোগ্যের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে পাণ্ডু-কামলা (জণ্ডিস বা তার পূর্বাবস্থা) ইত্যাদি যকৃত-প্লীহাঘটিত যাবতীয় রোগ প্রতিষেধক ও উপশমক।
নব্য ভেষজ বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে:
এই তিক্ত শাকটিতে সাবান জলের মত কতকগুলো ফেনিল পিচ্ছিল পদার্থ আছে, তার নাম স্যাপোনিন, তা থেকে বিশিষ্ট প্রক্রিয়ার দ্বারা কতকগুলো নতুন ধরনের টাইটারপিন জাতীয় দ্রব্য পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে এই শাকটি মানুষের রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে তার বিশিষ্ট উপযোগিতার ক্ষেত্র কি, তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
আয়ুর্বেদের দৃষ্টিতে: যেকোনো তরকারী মাত্রেই শাক পর্যায়ভুক্ত, অবশ্য তার শ্রেণীভেদ করা হয়েছে, যথা-পত্র, পুষ্প, ফল, নাল, কন্দ ও সংস্বেদজ (ছত্রাক শাক) শাক; গিমা শাক ছয়টি শ্রেণীর মধ্যেই সমস্ত তরকারী। এগুলি উত্তরোত্তর গুরুপাক, এর মধ্যে পত্রশাকই সর্বাপেক্ষা লঘু। এছাড়া তেল (তিলের তেল এখানে বক্তব্য) দিয়ে সাঁতলে নিয়ে খাওয়া উচিত; এদ্বারা শাকের রুক্ষতা নষ্ট হয়ে হজমের পক্ষে সহায়ক হয়।
বর্তমান সমীক্ষার উপলব্ধ তথ্য:
১. এই শাক সম্পর্কে একটি বিধিনিষেধ আছে যেসব রমণীর কষ্টরজঃ (ডিসমেনোরিয়া) আছে, আহার্যের সঙ্গে এটি খেলে তারা সে দোষ থেকে রেহাই পাবেন।
২. যাদের স্রাবের আধিক্য আছে, তারা এটা খাবেন না। এই তথ্যটি দিয়েছেন ডাইমক সাহেব। এটার সত্যতা সম্পর্কে আমি নিঃসন্দেহ।
৩. এই শাকটির বিভিন্ন রোগনাশক গুণ থাকলেও আহার্যের সঙ্গে কালে ভদ্রে শাক হিসেবে অথবা ফুলুরির মতো বড়া করে ব্যবহার করে খেলেও কিছু না কিছু উপকার হবেই।
৪. যাদের লিভারের ক্রিয়া মন্দীভূত, সেসব ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন। অল্প পরিমাণ শাক হিসেবে যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে যকৃতের ক্রিয়া স্বাভাবিকতায় ফিরে আসে। কারণ অন্ন-পানের মাধ্যমেই আমাদের অন্তরাগ্নি ইন্ধন সঞ্চয় করে। তাতেই আমাদের প্রাণ ধারণ সুষ্ঠ হয়। এ আবিষ্কার আজকের নয় চরক সংহিতার চিকিৎসা প্রচলনের যুগে। এই অভিমত আজও স্বীকৃত ও অপরিবর্তিত।
লোকায়তিক ব্যবহার:
১. চোখ উঠলে: চোখ দিয়ে পিচুটি পড়লে, গিমে পাতা সেকে নিয়ে তার রস ফোঁটা ফোঁটা করে চোখে দিলে, চোখের করকরানি কমে, পিচুটি পড়া বন্ধ হয়।
২. অম্ল পিত্ত রোগে যাদের বমি হয়, তারা গিমে পাতার রস ১ চামচ এবং তার সঙ্গে আমলকী ভিজানো জল আধকাপ মিশিয়ে সকালে খাবেন, অচিরেই বমি করা কষ্ট দূর হবে।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Saponin. (b) Vitamin via carotene. (c) Fatty acid (d) Glucoside (different types). (e) Alkaloid 0.088%. (f) Highly essential oil.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২১-২৩।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Chinmayee Mishra
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।