ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Centropus গণে বাংলাদেশে রয়েছে ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে এর ২৬টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি দুটি হচ্ছে ১. বাংলা কুবো এবং ২. বড় কুবো। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে বাংলা কুবো।
বর্ণনা: বাংলা কুবো পর্যায়ক্রমে পালকসজ্জিত লম্বা লেজওয়ালা কাকের মত পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি., ওজন ১২০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি., ঠোঁট ২.৭ সেমি., পা ৩.৭ সেমি., লেজ ১৮ সেমি.)। প্রজনন ঋতুতে পিঠ তামাটে ও দেহতল কালো হয়। অনুজ্জ্বল তামাটে ম্যান্টল ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই চকচকে কালো। প্রাথমিক ও তৃতীয় সারির পালকের আগা বাদামি এবং লেজ কালো। অপ্রজননশীল পাখির কালচে বাদামি মাথা ও ম্যান্টলে পীতাভ শরের ডোরা এবং পাছায় কালচে বাদামি ও লালচে ডোরা রয়েছে। দেহতল পীতাভ এবং গলা ও বুকে ফ্যাকাসে ডোরা আছে। সব ঋতুতেই চোখ গাঢ় লাল, ঠোঁট কালো এবং পা, পায়ের পাতা ও নখর স্লেট-কালো। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানা, মাথার চাঁদি, ম্যান্টল ও পিঠে কালচে বাদামি ডোরা থাকে। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. b. bengalensis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: বাংলা কুবো উঁচু ঘাসের জমি, নল বন, ঘন গুল্ম, ঝোপ ও চা বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে চুপিসারে হেঁটে এবং হঠাৎ শিকারকে ঠোঁট ও পা দিয়ে চেপে ধরে শিকার করে। খাবার তালিকায় ফড়িং ও অন্য বড় পোকা রয়েছে। ওড়ার চেয়ে দৌড়াতে পছন্দ করে। ভোরে ও গোধূলিতে বেশ কর্ম তৎপর থাকে। দুটি অনুক্রমিক স্বরে ডাকে: কুপ-কুপ-কুপ কুরুক-কুবুক-কুরুক। মার্চ-অক্টোবর মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগে ছেলেপাখি লেজ খাড়া করে ও বাঁকায়। ভূমির কাছাকাছি ঘন ঝোঁপে পল্লব, পত্র ফলক ও ঘাসের ডগা দিয়ে পার্শ্ব প্রবেশ পথসহ ডিম্বাকার বাসা বানায় এবং মেয়েপাখি ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, মাপ, ২.৮ × ২.৩ সেমি.।
বিস্তৃতি: বাংলা কুবো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনাও সিলেট বিভাগের ঝোপঝাড়ে ও চা বাগানে পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; পাকিস্তান ওমালদ্বীপ ব্যতিত সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া যায়।
অবস্থা: বাংলা কুবো বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই বাংলা কুবোকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: বাংলা কুবোর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার গজাল-পা (গ্রীক: kentron = গজালের মত নখর, pous = পা ; bengalensis =বাংলার)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Centropus bengalensis“, http://www.iucnredlist.org/details/22684254/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৬।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।