চামেলি গ্রীষ্মাঞ্চের জনপ্রিয় সুগন্ধি ও ভেষজ গুণ গুল্মজাতীয় ফুল

ভূমিকা: চামেলির বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum grandiflorum   ইংরেজি: Catalonian Jasmine বা Spanish_Jasmine। এটি অলিয়াসিয়া পরিবারের জেসমিন গণের লতানো বা অর্ধলতানো গুল্ম। জেসমিন পরিবারভুক্ত চামেলি বাড়ির স্নিগ্ধতা বাড়ানোর জন্য অনেকে লাগিয়ে থাকে। প্রায় ৩০০ প্রজাতি নিয়ে জেসমিন পরিবার। কোমলতার প্রতীক জেসমিন।

বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum grandiflorum . সমনাম: Jasminum officinale L. var. grandiflorum (L.) Kobuski (1932). ইংরেজি নাম: Spanish_Jasmine, Catalonian Jasmine. স্থানীয় নাম: চামেলী, চামেলিকা, জ্যোতি। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. অবিন্যাসিত: Asterids. বর্গ: Lamiales.  পরিবার: Oleaceae. গণ: Jasminum . প্রজাতি: Jasminum grandiflorum

বর্ণনা:  

চামেলি মসৃণ পত্রঝরা গুল্ম। এটি লম্বায় ২ থেকে ৪ মিটার ও উপশাখাগুলো বৃত্তাকার, কোণীয় বা খাঁজকাটা হয়। পাতার সামনের দিক  ডানাযুক্ত খন্ডিত থেকে  যৌগিক। পাতার আকার ৫ থেকে ১২ সেমি লম্বা, পাতা ৬ থেকে ১১টি হয়ে থাকে, পাতার প্রথমের দিকের দৈর্ঘ্য ২.২-৪.০ ও প্রস্থ ১.২-২.০ সেমি, বাকী অংশ দেখতে বৃহদাকার, রম্বসাকার থেকে ডিম্বাকার বা ডিম্বাকার থেকে ভল্লাকার।

পাতার কিনারা ডিম্বাকার ও শীর্ষ তীক্ষ্ণ হলেও ভোঁতা হয়, কখনও সুক্ষ্ম খর্বাকার বিশিষ্ট, ঝিল্লিময় মসৃণ। পাতার বৃন্ত ১ থেকে ৪ সেমি লম্বা, নিচের পাতা জোড়া প্রশস্ত ও যমক পাদদেশবিশিষ্ট এবং প্রায়ক্ষেত্রেই প্রান্তীয় পত্রক বরাবর পৌছে, সর্ব উপরের পাতা জোড়া, খর্বাকার বৃন্তবিশিষ্ট, মধ্যবর্তী পত্রকগুলো অবৃন্তক বা প্রায় অবৃন্তক।

ফুলের মঞ্জরী কম ঘন কাক্ষিক বা প্রান্তীয় স্তবক, ২ থেকে ৯টি পুষ্পবিশিষ্ট। ফুল সাদা হয়, কখনও গোলাপী আভাবিশিষ্ট হয়ে থাকে, সুগন্ধিময়, মঞ্জরীপত্র রৈখিকাকার থেকে ডিম্বাকার বা চমসাকার থেকে দীর্ঘায়ত, পত্র সদৃশ, ২-৩ মিমি লম্বা, পুষ্পবৃন্ত ০.৮-২.৫ সেমি লম্বা, সরু, মঞ্জরীদন্ড ৪.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা। বৃতি ৫-খন্ডিত, মসৃণ, খন্ডকগুলো তুরপুন আকার, রৈখিকাকার, ৫-১০ মিমি লম্বা।

পাপড়ির সংখ্যা ৫টি ও বড়। দলমন্ডল রেকাবাকৃতি, নল ১.৩-২.৫ সেমি লম্বা। পুংকেশর ২টি, দলনলের অভ্যন্তরে জন্মায়, পুংদন্ডগলো খর্বাকার। গর্ভাশয় দ্বি-প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড সূত্রাকার। ফল বেরী, ডিম্বাকার, চকচকে, মসৃণ।[১]

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

সূর্যালোকযুক্ত স্থান ও দো-আঁশ মাটি চামেলীর জন্য উপযুক্ত। জুলাই মাসে চারা রোপণ করা হয়। কাটিং, শাখা কলম, দাবা কলম বা মাতৃ উদ্ভিদ থেকে শিকড়সহ চারা পৃথক করে নতুন চারা তৈরি করা যায়। বর্ষাকালে সেচের প্রযোজন নেই। শীত ও গ্রীষ্মকালে পানি সেচের প্রয়োজন। মাঝে মাঝে গোঁড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।  জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে এর ফুল ও ফল ধরে।

গাছ ছাটায়ের উপর নির্ভর করে ফুলের উৎপাদন। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাঁটাই করতে হয়। নরম কান্ড ও শাখায় ফুল আসে বলে সার প্রয়োগ করতে হয়। জানুয়ারি মাসে ডাল ছাটায়ের পরে একবার ও জুলাই মাসে আরো একবার সার দিতে হয়। ফুলের বড় কুঁড়ির জন্য নিয়মিত সেচ দিতে হয়। বসন্তকালের শুরু থেকেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় হতে ফুল ফুটতে শুরু করে, বর্ষাকাল পর্যন্ত ফুটে থাকে।[২]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ২৬ (Fedorov, 1969).

বিস্তৃতি:

ফার্সি অ্যারাবিয়ান নাম ইয়াসমিন বা সাদাফুল থেকে জেসমিনের নামকরণ। আদিনিবাস ভারত। এছাড়া সৌদি আরব, বাংলাদেশ, মায়ানমারসহ গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতেও জেসমিন পরিবারের ফুল্গুলোর চাষ হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় চামেলি প্রজাতিটি পাওয়া যায়।[৩]

ভেষজ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

উদ্ভিদটি কৃমিনাশক, মূত্রবর্ধক এবং ঋতুস্রাব নিয়মিত কারক হিসেবে বিবেচিত হয়। শিকড় বিরেচক এবং যৌনশক্তি বর্ধক, পিত্তাধিক্যজনিত অসুস্থতা এবং বাতরোগে উপকারী। পাতা কোষ্ঠবদ্ধতাকারী এবং রেজিন ও স্যালিসাইটিক এসিড সমৃদ্ধ। দাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

চামেলি ফুল থেকে তেল তৈরি করে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতে ব্যবহৃত করা হয়। গন্ধসার তৈরির জন্য চামেলি ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। চামেলি ফুল চাষ খুব লাভজনক।[২][৩][৪]  

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

আমেরিকার অঙ্গরাজ্যসমূহে চর্মরোগের চিকিৎসায় ইহার পুষ্প এবং দন্তশূলে ইহার পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) চামেলি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে চামেলি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]

তথ্যসূত্র:

১.রহমান, এম অলিউর (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪৬-৩৪৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১৩২-১৩৩। আইএসবিএন 984-461-128-7

৩. শেখ সাদী, উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ১৫৪, আইএসবিএন ৯৮৪-৪৮৩-৩১৯-১।

৪. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৭৪, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Adityamadhav83

আরো পড়ুন:  দেশি ভুইচক্র বহুবর্ষজীবী বিরুৎ

Leave a Comment

error: Content is protected !!