বিলিম্বি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফলদ বৃক্ষ

ফলদ বৃক্ষ

বিলিম্বি

বৈজ্ঞানিক নাম: Averrhoa bilimbi L., Sp. Pl. 1 428 (1753), সমনাম: জানা নেই। ইংরেজি নাম: Bilimbi, Cucumber Tree. স্থানীয় নাম: বিলিম্বি, বিলুম্বি, বিলুম্বি । জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Oxalidales পরিবার: Oxalidaceae গণ: Averrhoa প্রজাতির নাম: Averrhoa bilimbi

ভূমিকা: বিলিম্বি বা বিলুম্বি (বৈজ্ঞানিক নাম: Averrhoa bilimbi, ইংরেজি নাম: Bilimbi, Cucumber Tree) হচ্ছে অক্সালিডাসি পরিবারের এভারোয়া গণের সপুষ্পক একটি উদ্ভিদ।

বর্ণনা: বিলুম্বি ছোট আকারের বৃক্ষ। ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু। পাতা পক্ষল যৌগিক, সচূড় পক্ষল, একান্তর, পত্রাক্ষ রোমশ, পত্রক ৭ থেকে ১৯ যুগল, প্রায় প্রতিমুখ, ১.২-৮.০ x ২.০ সেমি, দীর্ঘায়ত বা রৈখিকাকার-ভল্লাকার, দীর্ঘাগ্র, অখন্ড, নিম্নপৃষ্ঠ । রোমশ।

পুষ্প ১.৫-২.০ সেমি লম্বা, অসম গর্ভভাবস্থা। বৃত্যংশ ৫টি, ০.৫-০.৬ সেমি লম্বা, পাদদেশে যুক্ত, অসমান, উপবৃত্তাকার থেকে ভল্লাকার বা চমসাকার, তীক্ষায় থেকে স্থুলাগ্র, স্থায়ী, হলুদাভ লাল থেকে বেগুনি, বাইরের পৃষ্ঠ বিক্ষিপ্তভাবে চেপ্টা অণুরোমাবৃত, ভেতরের গাত্র মসৃণ। পাপড়ি ৫টি, ০.৮-১.৫ সেমি লম্বা, পাদদেশে যুক্ত, ভল্লাকার-চমসাকার, ভেতরের গাত্র মসৃণ, বেগুনি থেকে লাল।

পুংকেশর ১০টি, সবগুলো উর্বর, বৃহদাকৃতির ৫টি ১.৩ সেমি পর্যন্ত লম্বা, খর্বাকারগুলো ০.৭ সেমি (প্রায়) লম্বা, পরাগধানী দীর্ঘায়ত, পৃষ্ঠলগ্ন। গর্ভপত্র ৫টি, যুক্ত, গর্ভাশয় ৫-প্রকোষ্ঠীয়, ০.৩-০.৪ সেমি লম্বা, ঘন কুর্চ আবৃত, গর্ভদন্ড সরু, ০.২ সেমি লম্বা এবং মুণ্ডাকার থেকে হুড আকৃতির ৫টি গর্ভমুণ্ডবিশিষ্ট।

ফল ৭.০-৭.৭ X ৩.০৩.২ সেমি, উভয়প্রান্তই মোটামুটি সমভাবে সরু, স্থুলাগ্র, অস্পষ্টভাবে ৫-কোণীয়, অণুরোমাবৃত থেকে মসৃণ, পরিণত অবস্থায় হালকা হলুদ। বীজ সংখ্যায় ১২টি পর্যন্ত হয়, ০.৫-০.৭ x ০.৪-০.৫ সেমি, বীজোপাঙ্গবিহীন।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২, ২৪ (Fedorov, 1969).

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সমভূমি থেকে ৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সুনিষ্কাশিত মৃত্তিকা।  বীজ এবং জোড় কলমের সাহায্যে। ফুল ও ফল ধারণ অক্টোবর-ফেব্রুয়ারী মাস।

বিস্তৃতি: প্রজাতিটির উৎপত্তি পূর্ব এশিয়ান অঞ্চল। বর্তমানে ইহা সমগ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। বাংলাদেশে ইহা দেশের সর্বত্র পাওয়া যায় কিন্তু সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।

আরো পড়ুন:  ভোলাটুকি বাংলাদেশে জন্মানো ঔষধি ফল গাছ

বিলিম্বির অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

বিলিম্বি ফল আচার, তরকারী, চাটনি তৈরিতে এবং শরবত সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ইহার ফল ধাতব তৈজসপত্র পরিস্কার করতে এবং দাগ দূর করতেও ব্যবহৃত হয়। সাইট্রিক এসিড থাকার থাকার কারণে ইহার ফল বেশ টক।

খাদ্য উপাদান: ফুল ভিটামিনসি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ সমৃদ্ধ। বর্ণিত আছে ইহাতে এসিটিক এসিড, হেক্সাডেকানয়েড এসিড প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত ৫৩ প্রকার উদ্বায়ী যৌগ আছে (Ghani, 2003).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: তরকারীকে টক করার জন্য ইহার ফল ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের খণ্ডে ৯ম (আগস্ট ২০১০)   বিলুম্বি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বিলুম্বি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]

তথ্যসূত্র:

১.  এম. এ হাসান  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৬৯-৩৭০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro

Leave a Comment

error: Content is protected !!