ছোটপাতা আকন্দ এশিয়া আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভেষজ গুল্ম

গুল্ম

ছোটপাতা আকন্দ

বৈজ্ঞানিক নাম: Calotropis procera (Ait.) R. Br. in Ait. f., Hort. Kew. ed. 2, 2: 78 (1811). সমনাম: Asclepias procera Ait. (1789), Calotropis hamiltonii Wight (1834), Calotropis heterophylla Wall. ex Wight (1834), Calotropis wallichii Wight (1834). বাংলা নাম: ছোটপাতা আকন্দ, ইংরেজি নাম: Rootster Tree,
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Magnoliophyta শ্রেণী: Magnoliopsida বর্গ: Gentianales পরিবার: Apocynaceae উপপরিবার: Asclepiadoideae গণ: Calotropis প্রজাতি: Calotropis procera

ভূমিকা: ছোটপাতা আকন্দ এপোসিনাসি পরিবারের ক্যালোট্রপিস গণের একটি গুল্ম জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। এরা বাংলাদেশ ভারতের একটি জনপ্রিয় ভেষজ উদ্ভিদ। এদের পাতার আকার বড় ও মাঝারি আকন্দের চেয়ে ছোট বিধায় এদেরকে ছোটপাতা আকন্দ বলা হয়।

ছোটপাতা আকন্দ-এর বিবরণ:

ছোটপাতা আকন্দ বৃহৎ প্যাঁচানো গুল্ম। এদের কাণ্ড ঈষৎ কাষ্ঠল ও গোড়ায় বহু শাখা বিন্যাসিত, কচি শাখা ও পত্রের অঙ্কীয় পৃষ্ঠ সাদা পশমতুল্য ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। পাতা প্রায় অবৃন্তক, ডিম্বাকার-আয়তাকার, শীর্ষ সূচ্যগ্র, নিম্নাংশ সংকীর্ণভাবে হৃৎপিন্ডাকার, পত্রফলক ৯.০-১১.৫ x ৫.৫-৭.০ সেমি, পুরু, মাংসল। সাইম পার্শ্বীয়, আম্বেলেট, রোম দ্বারা আবৃত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পর্বে একল, পুষ্পদন্ড ৫.০-৮.৫ সেমি লম্বা, শীর্ষে খবভাবে শাখা বিন্যাসিত, পুষ্পমঞ্জরী ১.৫-২.২ সেমি লম্বা, পুষ্পমঞ্জরী ডিম্বাকার-বল্লমাকার, ৪-৬ মিমি লম্বা।

বৃতি খন্ড ডিম্বাকার-বল্লমাকার, সূক্ষ্মাগ্র, ৫-৬ X ৩-৪ মিমি। দলমণ্ডল উপরের দিকে গোলাপি ও নিচের দিকে সাদা, নল দৈর্ঘ্যে খন্ডের তুলনায় খবর, খন্ড ডিম্বাকার-বল্লমাকার, ৬-৮ X ৪-৫ মিমি, লম্বভাবে অবস্থিত। কিরীটীয় শল্ক পাঁচ, প্রশস্ত, পুংকেশরীয় স্তম্ভের লগ্ন, শীর্ষ কর্ণসদৃশ অভিক্ষেপবিহীন দ্বি-খন্ডিত, রোমশূণ্য, পাতলাভাবে সিলিয়াযুক্ত, মূলীয় স্পার ভিতরের দিকে বক্র, সূক্ষ্মাগ্র।

পরাগধানী পাতলা, সাদা ঝিল্লিময় শীর্ষ বিশিষ্ট। পলিনিয়া আয়তাকার-বল্লমাকার, বিলম্বী, প্রতি পরাগধানী থলিতে একল। কপাস্কেল গাঢ় বাদামি, দণ্ড-আকৃতি, ২কোষী। গর্ভদণ্ড শীর্ষ ৪ মিমি লম্বা, পঞ্চকোণী। ফলিক্যাল দেখা যায় না। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সচরাচর গ্রীষ্মকাল।

আরো পড়ুন:  ছোট ছাতিম দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সুদৃশ্য সুগন্ধি ফুলের বৃক্ষ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২২ (Borgen, 1975)।

চাষাবাদ ও আবাসস্থল:

শুষ্ক আর্দ্র অঞ্চল। বংশ বিস্তার হয় বীজ এবং কাণ্ডের কাটিং দ্বারা। বিস্তৃতি: গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ওয়েষ্ট ইণ্ডিজ এবং মাসকারীন দ্বীপসহ এশিয়ায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বাংলাদেশে ইহা বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

বীজ থেকে প্রাপ্ত ফ্লস ভারতীয় উপমহাদেশে বালিশ তৈরীতে সালমালিয়া কটন-এর প্রতিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলের বাকল পরিবর্তন সাধক পদার্থ, বলকারক, খিচুনীনাশক, কফ নিঃসারক এবং কোষ্ঠবর্ধক, দুগ্ধবৎ নির্যাস কুষ্ঠরোগের উপশমকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মূলের বাকল কঠিন আমাশয়ে অত্যন্ত কার্যকরী।

গাছের জলজ শুরা জাতীয় দ্রবণ এবং চূর্ণ ব্রংকাইটিস এবং আমাশয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অল্পমাত্রায় সেবন করা হলে গাছের সমগ্র অংশেরই পরিবর্তন সাধক গুণাবলী আছে (Chopra et al., 1958) জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলাদেশে, বাঙ্গালী ও আদিবাসি উভয়েই শোথ এবং বাতের ব্যথার জন্য এর তাজা পাতা শুষ্ক উষ্ণ সেঁক হিসেবে প্রয়োগ করে বলে জানা গেছে। (Rahman and Wilcock, 1995)।

গাছের পাতার রস সদ্য হওয়া ক্ষতে জীবাণুনাশক হিসেবেও প্রয়োগ করা হয়। ভারতে এর পাতা হতে “বার” নামক প্রমোত্ততাকারক শুরা তৈরী হয় (Santapau and Irani, 1962)। ছোট পাতা আকন্দ, পাহাড়ি আকন্দ এবং বড় আকন্দের ঔষধি গুণাগুণ প্রায় একই। এদের ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

আকন্দ গাছের ভেষজ গুণাগুণ

ছোটপাতা আকন্দ-এর অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ষষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ছোটপাতা আকন্দ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে প্রজাতিটির সংকটের কারণ ও আবাসস্থল বিনাশ এবং বর্তমান অবস্থায় এটি সম্পর্কে তথ্য সংগৃহীত হয়নি(NE) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে এটিকে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং বর্তমানে প্রস্তাব করা হয়েছে যে ছোটপাতা আকন্দ ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু উভয় পদ্ধতিতেই সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:  সারবেরা হচ্ছে উদ্ভিদের এপোসিনাসি পরিবারের একটি গণ

সাহিত্যে আকন্দ: আকন্দকে নিয়ে জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন

আকন্দ বাসকলতা ঘেরা এক নীল মঠ_ আপনার মনে

ভাঙিতেছ ধীরে ধীরে;_ চারিদেক এইসব আশ্চর্য উচ্ছ্বাস … 

সতর্কীকরণ: আকন্দ গাছের সব অংশই বিষাক্ত। তাই ব্যবহারে সতর্ক হোন। অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্ষতি হবে।

তথ্যসূত্র:

১. এম আতিকুর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ০৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৩৮-২৩৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dr. Raju Kasambe

Leave a Comment

error: Content is protected !!