ফরাশি মনোসমীক্ষক জ্যাক লাকা (১৯০১-১৯৮১) ফ্রয়েডীয় তত্ত্বসমূহকে বিকশিত করেন। তার চিন্তাধারা মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। লাকার মতে, ফ্রয়েড আবিষ্কৃত স্বাধীন প্রক্রিয়া হিসেবে অসংজ্ঞান আসলে মানুষের মধ্যকার অশোধনযোগ্য বিভঙ্গ (irremediable split), তার নিজের অধিকেন্দ্রিকতা’ (ex-centricity)। লাকা মনোসমীক্ষণে ভাষার ভূমিকার উপর আলোকপাত করেন। এই উদ্দেশ্য তিনি সসুর এবং ইয়াকবসনের ভাষাতত্ত্বের কতিপয় ধারণাকে নতুন সংজ্ঞা দান করেন। যেমন রূপক এবং লক্ষণার আলঙ্কারিক ও ভাষিক পরিভাষার স্বপ্নকে পড়তে হবে ‘সহজ প্রকাশরূপ প্রাপ্ত’ (deciphered) হিসেবে।
লাকা ১৯০১ সনের ১৩ই এপ্রিল প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি College Stanislas এবং Paris Medical Faculty-তে পড়াশুনা করেন। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল ‘Paranoia’, তার অভিসন্দর্ভে প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতিকে মনোচিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে আক্রমণ করা হয়। রোগীর ব্যক্তিত্ব চিহ্নায়নের ক্ষেত্রে তিনি রোগীর ভাষাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন।
জ্যাক লাকা-র অধিকাংশ রচনা ১৯৩২ সন থেকে Ecrits (১৯৬৬) নামে প্রকাশ হয়। প্যারিস সেমিনারে উপস্থাপিত তার রচনা ‘The Four Fundamental Concepts of Psychoanalysis’ (১৯৭৮) নামে প্রকাশ হয়।। ১৯৫৩ সন থেকে তার চিন্তার একটি প্রধান বিষয় ছিল কাল্পনিক (imaginary) এবং সাংকেতিক (symbolic)-এর মধ্যকার দ্বন্দ্ব। দর্পণ-স্তরে (mirrorphase) কাল্পনিকের প্রারম্ভ। এই সময়ে শিশু কেবল নিজেকে বুঝতে শেখে। সম্পর্কিত আত্মনিয়ন্ত্রক সত্তা হিসেবে এটা তারই প্রতিফলিত বিশ্ব। ব্যক্তি তার বৈশিষ্ট্যের যুগপৎ দর্পণায়ন, প্রতিবিম্বায়নের বা কল্পনার মাধ্যমে তার নিজের জন্য অহম বা সত্তা (ego or identity) সৃষ্টি করতে চায়। তাঁর মতে, “এই পৃথিবীতে সব ধরণের জিনিস আয়নার মতো আচরণ করে।”
সাংকেতিক জগৎ হলো অসংজ্ঞানের এবং ভাষার অবাধ্য জগৎ। মানুষ ভাষা অর্জনের সঙ্গে নিজেকে একটি পূর্ব অবস্থা থেকে বর্তমান সাংকেতিক কাঠামোর মধ্যে প্রবিষ্ট করায় এবং তার অসংজ্ঞান আকাক্ষাকে ঐ কাঠামোর নিয়ন্ত্রক প্রভাবে আত্মসমর্পণ করায়। এই সাংকেতিক পর্যায়ে ব্যক্তি কোনোরূপ পূর্ণতাকে জানতে পারে না। সে নিজেকে দেখে, অন্তহীন গতিময়তায় এবং বিকেন্দ্রিত অবস্থায়; লাকার চিন্তায় এই কাল্পনিক এবং সাংকেতিকের দ্বান্দ্বিকতা তাকে নতুনভাবে মনোসমীক্ষণকে সুত্রায়িত করতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে মনোসমীক্ষণ হয়ে ওঠে-নৈতিক বর্ণনা বা আলোচনা এবং থেরাপিমূলক পদ্ধতি। এর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিকে পুরোপুরি সাংকেতিক পর্যায়ের মধ্যে থাকতে দেয়া, যার ভিত্তি হলো ঐ অপূরণযোগ্য অভাব এবং যার চালক হলো অশমিত বাসনা।
তথ্যসূত্র:
১. আফজালুল বাসার; বিশ শতকের সাহিত্যতত্ত্ব; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১; পৃষ্ঠা ৩০৪-৩০৫।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
অসাধারণ একটি প্রবন্ধ