সোমেশ্বরী নদী (ইংরেজি: Someshwary River) বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার এবং ভারতের মেঘালয়ের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলা এবং মেঘালয়ের একটি নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ১১৪ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক সোমেশ্বরী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৮৫। বাংলাদেশে সোমেশ্বরী নামের আরো দুটি নদী হচ্ছে সোমেশ্বরী (ধর্মপাশা) ও সোমেশ্বরী (শ্রীবর্দী-ঝিনাইগাতি)।[১]
প্রবাহ: সোমেশ্বরী নদীটি ভারতের মেঘালয়ে উৎপত্তি লাভ করে সীমান্ত পেরিয়ে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাঘোরা ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অতঃপর নদীটি দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নে এসে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিভাজিত দুটি শাখার ডানের শাখাটি সোমেশ্বরী এবং বামের শাখাটি বাঁকহারা নামে পরিচিত। ডানের শাখা পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ভোগাই-কংস নদীতে পতিত হয়েছে।[১] অপর বাঁকহারা শাখাটি কলমাকান্দা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গণেশ্বরী বা রংরা নদীতে পতিত হয়েছে। বাঁকহারার প্রবাহের ডান তীর থেকে প্রবাহিত হয়েছে গুনাই বা গোমাই বা গুমাই নদী। এই শাখাটি কইলাটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।[১][২]
গুনাই এবং সোমেশ্বরী দুটি শাখাতেই সারা বছর পানির প্রবাহ পরিদৃষ্ট হয়। তবে কংসে পতিত শাখাটিই সোমেশ্বরীর মূল প্রবাহ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।
অন্যান্য তথ্য: সোমেশ্বরী নদীতে বর্ষাকালে প্রবল জলস্রোতের কারণে কিছু কিছু স্থানে ভাঙনপ্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। তবে নদীর দুই পাশ উপচে তীরবর্তী অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় না। এ নদীর তলদেশ দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং নদীর উপরের অংশের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বারোমাসি প্রকৃতির এই নদীটিতে জোয়ারভাটার প্রভাব নেই। এই নদীর অববাহিকায় বাংলাদেশে সোমেশ্বরী প্রকল্প রয়েছে। বাংলাদেশে এই নদীতে কোনো ব্যারাজ বা রেগুলেটর নেই এবং উভয় তীরে ব্যাংক রিভেটমেন্ট আছে ২.০৭ কিলোমিটার। এই নদীর তীরে বাংলাদেশে দুর্গাপুর পৌরসভা, শিবগঞ্জ বাজার, কুমুদগঞ্জ বাজার ও সিধলিবাজার অবস্থিত।[১]
সুসং রাজ্যের ইতিহাস খ্যাত ‘সোমেশ্বর পাঠক’ এর নাম ধারণ করে পাহাড়ী জনপদ দুর্গাপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ‘সোমেশ্বরী’। মেঘালয়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা এ নদীটির চরিত্রও বিচিত্র। শুষ্ক মৌসুমে এটি ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়। বর্ষায় হয়ে ওঠে ভয়াল-বিধ্বংসী। সামান্য বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলেই উপচে পড়ে নদীটির দুই কূল। ফলে বন্যা ও ভাঙ্গনের শিকার হয় বিশাল জনবসতি। এদিকে বর্ষায় পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে এ নদীপথ দিয়ে বয়ে আসে বিপুল পরিমাণ সিলিকা বালি। নদী উপকূলে এই বালির স্তর পড়ে প্রতিবছর মরুভূমির মতো বিরাণ প্রান্তরে পরিণত হয় বিস্তীর্ণ কৃষি জমি।[৩]
তথ্যসূত্র:
১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ২২৯-২৩০, ISBN 984-70120-0436-4.
২. হক, ম. ইনামুল, বাংলাদেশের নদনদী, অনুশীলন, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ৫৪।
৩. সঞ্জয় সরকার, ১৭ মার্চ ২০১২, “হারিয়ে যাচ্ছে নেত্রকোনার নদ-নদী” দৈনিক জনকণ্ঠ, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, http://oldsite.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=51&dd=2012-03-17&ni=90116
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।