রক্তচন্দন কাঠের ১৫টি বহুবিধ ব্যবহার ও ঔষধি গুণাগুণ

ঔষধি ব্যবহার:

১. প্রবল জ্বরের দহে:  অকৃত্রিম রক্তচন্দনের গুড়া বা চেলি ১০ থেকে ১২ গ্রাম এক পোয়া আন্দাজ গরম জলে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে সেই জল অল্প মাত্রায় সমস্ত দিন খেলে দাহ ভাল হয়; গুঁড়ার অভাবে রক্তচন্দন ঘষে গরম জলে গুলে নিলেও হবে।

২. রক্ত প্রবাহের জ্বালায়:  উপরিউক্ত পদ্ধতিতে রক্তচন্দনের জল তৈরী করে ২ থেকে ৩ বার খেলে জ্বালা কমে যায় ও রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

৩. রক্তপিত্তে:  যেখানে ঝলকে ঝলকে রক্ত উঠছে, তার সঙ্গে শরীরের জ্বালাও আছে এ ক্ষেত্রেও ঐ পদ্ধতিতে জল তৈরী করে খেলে গায়ের জ্বালা ও রক্তবমন নিশ্চিত প্রশমিত হবে। বৃদ্ধ বৈদ্যেরা এরই সঙ্গে ৪ থেকে ৫ গ্রাম পাতা সমেত শালপানি (Desmodium gangeticum) গাছ থেতো করে ভিজিয়ে খেতে বলেন।

৪. অনিয়মিত রক্তস্রাবে:  যাঁদের ঋতুধর্ম অনিয়মিত হয় সে ক্ষেত্রে এই রক্তচন্দন উপরিউক্ত মাত্রায় প্রস্তুত করে কিছুদিন খেলে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

৫. নাক কানের রক্তস্রাব:  শরীরের এই দু’টি দ্বার দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে রক্তচন্দন সিন্ধ বা ভিজানো জল খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

৬. চষিপোকা লাগায়:  এটা সাধারণত  হাতের তালুতে হয়। এটাকে ক্ষুদ্রকুষ্ঠের মধ্যে ধরা হয়ে থাকে এ ক্ষেত্রেও রক্তচন্দনের কাঠ সিদ্ধ করে সেই জল খেতে হয় এবং তার সঙ্গে রক্তচন্দন ঘষা হাতের তালুতে লাগাতে হয়।

৭. কর্ণমুলের শোথ (Mumps): এ রোগে আক্রান্ত হলে রক্তচন্দন ঘন করে ঘষে কর্ণমূলে লাগাতে হয়, এর দ্বারা ব্যথা, ফুলা ও জ্বালা তিনটিই কমে যায়।

৮. ঘামাচি: শুকিয়ে চামড়া উঠে যাওয়ার মতো সর্বাঙ্গে এক প্রকার রোগ হয়। বাংলার কোনো কোনো অঞ্চলে একে ‘নুনছাল ওঠা’ রোগ বলে। এ ক্ষেত্রে রক্তচন্দন ঘষে গায়ে লাগালে ওটা সেরে যায়।

৯. দাদে (Ringworm): এ রোগের প্রথমাবস্থায় রক্তচন্দন ঘষে লাগালে প্রায় ক্ষেত্রেই সেরে যায়।

আরো পড়ুন:  নলিকা-এর নানাবিধ ভেষজ প্রয়োগ

১০. বাতরক্তে: যেসব ক্ষেত্রে কোনো আঘাত না লেগে গায়ে লাল দাগ হয়, অনেকের আবার এর সঙ্গে ওইগুলিতে একটু ফুলা ও চুলকানি থাকে, সেখানে এই কাঠ ঘষে লাগালে এটা উপশম হয়।

১১ দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়া: এই কাঠসিদ্ধ জল দিয়ে কুলকুচো করলে বন্ধ হয়। এমনকি ঘুমলে যাঁদের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে, এর দ্বারা তারাও নিস্কৃতি পাবেন।

১২. মাথার যন্ত্রণায়:  এই যন্ত্রণা যদি কোনো বিশিষ্ট কারণে না হয়, তাহলে রক্তচন্দন কাঠ ঘষে কপালে লাগালে কমে যায়।

১৩. স্তনের ফোড়ায় (একে আমরা ঠুনকোও বলি): এ ক্ষেত্রে এই কাঠ ঘষা (ঘন করে) দিনে-রাতে ৩/৪ বার লাগাতে হয়।

১৪. বিষ ফোড়ায়:  ঘষা রক্তচন্দন ও গোলমরিচ ঘষে ফোঁড়ায় লাগালে একদিনেই বিষুনি কেটে যায়।

১৫. দুষিত ঘায়ে (ক্ষতে) :  রক্তচন্দনের ক্বাথ দিয়ে ধুলে ক্ষতের দোষ কেটে যায়।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Glycosides. (b) Colouring matter. (c) marsupium.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,১৭৭-১৭৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!