এমা গোল্ডম্যান (ইংরেজি: Emma Goldman) (জুন ২৭, ১৮৬৯ – মে ১৪, ১৯৪০) একজন নৈরাজ্যবাদী রাশিয়ান লেখক যিনি লেখা, বক্তৃতা এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তার মাধ্যমে পরিচিত ছিলেন। বিংশ শতকের প্রথম ভাগে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে নৈরাজ্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ১৮৮৫ সালে অভিবাসী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। ১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেটের মে দিবসের ঘটনার পর ‘হে মার্কেটের চক্রান্ত মামলা’ ও সেই মামলায় চারজন শ্রমিকের ফাঁসি তাঁর চিন্তাধারার মধ্যে বড় রকমের পরিবর্তন সৃষ্টি করে। এর অল্পদিন পরই তিনি তাঁর স্বল্পস্থায়ী ও অসুখী বিবাহ বিচ্ছেদ করেন।
তিনি ছিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। একজন নারীবাদী হিসেবে তিনি মনে করতেন যে চার্চ অথবা রাষ্ট্রের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই নারী পুরুষ প্রত্যেকের নিজের সঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা থাকা দরকার। তিনি বলেন,
“বিয়ে নারীকে পরগাছায় পরিণত করে, সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল করে। তাকে জীবনসংগ্রামের অনুপযুক্ত করে তোলে, তার সামাজিক সচেতনতাকে ধ্বংস করে, কল্পনা শক্তিকে করে অক্ষম, এবং তারপর আরোপ করে তার সদয় নিরাপত্তা, কার্যত যা হোল একটি প্রতারণামূলক ও মানবিক চরিত্রের বিকৃতি।”
যৌন সম্পর্ক বিষয়ে এমা তাঁর মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন ও তাঁর জন্য নন্দিত ও নিন্দিত হন। তিনি বলেছেন,
“প্রেমের তো কোন নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই; সে নিজেই নিজের নিরাপত্তা।যতদিন পর্যন্ত প্রেম জীবনের জন্ম দেয় কোন কিছুই পরিত্যক্ত হয় না, অভুক্ত থাকে না,ভালবাসায় ক্ষুধার্ত থাকে না।আমি এটাকে সত্য বলে জানি। আমি নারীদের জানি যারা স্বাধীনভাবে যে পুরুষটিকে ভালবাসবে তার দ্বারা মা হতে চায়। স্বাধীন মাতৃত্ব যে যত্ন, নিরাপত্তা, মনোযোগ দিতে সক্ষম, বিবাহ-জন্ম খুব কম শিশুই তা ভোগ করে।”
১৫ জুন ১৯১৭ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দুবছরের জন্য কারাবাস করতে হয়। তিনি ২৭ অক্টোবর ১৯১৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান। তিনি তাঁর মতামত প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং নৈরাজ্যবাদ, নারীবাদ, জন্মনিয়ন্ত্রণ, নাটক ইত্যাদি বিষয়ে অসংখ্য সভায় বক্তৃতা দেন। তিনি নির্বাচনকে বুর্জোয়াদের হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, “যদি ভোট কোনোকিছু পালটাতো, ওরা ভোটকেও অবৈধ করতো”।
এমা গোল্ডম্যান বলশেভিক বিপ্লবে প্রাথমিকভাবে সহায়ক ছিলেন, ক্রোনস্ট্রাট বিদ্রোহের প্রাক্কালে গোল্ডম্যানের বিপরীত মতাদর্শ এবং স্বাধীন কণ্ঠ দমনের কারনে সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিন্দা জানান। “মাই ডিসইলিউসনমেন্ট ইন রাশিয়া” নামে ১৯২৩ সালে একটি বই প্রকাশ করেন।
ইংল্যান্ড, কানাডা এবং ফ্রান্সে বসবাসকালে ‘লিভিং মাই লাভ” নামক একটি আত্মজীবনীমূলক বই রচনা করেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ পরবর্তীকালে তিনি নৈরাজ্যবাদী বিপ্লব সমর্থনে স্পেন ভ্রমণে যান। তিনি ১৪ মে ১৯৪০ সালে ৭০ বছর বয়সে টরেন্টতে মারা যান।
তথ্যসূত্র:
১. তাহা ইয়াসিন ও অনুপ সাদি সম্পাদিত, নারী, কথাপ্রকাশ ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা ৩৪৯।
২. বাংলা উইকিপিডিয়া, নিবন্ধ, এমা গোল্ডম্যান।
রচনাকালঃ এপ্রিল ২৪, ২০১৫
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।