বাংলাভাষী অঞ্চলে সারা পৃথিবীর ন্যায় লোকসংগীত খুব জনপ্রিয়। দশটি জনপ্রিয় বাংলা লোকসংগীত হচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ দশটি বাংলা লোকগান। আমরা এখানে দশটি এমন ধরনের বাংলা লোকসংগীত বাছাই করেছি যেগুলো গত কয়েক শতাব্দী জুড়ে বাঙালিরা শুনে চলেছেন।
পান দিমু সুপারি দিমু চুন দেখিয়া খাইও অঞ্চল কাইটা রুমাল দিমু
পান দিমু সুপারি দিমু চুন দেখিয়া খাইও
অঞ্চল কাইটা রুমাল দিমু বাতাসে উড়াইও বন্ধু রে।।
ওরে দুক্স দিয়া সুখ দিমু পানিতে ভিজাইও
সুরুজ রাঙা সিন্দুর আইনা সিঁথিতে পরাইও বন্ধুরে।।
নিশাত কইরা আইনা মানিক দিও উপহার
অষ্ট অঙ্গ সাজাইতে অষ্ট অলংকার।। ও বন্ধুরে,
বিদেশেতে যাইয়ারে বন্ধু আমাক না ভুলিও
পরের নারীক দেইখা বন্ধু মুখ তুলিয়া না চাইও।। ও বন্ধুরে,
বন্ধু তুমি আমার মাথার বেণী তুমি গলার হার
তিলেক মাত্র না দেখিলে দুনিয়া আন্ধার।।
- পান দিমু সুপারি দিমু চুন দেখিয়া খাইও অঞ্চল কাইটা রুমাল দিমু
- প্রেম জানেনা প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁদ ও মোর জুড়িয়া থাকে মন
- গৌরাঙ্গ বলিতে হবে পুলক শরীর। হরি হরি বলিতে নয়নে ব'বে নীর।।
- নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইলো বাইগুন, সেই বাইগুন
- তুমি ডাক দিলে অবলার পানে চাইওরে, তুমি ধীরে ধীরে যাইও রে,
- বন্ধু নিরধনিয়ার ধন, কেমনে পাইমুরে কালা তোর দরিশন
- পদ্মারে আমার সাধের পদ্মা, পদ্মা কও কও আমারে
- মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
- আমের পাতা চাকুম রে চুকুম বাঁশের পাতা — উত্তরবঙ্গের মেয়েলী গীত
- বহুল ঢঙ্গে দুলালির ছুয়াল হামরা দিনাজপুরিয়ারে
প্রেম জানেনা প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁদ ও মোর জুড়িয়া থাকে মন
প্রেম জানেনা প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁদ
ও মোর জুড়িয়া থাকে মন।।
কত দিনে বন্ধুর সনে হবে দরিশন বন্ধু হে।।
বন্ধু রে
নদীর ওপার তোমার বাড়ি
যাওয়া আসা অনেক দেরী
যাব কি রব কি সদাই করি মানা
হাঁটিয়া যাইতে নদীর পানি
খ্যাক্লুম কি খুক্লুম কি
খাল্লাও খাল্লাও করে রে ও বন্ধুরে।।
বন্ধু রে একলা ঘরে শুইয়া থাকুম
পালঙ্ক উপরে মন মোর
আবিল বিলবিল করে।
পরত ফিরতে মরার পালং
কাররত কি কুররত কি
কারাল কারাল করে রে
হায় হায় নিদয়ার বন্ধুরে।।
ও বন্ধুরে
তোমার আশায় বসিয়া থাকিম
বটবৃক্ষের তলে, মন মোর
উড়াম পাইরাম করে
ভাদর মাইসা দেওয়া ঝড়ি
টাপ্পাস কি টুপ্পুস কি
ঝমঝমাইয়া পড়ে রে
হায় হায় প্রাণের বন্ধু রে।।
গৌরাঙ্গ বলিতে হবে পুলক শরীর। হরি হরি বলিতে নয়নে ব’বে নীর।।
গৌরাঙ্গ বলিতে হবে পুলক শরীর।
হরি হরি বলিতে নয়নে ব’বে নীর।।
কবে নয়ন জলে বুক ভাসিবে
হকৃষ্ণ হকৃষ্ণ বলে।
আর কবে নিতাই চাঁদের করুণা হইবে।
সংসার বাসনা আমার কবে তুচ্ছ হবে।।
বিষয় ছাড়িয়া কবে শুদ্ধ হবে মন।
কবে হাম হেরইব মধুর বৃন্দাবন।।
কবে বা হবে এ জীবনে আমার কবে বৃন্দাবনে প্রবেশিব
হকৃষ্ণ হকৃষ্ণ বলে।।
রূপ রঘুনাথ পদে হইবে আকুতি।
কবে হাম বুঝব সে যুগল পীরিতি।।
রূপ রঘুনাথ পদে রহু মোরে আশ।
প্রার্থনা করয়ে সদা নরোত্তম দাস।।
আমি আর কিছু চাই না,
ওহে নিতাই গৌরহরি আর কিছু চাই না
এজন্মে নয় জন্মে জন্মে আর কিছু চাই না।
সে অবধি কারো গৃহে আর কিছু চাই না।।
এজন্মে নয় জন্মে জন্মে আর কিছু চাই না।।
নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইলো বাইগুন, সেই বাইগুন
ময়মনসিংহ গীতিকা — মহুয়া পালা।।
নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন।
সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।।
কাইন্দ না কাইন্দ না কইন্যা না কান্দিয়ো আর।
সেই বাইঙ্গন বেইচ্যা দিয়াম তোমার গলায় হার গো তোমার গলার হার।।
নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা লাগাইলো কচু।
সেই কচু বেচ্যা দিয়াম তোমার হাতের বাজু।।
নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা লাগাইলো কলা।
সেই কলা বেইচ্যা দিয়াম তোমার গলার মালা গো তোমার গলার মালা।।
নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা বানলো চৌকারী।
চৌদিকে মালঞ্চের বেড়া আয়না সারি সারি গো আয়না সারি সারি ।।
হাস মারলাম কইতর মারলাম মাইছ্যা মারলাম টিয়া।
বালা কইরা রাইন্দো বেগুন কালাজিরা দিয়া গো কালাজিরা দিয়া।।
নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন।
সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।।
কাইন্দ না কাইন্দ না কইন্যা না কান্দিয়ো আর।
সেই বাইঙ্গন বেইচ্যা দিয়াম তোমার গলায় হার গো তোমার গলার হার।।
তুমি ডাক দিলে অবলার পানে চাইওরে, তুমি ধীরে ধীরে যাইও রে,
গীতিকার ও সুরকার – সাধক বাউল চান মিয়া
শিল্পী: মো. আমজাদ হোসেন
তুমি ডাক দিলে অবলার পানে চাই ও রে, ও রাধার বন্ধুয়া রে
তুমি ধীরে যাইও ফিইরা ফিইরা চাইওরে।। (২)
আমি যেদিন বিয়ারে হবে বন্ধু যাব শ্বশুর বাড়ি
বাজার থাইকা কিনা আইনো সাদা মার্কিন শাড়ি রে (২)
সেদিন নিজ হাতে নব সিকর করবো রে, ও নিঠুর বন্ধুয়া রে
তুমি ধীরে যাইও ফিইরা ফিইরা চাইওরে (২)
চান্দে আইসে চান্দেরে যায় চান্দেরও বাহার
তোমারে বানাইয়া রাখবো আমার গলার হার রে (২)
সেদিন আত্মাতে আত্মা মিশাইয়া রাখবো রে, ও নিঠুর বন্ধুয়া রে
তুমি ধীরে যাইও ফিইরা ফিইরা চাইওরে (২)
আমার যেদিন বিয়ার হবে বন্ধু যাবো আপন আবড়ি
চার বেহারার পাল্কিত চড়ি যাবো শেষের বাড়ি রে
সেদিন চান মিয়ারে সঙ্গে কইরা নিও রে, ও নিঠুর বন্ধুয়া রে
তুমি ধীরে যাইও ফিইরা ফিইরা চাইওরে (২)
বাপ কান্দিবে আশেপাশে মাও কান্দে লাশেরও পাশে
ঘরেরও রমণী কান্দবে দুদিন ভরা রে ও রাধার বন্ধুয়া রে
তুমি ধীরে যাইও ফিইরা ফিইরা চাইওরে।। (২)
বন্ধু নিরধনিয়ার ধন, কেমনে পাইমুরে কালা তোর দরিশন
গীতিকার ও সুরকার – আরকুম শাহ
শিল্পী: হেমাঙ্গ বিশ্বাস
চাইর চিজে পিঞ্জিরা বানাই,
মোরে কইলায় বন্ধু রে বন্ধু নিরধনিয়ার ধন
কেমনে পাইমু রে কালা তোর দরিশন।।
সমদ্রে জল উঠে বাতাসের জোরে
আবর হইয়া ঘুরে পবনের ভরে
জমিনে পড়িয়া শেষে সমুদ্রেতে যায়
জাতেতে মিশিয়া জাত তরঙ্গ খেলায়।
তুমি আমি আমি তুমি জানিয়াছি মনে
বিচিতে জন্মিয়া গাছ বিচি ধরে কেনে
এক হইতে দুই হইল প্রেমেরই কারণ
সে অবধি আশিকের দিল করে উচাটন।।
পরিন্দা জানোয়ার যদি কোন এক কলে
জাতি ছাড়া বন্ধ হয় শিকারিয়ার জালে
কিরুপে জিন্দেগি কাটে বন্ধ খানায়
তার মাশুক হইয়া কর আশিকের বিচার।
আশক মাশুক যদি থাকে দুই স্থানে
টেলী দিয়া খুসীর মঙ্গল যদি জানে
বিনা দরশনে কিলা বাঁচিব জীবন
শুন প্রভু প্রাণ প্রিয়া মোর নিবেদন।।
পাগল আরকুমে কয় মাশুক বানিয়া
দুহাং পাতাইয়া থইছে উলুরে গাথিয়া
আহার করিতে যদি না যাইত মন
না লাগিত প্রেম লাঠা না হইত মরণ।।
পদ্মারে আমার সাধের পদ্মা, পদ্মা কও কও আমারে
গীতিকার ও সুরকার ও শিল্পী: হেমাঙ্গ বিশ্বাস
“পদ্মা কও, কও আমারে
(আইজ) মন-বাঁশুরী কাইন্দা মরে তোমার বালুচরে।।
পদ্মারে, তুমি আমার ভালোবাসা
তুমি আমার স্বপ্ন আশা
কে বলেরে কীর্ত্তিনাশা কূলভাঙ্গা তোরে
ও যে-জন ভাঙলো কূল ভাঙলো বাসারে
সর্বনাশা চিন্ নিলা তারে।।
পদ্মারে, পরান মাঝি হাইল ধরিত
হুসেন মাঝি গুণ টানিত
ভাটিয়ালী সুর নাচিত ঢেউ-এর নূপুরে
কত চান্দের বাতি জ্বলতো জলেরে
রাইতের নিঝুম আন্ধারে।।
পদ্মারে, কোন বিভেদের বালুচরে
তোর ময়ূরপঙ্খী ভাঙলো ওরে
কোন কালসাপে দংশিলা তোর
সুজন নাইয়ারে
আজ ভেলায় ভাসে বেহুলা বাংলারে
বধূর বিষের জ্বালা অন্তরে।।”
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
হন দোষখান পায় ভালবাসার দাম ন দিলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
হন দোষখান পায় ভালবাসার দাম ন দিলা
আশাই আঁচিল তোয়ারে লয় বাইন্দুম একখান সুখেরি ঘড়
আশাই আঁচিল তোয়ারে লয় বাইন্দুম একখান সুখেরি ঘড়
সুখের বদলে দুক্কু দিলা
সুখের বদলে দুক্কু দিলা
হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
হন দোষখান পায় ভালবাসার দাম ন দিলা
প্রেম নদি….তে অইনুর টানত আরে কেন ফেলাই গেলা
প্রেম নদি…..তে অইনুর টানত আরে কেন ফেলাই গেলা
এনগরি কেন ভুল বোঝিলা
এনগরি কেন ভুল বোঝিলা
হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
হন দোষখান পায় ভালবাসার দাম ন দিলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
হন দোষখান পায় ভালবাসার দাম ন দিলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা
হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
হন দোষখান পায় ভালবাসার দাম ন দিলা
হন হারনে ভালবাসার দাম ন দিলা
হন দোষখান পায় ভালবাসার দাম ন দিলা
আমের পাতা চাকুম রে চুকুম বাঁশের পাতা — উত্তরবঙ্গের মেয়েলী গীত
আমের পাতা চাকুম রে চুকুম
বাঁশের পাতা সরু,
বেছে বেছে করলাম রে পিরিত
হ্যাংলা মাজা সরু।।
ছোট্ট খাট্ট পেকুড়ের গাছটি
পাতা ঝিলমিল করে
বন্ধুর গলাতে সোনার মালা
কন্যার জালে মরে।।
বহুল ঢঙ্গে দুলালির ছুয়াল হামরা দিনাজপুরিয়ারে
বহুল ঢঙ্গে দুলালির ছুয়াল হামরা
দিনাজপুরিয়ারে
নাচিবা পারি গাহিবা পারি
কোনো কাম হামার অজানা নাইরে।।
হামার দেশত আইসেন তোমরা
দাওয়াত থাকিল রে
হামার দেশত আছে নামকরা চিড়া চাওল
কাটারিভোগ নাম তার রে।।
হামার দেশত আছে রাম রাজার দীঘি
রাম সাগর নাম তার রে।।
প্রতি বছর আইসে কত জেলার মানুষ
বনভোজ খাবার তানে রে।।
হামার দেশত আছে কান্তনগর কান্তজিউ
দেখিবার কত ভাল রে
তার গোড়োত বইসে রঙবেরঙের মেলা
নাচগুলা দেখিবার কত ভাল রে।।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।