তুর্কি লংকা জবা বাগানের শোভাবর্ধনকারী চাষকৃত গাঢ় লাল ফুল

ভূমিকা: লংকা জবা (বৈজ্ঞানিক নাম: Malvaviscus arboreu, ইংরেজি নাম: Tree Malvaviscus)হচ্ছে ম্যালভাসি পরিবারে ম্যালভ্যাভিসক্যাস গণের সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই গাছ দেখতে সাধারণ জবার মতো কিন্তু ফুলের আকৃতি ভিন্ন। এটি দেখতে বৃক্ষ আকৃতির। বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়ে থাকে। অনেকে এটিকে বাড়ির উঠানের এক কোনায় লাগিয়ে থাকে।[১]

বৈজ্ঞানিক নাম: Malvaviscus arboreus Cav., Diss. 3: 131, t. 48, fig. 1 (1787).  সমনাম: Hibiscus malvaviscus L. (1753). ইংরেজি নাম: Tree Malvaviscus. স্থানীয় নাম: লংকা জবা।

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Malvales  পরিবার: Malvaceae গণ: Malvaviscus প্রজাতি: Malvaviscus arboreus.

বর্ণনা:

লংকা জবা ছোট বৃক্ষ। কান্ড বেলনাকার, কাষ্ঠল। শাখা, পত্রবৃন্ত এবং পুষ্পবৃন্তিকা ঘন মখমলীয় রোমশ অথবা অনেকটা মসৃণ। পাতা ৩-৮ সেমি লম্বা এবং প্রশস্ত, ডিম্বাকার-বর্তুলাকার, নিম্নপ্রান্ত গোলাকৃতি থেকে অগভীরভাবে হৃৎপিণ্ডাকার, শীর্ষ তীক্ষ থেকে দীর্ঘা, কচ থেকে সভঙ্গ, উভয়পৃষ্ঠ ঘন রোমশ, পুরনো পাতাগুলো অনেকটা মসৃণ, উপপত্র ৩-৫ মিমি লম্বা, সূত্রাকার।

পুষ্প কাক্ষিক, একক এবং প্রান্তীয় গুচ্ছে। উপবৃতির খন্ড ৬-৭টি, নিম্নপ্রান্ত কিছুটা যমক, নিচের অর্ধাংশ রৈখিক, উপরের অর্ধাংশ ছড়ানো, ভল্লাকার-চমসাকার এবং সমগ্র দৈর্ঘ্য বরাবর একটি মধ্যশিরা বর্তমান। বৃতি চমসাকার, ৫খন্ডিত, খন্ডগুলোর নিম্নপ্রান্ত যমক। দলমন্ডল নলাকার, কখনও পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হয় না, পাপড়ি ৫টি, নিম্নপ্রান্ত গুলো সংযুক্ত।

পুংকেশরীয় স্তম্ভ বর্ধনশীল, পরিনত অবস্থায়। পাপড়ি ছাড়িয়ে যায়, ৫-দস্তুর এবং পরাগধানীবাহক শীর্ষাভিমুখে বিস্তৃত। গর্ভাশয় ৫-প্রকোষ্ঠীয়, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বকের সংখ্যা ১টি, গর্ভদন্ড ১টি, গর্ভদন্ডের শাখা প্রকোষ্ঠের সংখ্যার দ্বিগুণ, প্রতিটি শাখা ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা।[২]

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

লঙ্কাজবার ফুল লাল, অপেক্ষাকৃত খাটো ও লম্বাটে, পাপড়ি প্রসারিত হয় না পরস্পরের সাথে জড়িয়ে থাকে। দেখতে মরিচ আকৃতি ধারন করে। প্রায় সারাবছরে ফুল ফোটে। একটি বাগানী উদ্ভিদ হিসেবে চাষ করা হয়। শাখা কলমের সাহায্যে নতুন চারা জন্মে।[১]

বিস্তৃতি:

পেরু এবং ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চল থেকে আফ্রিকার গ্রীষ্ম প্রধান দক্ষিণাঞ্চল এবং পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইহার চাষ হয়। বাংলাদেশে কোথাও কোথাও মাঝে মাঝে ইহা লাগানো হয়।।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) লংকা জবা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে লংকা জবা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই ।[২]

তথ্যসূত্র

১. ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ফুলের চাষ প্রথম সংস্করণ ২০০৩ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা ১০৯। আইএসবিএন 984-483-108-3

২.  এম মতিয়ুর রহমান(আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৫৪-৫৫ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  শ্বেত বলা বা শ্বেত বেড়েলা ঔষধি গুণে ভরা বর্ষজীবী গুল্ম

Leave a Comment

error: Content is protected !!